সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের অর্ধশতাধিক হিজল, করচ গাছ কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর আগেও একইভাবে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট হাওরের বিভিন্ন অংশ থেকে হিজল,করচ গাছ কেটে নেয়। এর ফলে হাওরের হিজলবাগ গাছশূন্য হবার উপক্রম হয়েছে।

গত বুধবার (২৮ অক্টোবর) রাতের কোন এক সময় টাঙ্গুয়ার হাওরের আলম দোয়রার, রাজাইর ধারই, বিত্তরবনসহ বিভিন্ন অংশের হিজল, করচ বাগানের ছোটবড় অর্ধশতাধিক হিজল করচ গাছ কেটে নিয়ে গেছে বলে জানা যায়।

হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সারি সারি হিজল-করচশোভিত টাঙ্গুয়ার হাওরে অবৈধভাবে উজাড় হচ্ছে নলখাগড়া, হিজল-করচ গাছসহ হাওরে পাখি, মাছ ও জলজ প্রাণি। এসব রক্ষায় হাওরে ৪টি আনসার ক্যাম্প (মুজরাই, গোলাবাড়ি, রামসিংহপুর, রংসী) থাকলেও বিশাল অভয়াশ্রমের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করছেন না দায়িত্বশীলরা। ফলে গত তিন বছরের ব্যবধানে এখানকার গাছ কেটে সাবাড় করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

আরও জানা যায়, হাওর রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি গার্ডের সদস্য, ম্যাজিষ্ট্রেটের নৌকার মাঝি, স্থানীয় বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি এবং হাওর রক্ষার নামে বিভিন্ন সংগটনের নেতারাই এ অনিয়ম প্রতিরোধ না করে অর্থের বিনিময়ে সহযোগিতা করছে। হাওর রক্ষায় তাদের কোন কার্যক্রম দেখা যায় না।


টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দা নিরব আহমেদ বলেন, আমি হাওরে গিয়ে এই গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে অবাক হয়েছি। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতিক সৌন্দর্যে একসময় লাখো মানুষকে আকৃষ্ট করলেও এখন দিন দিন মানবসৃষ্ট নৃশংসতার কবলে পড়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়াসহ জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছে হাওর। এই হিজল-করচ গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে হাওরপাড়ের মানুষজন ও বিভিন্ন বিলে দেয়ার জন্য দায়িত্বে থাকা লোকজনেই। হাওরের সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র রক্ষায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি গার্ডের মুজরাই ক্যাম্পের পিসি (ভারপ্রাপ্ত) খসরুল আলম ও সভাপতি মনির মিয়া জানান, টাঙ্গুয়ার হাওর তদারকির জন্য বরাবরই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকলেও হাওরে ম্যাজিস্ট্রেটের পদশূন্য। আমাদের পূর্বে অস্ত্র ছিল, এখন নেই। হাতেগোনা ৪-৫ জন সদস্য নিয়ে পুরো হাওর তদারকি করতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা। আর হাওরে বন ধ্বংসের বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।

গাছ কাটার সত্যতা নিশ্চিত করে তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির জানান, আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি যে বা যারাই গাছগুলো কেটেছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। যারা হাওরের গাছ কেটে নিচ্ছে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn