রাখাইনে জাতিসংঘের প্রবেশে মিয়ানমারের ‘না’
রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের পরিস্থিতি জানতে জাতিসংঘের নির্ধারিত একটি সফর বাতিল করে দিয়েছে মিয়ানমার। গত ২৫ আগস্টের পর থেকে শুরু হওয়া দমন-পীড়নের মধ্যে এটাই মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের প্রথম সফরের কথা ছিল।ইয়াঙ্গুনে জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের সফর বাতিলের কোনো কারণ জানায়নি মিয়ানমার।জাতিসংঘ বলছে, সেনাবাহিনীর তাণ্ডবে এক মাসে চার লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে রাখাইন ছেড়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা চার লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছেছে।পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং ঘরবাড়িতে আগুন দেয়ার কথা জানায়। স্যাটেলাইটসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু সাংবাদিকের তোলা ছবিতে রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুড়ে ছাই হতে দেখা যাচ্ছে।তবে সেনাবাহিনীর দাবি, তারা কেবল সন্ত্রাসীদের টার্গেট করছে। সেনাবাহিনী গত সপ্তাহে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৪০ হিন্দুকে হত্যা করেছে রোহিঙ্গারা।
তবে রাখাইনে ঠিক কী ঘটছে, এখন পর্যন্ত তার সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন। কারণ এখন পর্যন্ত সেখানে দেশের বাইরের কাউকে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি মিয়ানমার। তারা শর্ত সাপেক্ষে নিজেদের পছন্দমতো কিছু স্থানে নিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কয়েকজন সাংবাদিককে কথা বলতে দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, রাখাইন রাজ্যে বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের জন্য খাবার, কাপড়সহ ওষুধপত্র প্রয়োজন।রোহিঙ্গারা বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমারে বসবাস করেও সেখানকার নাগরিকত্ব পায়নি। মিয়ানমার সরকার তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকারই করে না। তাদের দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছে।
বৌদ্ধরা সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক। অতীতেও বহুবার তারা রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা, নির্যাতন করে হত্যা করেছে। এর আগেও বিভিন্ন সময় রাখাইন ছাড়ার ঢল শুরু হয়।জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানে দুজারিক গত বুধবার জানান, জাতিসংঘের সব সংস্থার প্রধানরা রাখাইন রাজ্য ঘুরে দেখবেন। বেছে বেছে তারা সহিংসতাপূর্ণ এলাকাগুলোতে যাবেন।এরপর বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। তবে ইতোমধ্যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের সব সংস্থার প্রধানদের রাখাইনে যাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে। রোহিঙ্গা সঙ্কটের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চি। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাখাইনে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।