এমরান হোসাইন-
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস রাজ্যের উচিটা শহরে গত শনিবার রাতে বাংলাদেশি তরুণ মেধাবী ছাত্র এম হাসান রহমান বাঁধনকে কে বা কারা গুলি করে হত্যা করেছে। উচিটা পুলিশ গতকাল সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে এ খবর নিশ্চিত করেছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, উচিটা শহরের সেন্ট্রাল রক রোডের পাশে ৭৮০০ পেজন্ট লাইভ ওক স্ট্রিট অ্যাপার্টমেন্টের সামনে একটি গাড়িতে ২৬ বছরের এক যুবকের  লাশ পাওয়া গেছে । পুলিশ জানায়, তিনি পিৎজা হাট ডেলিভারির কাজ করতেন। এদিন রাতে পিৎজা ডেলিভারি দিয়ে সঠিক সময়ে পিৎজা সেন্টারে না পৌঁছায় পিৎজা কর্তৃপক্ষ পুলিশকে অবহিত করে। গত রবিবার বেলা ১১টায় পুলিশ ৭৮০০ পেজন্ট লাইভ ওক স্ট্রিট অ্যাপার্টমেন্টের সামনে তাঁর লাশ গাড়ির ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা তাঁকে গুলি করার পর গাড়ির ট্যাংকে ঢুকিয়ে নিয়ে ওই এলাকায় ফেলে আসে। পুলিশ নিশ্চিত করেছে, গাড়িটি বাঁধনের। এ ব্যাপারে পুলিশ জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছে।

গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে আইনি প্রক্রিয়ার পর বাঁধনের লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর সহপাঠীরা। জানা যায়, তাঁর গ্রামের বাড়ি গাজীপুর চৌরাস্তা টেরিপাড়ায়। তিনি পরিবারের একমাত্র ছেলে। এদিকে বাঁধনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উচিটা শহরে বাঙালি কমিউনিটির মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকে এ খবর জানতে ভিড় জমায় ডাউন-টাউন কোট প্রাঙ্গণে।  উচ্চশিক্ষার আশায় দীর্ঘ সাত বছর আগে বাঁধন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। বাটলার কমিউনিটি কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অ্যাসোসিয়েট শেষ করে আগামী সেশনে ক্যানসাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষ করেছিলেন।  আগামী ডিসেম্বরে তাঁর কেইউতে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। মা-বাবার একমাত্র সন্তান বাঁধন।  স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পড়ালেখা করতে এসে এভাবে লাশ হয়ে ফিরে যাওয়াকে কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না তাঁর সতীর্থরা। বাঁধনের ছোটবেলার বন্ধু নাঈম জানান, বাঁধন দুই মাস ধরে পিৎজা হাট ডেলিভারির কাজ করেছিলেন। প্রতিদিন রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে ঘরে ফিরে আসতেন। কিন্তু শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত বাঁধন ঘরে না ফেরাতে তিনি বাঁধনকে খুঁজতে রাত তিনটার দিকে বিভিন্ন হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে খোঁজ নেন। পরে পুলিশ নিশ্চিত করে, তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাঁধন বন্ধুদের কথা দিয়েছিলেন, থ্যাংকস গিভিংডেতে নিজে রান্না করে খাওয়াবেন । বড় ধরনের মুরগিও কিনে এনে সব আয়োজন ঠিক করে রেখেছিলেন। কিন্তু নিয়তি সবার কাছ থেকে বাঁধনকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। উচিটা শহরে এখন যেন বোবা কান্না! বাঙালি কমিউনিটিতে বাঁধন ছিলেন অনন্য এক প্রতিভা। যেকোনো অনুষ্ঠান বাঁধন জমিয়ে তুলতেন। যেন সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন না–ফেরার দেশে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn