রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: যেসব বিষয়ে একমত নয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার
শেখ শাহরিয়ার জামান–
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মতবিরোধ পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। মিয়ানমার প্রকাশ্যে রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন সাপেক্ষে ফেরত নেওয়ার কথা বললেও আলোচনার টেবিলে কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতার অভাব দেখিয়ে সময়ক্ষেপণের চেষ্টা করছে। গত ২ অক্টোবর রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে মিয়ানমারের ইউনিয়নমন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ের বৈঠক হয়।
গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন ও গণহত্যার মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশে। প্রথম ১৯ দিনেই চার লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায়। এরপর এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৪০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এছাড়া, এর আগে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা আরও চার লাখ রোহিঙ্গাও বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এর মধ্যে গত বছরের অক্টোবরের সহিংসতায় পালিয়ে আসে ৮৭ হাজারের মতো রোহিঙ্গা।
মতবিরোধের ক্ষেত্র
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টিন্ট সোয়ের ওই বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয় গত বছরের অক্টোবর থেকে যারা বাংলাদেশে এসেছে তাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে তারা আগ্রহী। অন্যদিকে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়, আগমনের তারিখ বিবেচনা না করে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয়গ্রহণকারী সব মিয়ানমার নাগরিকের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে।
একই বৈঠকে মিয়ানমার প্রস্তাব করে, ১৯৯২ সালের যৌথ বিবৃতিতে বর্ণিত নীতি ও শর্তাবলী অনুসরণ করে একটি যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া হবে। বিপরীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯৯২ সালের সঙ্গে বর্তমান সমস্যার মাত্রা ও প্রকৃতি ভিন্ন এবং বাস্তবতার নিরিখে ১৯৯২ সালের নীতি ও শর্তাবলীর পুনর্বিবেচনা ও নতুন কাঠামো ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের যাচাই প্রক্রিয়া এককভাবে সম্পন্ন করার প্রস্তাব দেয় মিয়ানমার। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথ যাচাই প্রক্রিয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এছাড়া, পুরো বিষয়টিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্পৃক্ততার কথা বলা হলেও মিয়ানমার তাতে নেতিবাচক মনোভাব দেখায়।
সরকারের অবস্থান
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, যেসব বিষয়ে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে সেগুলোর মীমাংসা সহসা হবে বলে মনে হয় না। আমরা এজন্য তৈরি আছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের কৌশল দ্বিমুখী। প্রথমটি হচ্ছে, মিয়ানমারে আমাদের দূতাবাস ও ঢাকায় মিয়ানমারের দূতাবাসসহ অন্যান্য বিভিন্ন পন্থায় দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বর্তমান যে আন্তর্জাতিক চাপ মিয়ানমারের ওপর আছে সেটি ধরে রাখা।
আলোচনার নামে মিয়ানমার সময়ক্ষেপণ করছে কিনা–এ বিষয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়টি আমরা বুঝি কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যথায়, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলবে আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা করতে চাই কিন্তু বাংলাদেশ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করছে না।
আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ ছাড়াও আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আগামী ১৬ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। আশা করি, সেখানে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যেটি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।