লোকউৎসব নিয়ে সুধীজনের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জে ৪ লোককবির উৎসবকে নিয়ে জেলার সংস্কৃতিসেবীদের মধ্যে মতানৈক্য শুরু হয়েছে। দুর্যোগের বছর লোক উৎসবের জন্য বরাদ্ধকৃত ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের দেয়া ৩ লাখ টাকা উৎসব খাতে খরচ না করে জেলার প্রকৃত দুস্থ,অন্ধ,আউল-বাউল ফকির ও অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবী শিল্পীদের মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে খয়রাতি সাহায্য হিসেবে প্রদানের জন্য বাউল শিল্পীদের পক্ষে প্রস্তাব রাখেন সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল। উক্ত প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য রাখেন স্বয়ং জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম,সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক শিল্পী অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ,সুরমা শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি সঙ্গীত পরিচালক মোঃ আপ্তাব মিয়াসহ উপস্থিত কয়েকজন সংস্কৃতিসেবী। আল-হেলাল জানান,প্রতি বছর জেলার প্রায় দুইশত বাউল শিল্পী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দুস্থ সংস্কৃতিসেবী ভাতার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু গত সরকারের আমল থেকেই প্রতি বছর মাত্র ২৫ জন শিল্পী ভাতা পান। বঞ্চিত থাকেন পৌনে ২শত জনের মতো আবেদনকারী উপেক্ষিত বাউল শিল্পী। এবার জেলায় দুর্যোগ এসে ফসলহানী হওয়ায় এবং দুস্থ বাউল শিল্পীদের বসতবাড়ী কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হওয়ায় সর্বোপরী অনাহার ও অর্ধাহারে বাউল শিল্পীরা মানবেতর দিনাতিপাত করায় দুর্যোগের বছরে উৎসব না করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষে একটি অলিখিত সিদ্বান্ত থাকায় উৎসবটি মার্চ মাসে যথাসময়ে হয়নি। যেহেতু উৎসব হয়নি সেহেতু দুর্যোগ ও ফসলহানীর উপযুক্ত কারণে মারাত্মকভাবে মানবেতর মুহুর্ত অতিক্রমকারী জেলার দুস্থ বাউল শিল্পীদেরকে সরকারের বরাদ্ধকৃত টাকাগুলো প্রদান করে তাদের পূণর্বাসন করলে একটি বড় কাজ হবে। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারন সম্পাদক এডভোকেট শামছুল আবেদীন এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করলেও পরে তিনি যেভাবেই হউক ৪ লোককবির স্মরণে উৎসবটি করার সিদ্বান্ত নিয়ে তার মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি ৩০ জুন থেকে প্রতিযোগীতা শুরু করে জুলাই মাসের শেষ বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত ৪ দিনব্যাপী লোক উৎসব করার প্রস্তাব রাখেন। সংস্কৃতিসেবী অধ্যক্ষ অনীশ তালুকদার বাপ্পু বলেন,লোক উৎসব নিয়েও আমাদের অনেক কথা আছে। আমরা প্রতি বছর লোক উৎসবে গান গাই। কিন্তু আমাদের শিল্পীরা এক টাকা সম্মানী পাওয়াতো দূরের কথা একটি সার্টিফিকেট পর্যন্ত পাননা। উৎসব উদযাপন কমিটিতে অনেক প্রকৃত সংস্কৃতিসেবীরা পর্যন্ত উপেক্ষিত থাকেন। জেলা প্রশাসক বলেন, সুনামগঞ্জে এতজন বাউল শিল্পী ভাতা থেকে বঞ্চিত থাকার ব্যপারে আমি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে কথা বলবো। সুনামগঞ্জের সংস্কৃতির সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে চলতি রমজানের মধ্যেই জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মিলনায়তনে মত বিনিময় সভা করবো। রোববার বিকেল ৩টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত লোক উৎসব প্রস্তুতি কমিটির সভায় দাবী করা হয় যেহেতু একখাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা যায়না সেহেতু উৎসবের জন্য বরাদ্ধকৃত টাকা উৎসব করেই ব্যয় করতে হবে। অন্যথায় এ টাকা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাটাতে হবে। অন্যদিকে শিল্পী সমাজের পক্ষ থেকে জেলা কমিটির রেজ্যুলেশন করে এ খাতের টাকা মন্ত্রণালয়ের সচিবের অনুমতি নিয়ে অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবীদের কল্যাণে ব্যয় করার দাবী জানানো হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ কামরুজ্জামান,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও প্রযুক্তি) মোঃ সফিউল আলম, জজকোর্টের পিপি এডভোকেট ড.খায়রুল কবির রুমেন,জেলা জাসদ সভাপতি আতম ছালেহ,জেলা কালসারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল ইসলাম চৌধুরী পাভেল,জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট শামছুল আবেদীন,সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ,যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এডভোকেট দেবদাস চৌধুরী রঞ্জন, দৈনিক সুনামকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক বাবু বিজন সেন রায়,সুনামগঞ্জের খবর পত্রিকার সম্পাদক পঙ্কজ কান্তি দে ও বাউল কামাল পাশা স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক আল-হেলাল প্রমুখ।
উল্লেখ্য বৈষ্ণব কবি রাধারমন দত্ত,মরমী কবি হাছনরাজা,বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিম ও দুর্বীণ শাহ স্মরণে লোক উৎসবের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্ধ করে। কিন্তু দুর্যোগের কারণে উৎসবটি যথাসময়ে আয়োজন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কমিটি। সভায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারন সম্পাদক বলেন সাবেক জেলা প্রশাসক লোক উৎসব কমিটি ও বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করে গেছেন। আমরা বিভিন্ন সময়ে উপকমিটিগুলোর সভা ডেকে দু তিনজন ছাড়া সকলকে পাইনি বিধায় উৎসবটি যথাসময়ে করতে পারেনি। সভায় লোক উৎসব কমিটি পূণর্গঠনের ব্যাপারেও বিস্তারিত আলোচনা হয়।