রাধারমণ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী
কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো আমি বুক চিরিয়া, ভ্রমর কইয়ো গিয়া শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে, জলে গিয়াছিলাম সইসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা ধামাইল গানের জনক হিসেবে পরিচিত বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। লোকসংগীতের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব ১৮৩৩ সালে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার আতুয়জান পরগনার কেশবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৮২ বছর বয়সে ১৯১৫ সালের ১০ নভেম্বর পরলোক গমন করেন তিনি। বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী রাধারমণকে কেশবপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়। কিশোর বয়স থেকে রাধারমণ সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সৃষ্টিকর্তার স্বরূপ অনুসন্ধানে মনোনিবেশে করেন। এজন্য তিনি বিভিন্ন সাধুসন্তের আদেশ উপদেশ অরে অরে পালন করতেন। এই ধারাবাহিকতায় তিনি মৌলভীবাজারের ঢেউপাশা গ্রামের সাধক রঘুনাথ গোস্বামীর সাধন ভজনের কথা জ্ঞাত হয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ গ্রহণ করেন।
শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব মতবাদের উপর ব্যাপক পড়াশুনা করেন। সবশেষে তিনি সহজিয়া মতে সাধন ভজন করেন। এজন্য তিনি বাড়ির পাশে নলুয়ার হাওরের একটি উন্মুক্ত স্থানে পর্ণকুটির তৈরি করে সেখানে সাধন ভজন করতে থাকেন। তিনি কৃষ্ণভাবে বিভোর হয়ে রাধাকৃষ্ণ প্রেমলীলা নিয়ে লোকগান রচনা করেন। তিনি ভজন সংগীতে বিভোর হয়ে গান রচনা করে নিজেই তা গাইতেন। তার মুখের বাণীতে শিষ্যগণ তা কাগজে লিখে রাখতেন। তার নিজ হাতে রচিত গানের কোন পাণ্ডুলিপি নেই। কারণ তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ভাবরসে বিভোর হয়ে গীতরচনা করতেন। কবি রাধারমণের পুরো পরিবারের পারিবারিক জীবন ধারায় বৈষ্ণব ও সুফিবাদের প্রবল প্রভাব ছিল পারিবারিক। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় উপাসনার প্রধান অবলম্বন সংগীতের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল শৈশব থেকেই। লোককবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ’র বাংলা অনুবাদ করেছিলেন তার পিতা রাধামাধব দত্ত। পিতার সংগীত ও সাহিত্য সাধনা তাকেও প্রভাবিত করেছিল। রাধারমণ তার শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও পরিণত বয়সে সে ধারাবাহিকতা তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল। রাধারমণের বেশ কিছু গানের বই বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। গ্রামবাংলার বিয়েশাদীতে রাধারমণের ধামাইল গান খুব জনপ্রিয়।