সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের বিরেন্দ্র চৌধুরীর ছেলে টিটু চৌধুরী সিলেট শহরে আতংকের নাম।  হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, হোস্টেল ভাংচুরসহ নানা অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত এই টিটু চৌধুরী। ছাত্রলীগের কোনো পদে না থেকেও তিনি প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া। সাম্প্রতিক সময়ে টিলাগড় এলাকার একের পর এক অপকর্ম ঘটিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন টিটু।  নিয়মিত ছাত্র না হলেও সিলেট এমসি কলেজে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন টিটু চৌধুরী। সিলেট মডেল থানায় তার নামে একাধিক মামলা হলেও  তাকে ধরতে পারছে না পুলিশ।

সর্বশেষ ১৩ সেপ্টেম্বর বুধবার সিলেটের শিবগঞ্জে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম। এই হত্যার দায়েও টিটুকে প্রধান অভিযুক্ত করে মামলা করেন মাসুমের মা। এরআগে গত ১৩ জুলাই এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৩৯ কক্ষ ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় টিটুকে প্রধান আসামী করে মামলা করেন কলেজ অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ। তবে একর পর এক মামলা হলেও টিটু থেকে গেছেন অধরা। মামলা হলে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর প্রভাবশালীদের মদদে ফের প্রকাশ্যে এসে জড়িয়ে পড়ছেন অপকর্মে। কিছুদিন আগে একটি মামলায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে বেরিয়ে আসেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,টিটু চৌধুরী ২০০৫-০৬ মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজে গণিত বিভাগে স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হন। তবে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই তার সাথে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী উদয়েন্দু সিংহ পলাশ। বর্তমানে কলেজটির নিয়মিত ছাত্র নন টিটু। ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে একই কলেজের সে প্রাইভেটে ডিগ্রী (পাস) কোর্সে ভর্তি হন তিনি। ২০১০ সালে উদয়েন্দু সিংহ পলাশ হত্যার পর থেকে এমসি কলেজের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেন টিটু। গড়ে তুলেন নিজস্ব বলয়। এই বলয়ের মাধ্যমে এমসি কলেজ ও আশপাশের এলাকায় টিটু ছিনতাই ও চাঁদাবাজি চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।২০১২ ছাত্রলীগের অগ্নিসংযোগের পর চলতি বছরে খুলে দেওয়া এমসি কলেজ ছাত্রাবাস। এসময় ছাত্রাবাসে উঠানোর নামে অনেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠে টিটু চৌধুরীর বিরুদ্ধে। টাকা নিয়ে হলে ছাত্র উঠাতে না পারার দ্বন্দ্ব থেকেই ১৩ জুলাই সকালে টিটু চৌধুরীর নেতৃত্বে ছাত্রাবাসে ভাংচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

তখন পর্যন্ত টিটু চৌধুরী ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের অনুসারী। তবে ছাত্রাবাস ভাংচুরের পর কলেজ কর্তৃপক্ষ মামলা করলে টিটুর উপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেন রঞ্জিত। এসময় টিলাগড়েরই আরেক নেতা, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ বলয়ে যোগ দেন টিটু। এখনও এই বলয়েই রয়েছেন তিনি।অভিযোগ আছে টিটু চৌধুরী একের পর এক অপকর্ম করে গেলেও নেতাদের সুনজর থাকায় সে সব সময়ই প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাহিরেই থেকে যান। আবার গ্রেপ্তার হলেও কয়েকদিনের ভিতরেই জামিনে বেরিয়ে আসেন।কলেজ ছাত্রাবাস ভাংচুর মামলায় গ্রেপ্তার না হওয়ায় এই ঘটনার দুই মাসের মধ্যেই নিজ দলেরই কর্মীকে হত্যা করে টিটু চৌধুরী অনুসারীরা। নিহত মাসুম ছাত্রলীগের সুরমা গ্রুপের কর্মী।

এমসি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, নিয়মিত ছাত্র না হলেও টিটু চৌধুরীই এমসি কলেজ ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিতেন। তবে গত জুলাইয়ে হোস্টেল ভাংচুরের মামলার আসামী হওয়ার পর থেকেই ক্যাম্পাস ছাড়া তিনি। ছাত্রলীগের একটি অংশও তাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিতে নারাজ। অন্যদিকে, ফের ক্যাম্পাসের নিজের অবস্থান ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন টিটু। এনিয়ে এমসি কলেজে ছাত্রলীগের মধ্যে পুনরায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন  বলেন, মাসুম হত্যা, কলেজ হোস্টেল ভাংচুরসহ টিটু চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছি। এব্যাপারে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ বলেন, টিটু আমার কলেজের নিয়মিত ছাত্র নয়। সে এখানে প্রাইভেটে ডিগ্রী পড়ে। তাই তার বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া কলেজ হোস্টেল ভাঙ্গার দায়ে তাকে প্রধান অভিযুক্ত করে মামলা করা হয়েছে। এখন তাকে গ্রেপ্তার করা প্রশাসনের কাজ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn