বরগুনার ঘটবাড়িয়া আদর্শ কলেজের প্রভাষক আলমগীর হোসেন পলাশ। বিয়ে করেছেন ১৫ বছর আগে। তবু স্ত্রীর কিশোরী মামাতো বোনের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেই কিশোরী মামাতো শ্যালিকা, কলেজছাত্রী মালা আক্তারকে (১৭) গলা কেটে হত্যা করেছেন তিনি। এরপর লাশ গুম করতে মৃতদেহ সাত টুকরো করে দুটি ড্রামে ভরে ফেলেন। এর আগে প্রতিটি টুকরো পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করেন। এসব কথা স্বীকার করে বুধবার দুপুরে বরগুনার আমতলীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মালার দুলাভাই আলমগীর হোসেন পলাশ। মামলার অপর আসামি পলাশের ভাগ্নিজামাই অ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। পরে উভয়কেই জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক মো. হুমায়ূন কবীর।

আদালতে স্বীকারোক্তি সম্পর্কে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক জানান, পলাশকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। একই সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডে আইনজীবী মাইনুল আহসান বিপ্লব তাঁকে সহায়তা করেছেন বলেন পুলিশকে জানান তিনি। এরপর বিপ্লবকেও গ্রেপ্তার করা হয়।  পুলিশ সুপার আরো বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে পলাশকে আরো যাঁরা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের নামও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন পলাশ। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ। বিজয় বসাক জানান, মালার মৃতদেহ থেকে যাতে দ্রুত দুর্গন্ধ ছড়াতে না পারে, সে জন্য হত্যাকাণ্ডের পর মৃতদেহের টুকরোগুলো ড্রামে ভরার আগে পানি দিয়ে মৃতদেহের প্রতিটি টুকরো ভালোভাবে ধুয়ে রক্ত দূর করে খুনিরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন পলাশের সঙ্গে প্রায় ১৫ বছর আগে মালার ফুফাতো বোন মেরির বিয়ে হয়। পলাশ বর্তমানে বরগুনার ঘটবাড়িয়া আদর্শ কলেজের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। মালা তার ফুফাতো বোন মেরির বাসায় মাঝেমধ্যে বেড়াতে যেত। তখন দুলাভাই পলাশের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাদের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। পরে গত ২২ অক্টোবর পলাশ মালাকে নিয়ে তাঁর ভাগ্নিজামাই আমতলীর হাসপাতাল সড়কের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবের বাসায় যান। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ওই বাসায় তিনি গলা কেটে মালাকে হত্যা করেন। এরপর মৃতদেহ সাত টুকরো করে দুটি ড্রামে ভরে লুকানোর চেষ্টা করেন পলাশ ও তাঁর সহযোগীরা। পরে খবর পেয়ে বিকেল ৪টার দিকে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে পলাশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় দুটি ড্রাম থেকে মালার সাত টুকরো মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পলাশের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাঁকে সহযোগিতা করার অভিযোগে ওই বাসার মালিক অ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবকেও গ্রেপ্তার পরে পুলিশ। এ ঘটনায় আমতলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নুরুল ইসলাম বাদল বাদী হয়ে মো. আলমগীর হোসেন পলাশ ও অ্যাডভোকেট মাইনুল আহসান বিপ্লবের বিরুদ্ধে হত্যা ও মৃতদেহ লুকানোর অভিযোগে একটি মামলা করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn