রুপার সোনালি স্বপ্ন ফিরল লাশ হয়ে
ধর্ষক-খুনিদের শাস্তি চেয়ে সোচ্চার দেশ
টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপার লাশ কবর থেকে তুলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থান থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও স্বজনদের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়। রুপার ভাই হাফিজুর রহমান পরিবারের পক্ষে লাশ গ্রহণ করেন। সন্ধ্যা ৬টার পর বোনের লাশ নিয়ে তিনি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বাড়িতে পৌঁছান। এ সময় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।রুপা গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুধীসমাজ ও বিভিন্ন সংগঠন।জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। একই দাবিতে গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
হাফিজুর বোনের লাশ টাঙ্গাইল কবরস্থান থেকে তুলে নিজেদের গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের অনুমতি চেয়ে বুধবার সকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালতের বিচারক গোলাম কিবরিয়া লাশ উত্তোলন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর ও আবার দাফন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে টাঙ্গাইলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আদেশ দেন। টাঙ্গাইলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খান মো. নুরুল আমিন জানান, আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলনের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।তাঁর উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করে স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী বাংলাদেশ মানববাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আজাদ জানান, টাঙ্গাইলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রহিম সুজন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মধুপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, রুপার ভাই হাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে গতকাল বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। হাফিজুরের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হলে তিনি বিকেল ৪টার দিকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন।
টাঙ্গাইলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রহিম সুজন বলেন, আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন করে নিহতের বড় ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভাই হাফিজুর রহমান লাশ উত্তোলনের পর কবরস্থানে বলেন, বোনের লাশ দেখার জন্য বাড়িতে সবাই অপেক্ষায় আছে। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে ফাঁসি দাবি করেন। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। অবশেষে ঘটনার ছয় দিন পর রূপার মরদেহ নিজ বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ী গ্রামে আনা হয়। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় লাশবাহী অ্যাম্বুল্যান্স আসানবাড়ী গ্রামে এসে পৌঁছলে এক হূদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। রূপার মা হাসনাহেনা, বোন ফুলেরা, পপি, ভাই হাফিজুর রহমান ও উজ্জল প্রামাণিক, আত্মীয়স্বজন, গ্রাম ও এলাকার উপস্থিত নারী-পুরুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। রূপার কফিন ধরে স্বজনদের চিৎকার করে কান্নার দৃশ্য দেখে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। সন্ধ্যা ৭টায় আসানবাড়ী গ্রামের সোহরাবের পুকুর পারে রূপার জানাজা সম্পন্ন হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বারুহাঁস ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক আফসার আলী, প্রবীণ শিক্ষক ফজলুর রহমান, নজরুল ইসলামসহ সাত শতাধিক মানুষ। জানাজা শেষে রূপার লাশ আসানবাড়ী জামে মসজিদ কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
সন্ধ্যায় আসানবাড়ী জামে মসজিদ কবরস্থানে রূপার কবর শেষে এলাকাবাসী এ হত্যার সঙ্গে জড়িত নরপশুদের বিচারের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ করে। এর আগে বিকেলে তাড়াশ ইউএনও এস এম ফেরদৌস ইসলাম উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে রূপার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হক জড়িতদের দ্রুত বিচার আইনে বিচার দাবি করেন। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনের দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকার বনাঞ্চলের পাশ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে লাশের ময়নাতদন্তের পর বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল শহরের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে ওই তরুণীর দাফন করা হয়। পরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আমানবাড়ী গ্রামের হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে তরুণীকে তাঁর ছোট বোন জাকিয়া সুলতানা রুপা (২৭) বলে শনাক্ত করেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহনের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বাসচালকের সহকারী জাহাঙ্গীর, হেলপার শামীম ও আকরাম। গত বুধবার বিকেলের দিকে একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বাসের চালক হাবিব ও সুপারভাইজার সফর।
আসামিরা জবানবন্দিতে জানিয়েছে, ওই দিন রুপা ছাড়াও বাসে পাঁচজন যাত্রী ছিল। তারা সিরাজগঞ্জ মোড়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত, এলেঙ্গা ও কালিহাতীতে নেমে যায়। এরপর বাসটি কালিহাতী পার হলে বাসের চালকের সহকারী শামীম তরুণীকে জোর করে পেছনের আসনে নিয়ে যায়। পরে শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীর তাঁকে ধর্ষণ করে। কান্নাকাটি ও চিৎকার করা শুরু করলে তারা তাঁর মুখ চেপে ধরে। একপর্যায়ে গলাটিপে ও ঘাড় মটকে রুপাকে হত্যা করে তারা। পরে মধুপুর উপজেলা সদর অতিক্রম করে বন এলাকায় রাস্তার পাশে লাশ ফেলে তারা চলে যায়। নিন্দা, ক্ষোভ, প্রতিবাদ, মানববন্ধন : রুপাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থাকায় হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ নানা অপরাধের ঘটনায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।
গতকাল কমিশনের বিবৃতিতে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, একজন নারীকে এভাবে নির্মম পাশবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার ঘটনাটি মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। নারীর প্রতি সহিংসতা, বিশেষত ধর্ষণের ঘটনা সাম্প্র্রতিক সময়ে উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার বিরুদ্ধে কমিশনের প্রতিবাদ ও কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কাজী রিয়াজুল হক বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন মামলায় গড়ে ৮৮ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো, মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্বলতা এবং আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রভাব। তাই কমিশন চলন্ত বাসে রুপাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দ্রুততম সময়ে তদন্ত সম্পন্ন করে অভিযোগপত্র দাখিল, সঠিক মেডিক্যাল রিপোর্ট তৈরি ও প্রমাণাদি আদালতে দাখিল করে আসামিদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
গতকাল বিশিষ্ট নাগরিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও’-এর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্যায়ের যথাযথ বিচার না হওয়ায় এবং অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি না পাওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী, জিয়াউদ্দীন তারেক আলী, রাশেদা কে চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান, মানবাধিকারকর্মী শাহীন আনাম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার .বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একের পর এক এ ধরনের ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা আমাদের ক্ষয়িষ্ণু নৈতিকতা ও মানসিকতার প্রমাণ। এর আগেও গণপরিবহনে ধর্ষণের অনেক ঘটনা ঘটেছে। হাতে গোনা দু-একটি ছাড়া কোনো ঘটনারই উপযুক্ত বিচার হয়নি। আমরা উপলব্ধি করছি যে রাষ্ট্র ও প্রশাসন এ ধরনের ঘটনায় যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও কাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান না হওয়ায় আমরা বিক্ষুব্ধ। ’এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা রক্ষার্থে অন্যান্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে ব্যাপক গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
রুপাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে ময়মনসিংহে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। গতকাল বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়কের শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মহিলা পরিষদ, কালের কণ্ঠ শুভসংঘ, প্রগতি লেখক সংঘ, মানবাধিকার কমিশন, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ, গোলাম সামদানী কোরায়শী পাঠাগারসহ বিভিন্ন সংগঠন যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ফেরদৌস আরা মাহমুদা হেলেন, মনিরা বেগম অনু, মরিয়ম বেগম, নুরুল আমিন কালাম, অধ্যক্ষ সামছুল বারী, অধ্যক্ষ সফিকুল হায়দর মুকুল প্রমুখ।
একই দাবিতে মানিকগঞ্জে মানববন্ধন করেছে সুধীসমাজ। গতকাল সকাল ১১টার দিকে প্রফেসর উর্মিলা রায়ের সভাপতিত্বে মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট আজাহারুল ইসলাম, জেলা মহিলা লীগের সভাপতি নীনা রহমান, সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মী চ্যাটার্জি, জেলা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপক ঘোষ, বারসিকের সমন্বয়কারী বিমল রায় প্রমুখ।
রূপাসহ সারা দেশে ধর্ষণ, হত্যা ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে রাজবাড়ীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছ। গতকাল সকালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা শহরের টাউন মক্তব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি লাইলী নাহার, সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট দেবাহুতি চক্রবর্তী, সহসভাপতি মীর মাহফুজা খাতুন মলি, সাধারণ সম্পাদক সবিতা চন্দ, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক মনির প্রমুখ বক্তব্য দেন।মানববন্ধনকারীরা পরে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলীও মিছিলকারীদের সমর্থন করে বক্তব্য দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে প্রদান করা হয়।
গণধর্ষণ মামলার এক আসামির জামিন : টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল চলন্ত বাসে এক নারীকে গণধর্ষণ মামলার আসামি জামিন পেয়েছে। টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল মান্নান গত বুধবার তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি এ কে এম নাসিমুল আক্তার জানান, বুধবার মামলার নির্ধারিত তারিখ ছিল। আসামিরা আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত রেজাউল করিম জুয়েলের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। বাকি দুজন হাবিবুর রহমান নয়ন ও আবদুল খালেক ভুট্টুর জামিন নামঞ্জুর হয়।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল ভোরে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে গাজীপুরের সফিপুর যাওয়ার উদ্দেশে বিনিময় পরিবহনে রওনা হন এক পরিবহন শ্রমিকের স্ত্রী। বাস ছাড়ার কিছুক্ষণ পর বাসের শ্রমিকরা গামছা দিয়ে তাঁর মুখ ও তাঁর ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে বাসের পেছনের আসনে নিয়ে যায়। একজন তাঁর মাথা ধরে আরেকজন পা চেপে ধরে, অন্যজন ধর্ষণ করে। এভাবে তিনজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে তাঁকে। পরে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা করলে বিনিময় পরিবহনের ওই বাসের চালক ধনবাড়ী গ্রামের হাবিবুর রহমান নয়ন, চালকের সহকারী একই উপজেলার দয়ারামবাড়ী গ্রামের আবদুল খালেক ভুট্টু ও ভাড়া আদায়কারী নিজবর্ণি গ্রামের রেজাউল করিম জুয়েলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।