রোহিঙ্গাদের সাহায্য করতে পেরে বাংলাদেশ গর্বিত : জয়
আন্তর্জাতিক ডেস্ক-
রাখাইন থেকে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সহায়তা দিতে পেরে বাংলাদেশ গর্বিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।২৫ সেপ্টেম্বর দ্য ডিপলোমেট ম্যাগাজিনে (এশীয়-প্রশান্ত অঞ্চলের গণমাধ্যম) প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ কথা বলেন জয়।ওই নিবন্ধে জয় বলেন, চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ তার ৪৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রচুরসংখ্যক রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে আসছে। সেদেশের সরকার তাদের ঘরবাড়ি থেকে তাদের উচ্ছেদ করছে, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ও বিদ্রোহের অভিযোগ রয়েছে। তদের সামনে পথ অল্প। বাংলাদেশই তাদের কাছে কাছাকাছি থাকা আশ্রয়স্থল।এতে বলা হয়, বেশিরভাগ মানুষই মনে করেন, বিশাল এ সমস্যা সামাল দিতে ভালোভাবে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ। অথচ জঘণ্যভাবে ১৬ কোটি মানুষের এই বাংলাদেশকেই ১৯৭০ সালে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলেছিলেন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার।
নিবন্ধে জয় বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, যার ফলে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের বিবেচনা অনুযায়ী নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয় বাংলাদেশ। ২০০৮ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে অন্তত ৩ কোটি বাংলাদেশি দারিদ্র সীমা থেকে মুক্তি পেয়েছে। এছাড়া প্রতিবছরই কমছে গরিব, গৃহহীন ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা।‘এদেশে আশ্রয় নেওয়া এত বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গাদের সহায়তা করা অবশ্যই দুঃসাধ্য। কিন্তু বাংলাদেশ তাদের সহায়তা ও বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে পেরে গর্বিত।’নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসেও গণহত্যা ও শরণার্থী বিষয়টি আছে। ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা গণহত্যা চালায়। এতে অন্তত ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়, আড়াই লাখ মা-বোন নির্যাতিন হন। বাস্তুচ্যুত হয় অন্তত ৪ কোটি মানুষ, এদের ১ কোটি মানুষ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়।এতে বলা হয়, স্বাধীনতা লাভের আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, যা আজকের বাংলাদেশকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকদের দেশ ভাবত পাকিস্তান। এমনকি পাকিস্তান সরকার ইচ্ছা করে ৭০ সালের সাইক্লোনের পর ত্রাণ পাঠাতে দেরি করেছিল। এতে করে পূর্ব পাকিস্তানের ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। এমনকি পূ্র্ব পাকিস্তান থেকে প্রধানমন্ত্রী না করার জন্য তারা গণপরিষদ ভেঙে দিয়েছিল।
জয় বলেন, রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সম্পর্কে ভালো বুঝতে পারে বাংলাদেশ। অর্ধশতাব্দী আগে যখন বাংলাদেশের এমন সহায়তা দরকার হয়েছিল, তাতে সাড়া দিয়ে ভারত ১ কোটি বাংলাদেশি শরণার্থী নেয়। বাংলাদেশও একইভাবে রোহিঙ্গাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে আগ্রহী।নিবন্ধে বলা হয়, গত আগস্টের শেষ থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে অন্তত ৪ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এরআগে থেকেই ৪ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। তবে এখনও রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন ও উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।জয় বলেন, এসব রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজারের উখিয়ায় দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়াও আরও নতুন করে ২ হাজার এক জমিতে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও শিশুদের টিকার মতো সুবিধার জন্য বাংলাদেশ আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র দেয়া শুরু করেছে। এছাড়া তাদের জন্য মজুবত কাঠামোর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে।
এতে বলা হয়, এ মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। তিনি সেখানে বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক দিক থেকে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের ঘরবাড়ি ৭১ সালে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোথাও যাবার জায়গা না থাকায় আমরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সুতরাং আমাদের সামর্থ অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের জন্য সবকিছু করব।নিবন্ধে বলা হয়, স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে শরণার্থী শিবিরের জীবনের অনেক ফারাক। কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা আসার কারণে সৃষ্টি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মতো জনবল ও সম্পদের ঘাটতি রয়েছে স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ ভীত এ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের মধ্যে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিয়ে।জয় বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আন্তর্জাতি সহায়তা চায়নি। এ ভার আমরা একাই বইতে পারি। এটা (বাংলাদেশ) এখন আর দরিদ্র নয়। কিন্তু মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও উচ্ছেদ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে দরকার বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের। অং সান সুচির সরকার এবং সামরিক জান্তাকে কাজ করতে বাধ্য করাও আবশ্যক।নিবন্ধে আরও বলা হয়, নির্যাতন বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি ও নিজে দেশে ফিরে যাওয়া সময়সাপেক্ষ। এই সময়ে বাংলাদেশ গর্বিতভাবে তাদের সহায়তা করতে সক্ষম।