যোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত: শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, সম্পদ সীমিত হওয়া সত্ত্বেও যোগ্য বিবেচিত চারটি ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে বিবেচিত সকল প্রতিষ্ঠানকে, আমি আবারও বলছি- যোগ্য বিবেচিত সকল প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার।সোমবার জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় দাঁড়িয়ে এসব কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, আমাদের সকলের কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এমপিও। এমপিও’র জন্য চাকরির ক্রাইটেরিয়া ধরে গত বছর আমাদের যে নীতিমালা হয়েছে এবং নীতিমালার আলোকে সবার কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন আহ্বান করা হয়েছিল। ক্রাইটেরিয়াগুলো হলো- স্বীকৃতি থাকা, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। তিনি বলেন, একজন ভালো শিক্ষক কি না তার পরিচয় কি? বলা হয় বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলে পরিচয়। শিক্ষক খুব যোগ্য তাহলে নিশ্চয় তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী থাকবে, পরীক্ষার্থী থাকবে এবং তাদের ফলাফল ভালো হবে। আর শিক্ষক যদি অযোগ্য হয়, তাহলে বিপরীত অবস্থা হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা আজকাল শুনতে পাই কোনো কোনো শিক্ষক, পত্রিকায় রিপোর্ট হয়, টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রকাশনার বই বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করা হয়। না পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে কোচিংয়ে পড়তে এমন অনেক কারণেই দেখা যায় কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হয়। যে শিক্ষকরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকবে, নিশ্চই তাদেরকে আমরা রিউয়ার্ড করতে চাই না। কাউকে বঞ্চিত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্য শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে, শিক্ষার মান উন্নয়ন করা।
দীপু মনি বলেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেরাই অনলাইনে তথ্য উপাত্ত ইনপুট দিয়েছে। সেই ভিত্তিতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এই যোগ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকা হয়েছে। এখানে কারো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। যেগুলো যোগ্য বিবেচিত হতে পারেনি, সেগুলো নিয়ে আসুন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি কিভাবে সেগুলো উন্নত এবং যোগ্য করে তোলা যায়। কেউ কেউ বলতে পারে এমপিও দিলে তখন যোগ্য হবে। তাহলে যারা এমপিও ছাড়াই নিজেদের যোগ্য করেছেন তাদের প্রতিও অবিচার হয়। যোগ্য আর অযোগ্য সবাইকে সমান দেবেন, তাহলে যোগ্যতার কদর কোথায় থাকে? এমপিদের প্রতি স্পিকারের মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেসকল প্রতিষ্ঠান যোগ্য বিবেচিত হয়নি। সেগুলো দিকে আমরা সবাই যদি নজর দেই, তাহলে সেগুলো যোগ্য হয়ে উঠবে এবং আমাদের দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই যোগ্য হয়ে উঠবে। শিক্ষায় বাজেটের চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ২০০৬-০৭ সালে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। আর ২০০১৯-২০ এ হয়েছে ৬১ হাজার ১১৮ কোটি। যা সে সময়ের দশগুণেরও বেশি। বিজ্ঞান এবং আইসিটি শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৮৩ কোটি টাকা, বিএনপি-জামায়াতের শেষ বাজেটে। আজ তা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। যা ১০২ গুণেরও বেশি। আজকে আমরা যে ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কথা বলছি, সে জন্যই বিজ্ঞান এবং আইসিটি শিক্ষায় ব্যাপক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ’৭০ এর নির্বাচনি ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-শিক্ষায় বরাদ্দ হওয়া উচিত জিডিপির অন্তত ৪ শতাংশ। ইউনেস্কোর মতে এ বরাদ্দ জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ হওয়া উচিত। আমরা এখনো ২ শতাংশের খুব বেশি উপরে উঠতে পারিনি। আমাদের দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের যে বিরাট চাহিদা রয়েছে, তাও আমাদের পূরণ করতে হবে, যোগ করেন মন্ত্রী। এসময় বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত যদি অবকাঠামো উন্নয়নের সঠিক পরিকল্পনা করতো, যদি যথাযথ বরাদ্দ দিত, যদি দুর্নীতি না করতো, তবে আমরা আজ অবকাঠামোগত দিক থেকে আরো অনেক এগিয়ে থাকতে পারতাম। তাহলে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যে আরো বরাদ্দ আজকেই আমরা দিতে পারতাম। আমাদের অপেক্ষা করতে হতো না।