‘এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আপনি যদি রাজনীতিতে না জড়াতেন, তাহলে যেসব মামলা লড়েছেন তাতেই এতদিনে আপনি আন্তর্জাতিক আইনজীবী (ইন্টারন্যাশনাল ল’ইয়ার) হয়ে যেতেন।’ রোববার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এসব কথা বলেন। এদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে মওদুদ আহমদের গুলশানের বাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত মামলার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতির মন্তব্য শুনে তাকে ধন্যবাদ জানান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। পরে তিনি পুনরায় নিজের পক্ষে শুনানি শুরু করেন। আদালতে মওদুদ আহমদের পক্ষে আরো শুনানি করেন, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। তাদের সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, আর দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান উপস্থিত আছেন।
এর আগে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাড়িটি নিয়ে দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন বিচারিক আদালত। এর বিরুদ্ধে তাদের আবেদন গত বছরের ২৩ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন মওদুদ আহমদ। এ আবেদনের শুনানি শেষে গত বছরের ২ আগস্ট আপিল বিভাগ মামলাটি বাতিল করে রায় দেন। এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

রায়ে বলা হয়, ‘এখানে দেখা যায়, মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদের (একটি মামলার বাদী) বক্তব্য অনুযায়ী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে প্লাজ পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবসা করার সময় মো. এহসান নামের এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ১৯৬৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে গুলশানে এক বিঘা ১৩ কাঠার একটি প্লট ইনজে প্লাজের নামে বরাদ্দ নিয়ে বাড়ি বানান। ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট বাড়িটি মওদুদ আহমদের নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেন ইনজে মারিয়া। এরই মধ্যে এই বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এ কারণে তিনজন অস্ট্রীয় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ সফর করে ওই সম্পত্তির মালিকানা প্লাজের নামে দিতে সরকারকে অনুরোধ করেন। পরে ইনজে মারিয়া প্লাজ ১৯৮১ সালে মওদুদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে জমিটি লিজ দেন। তখন থেকেই মওদুদ আহমদ পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন।’

অন্য এক মামলার বাদী মহসিন দরবারের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯৮৪ সালের ২৫ জুন ইনজে মারিয়া প্লাজ এ জমি বিক্রির জন্য মহসিন দরবারকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেন। ১৯৮৫ সালে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির শর্ত অনুযায়ী জমির মূল্য বাবদ কিছু টাকা পরিশোধ করেন মহসিন দরবার। তাকে সম্পত্তি হস্তান্তরও করা হয়। পরে মনজুর আহমদ এ সম্পত্তি নিজের দাবি করে এবং স্বত্ত্ব ঘোষণা চেয়ে ঢাকার প্রথম সাব জজ আদালতে ১৯৯৩ সালে একটি মামলা করেন। এতে রাজউককেও বিবাদী করা হয়। রাজউক লিখিত জবাব দিয়ে জানায়, রাজউককে এসব পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বিষয়ে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। এমনকি সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য রাজউকের কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি।

ওই বাড়ি নিয়ে চুক্তিনামা বাস্তবায়িত না হওয়ায় মামলা করেন মওদুদ আহমদের ভাই। ১৯৯৩ সালের ২৩ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে (তৎকালীন সাব জজ আদালত) মামলাটি খারিজ হয়। এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর হাইকোর্টে প্রথম আপিল করেন মওদুদ আহমদের ভাই। এ আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে আবেদনকারীপক্ষ ডিক্রি পান। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রাজউক ২০০৮ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। তবে তামাদি দিয়ে বাতিল হওয়ায় তা আপিল বিভাগে খারিজ হয়। এর বিরুদ্ধে রাজউক ২০১৪ সালে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে, যা শুনানির জন্য গ্রহণের মাধ্যমে আপিল হিসেবে গণ্য হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn