শেখ হাসিনার ১৯৯৬-০১ মন্ত্রিসভার সদস্যরা অধিকাংশই রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন। হাতছাড়া করেছেন নিজের নির্বাচনী এলাকা। অনেকে চলে গেছেন পরলোকে। কেউ কেউ মন্ত্রীত্ব পেলেও দলীয়ভাবে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছেন। আবার কিছুসংখ্যক নেতা আসন ধরে রাখতে পারলেও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন ধরে রাখতে পারবেন কিনা সেনিয়ে রয়েছেন চরম সংশয়-সংকটে। আমির হোসেন আমু। আওয়ামী লীগে রাজনীতিতে ‘কিং মেকার’ বলে পরিচিত ছিলেন গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে খাদ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ২০০৯ সালে ছিটকে পড়েন দলের প্রেসিডিয়াম থেকে। দ্বিতীয় মেয়াদেও মন্ত্রীত্বলাভে ব্যর্থ হন। বিগত নির্বাচনী মেরুকরণের সংকটকালে তাকে ঠাঁই দেয়া হয় মন্ত্রিসভায়। অবশ্য সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য।

তোফায়েল আহমেদ ৯৬-০১ মন্ত্রিসভায় পাঁচ বছর মন্ত্রীত্ব করেন। ভোলা-১ ও ভোলা-২ আসনে বিজয়ী তোফায়েল শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী হিসাবে যাত্রা শুরু করেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধীদানকারী তোফায়েলও ওয়ান ইলেভের পর থেকে আওয়ামী লীগে নির্বাহী ক্ষমতা থেকে দূরে। বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ এখন বানিজ্য মন্ত্রী। নবম সংসদে  উত্তাপ ছড়িয়েছেন জ্বালাময়ী ভাষন দিয়ে-বিরোধী বেঞ্চে বিএনপি ছিল বলে।

শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের অর্থ মন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে নিজ নির্বাচনী এলাকা হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ মৃত্যুর লড়াই করে পরাস্ত হন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই।

এলজিআরডি মন্ত্রী জিল্লুর রহমান ওয়ান ইলেভেন পরিস্থিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা কারারুদ্ধ হলে শীর্ষে উঠে আসেন। গ্রেফতারকালে শেখ হাসিনা জিল্লুর রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করে যান। দলকে তিনি ভাঙ্গনের হাত রক্ষা করেন। শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন সফল করার ক্ষেত্রে অসীম ভুমিকা রাখেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করলে আওয়ামী লীগের চার বারের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ইহলোক ত্যাগ করেন। কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে  এখন তার পুত্র নাজমুল আহসান পাপন সংসদ সদস্য ও বিসিসিবির কর্ণধার।

শিক্ষা মন্ত্রী এএসএইচকে সাদেক, বিদ্যুৎ মন্ত্রী লে. জেনারেল নুরুদ্দীন খান, স্বাস্থ্য মন্ত্রী সালাউদ্দীন ইউসুফ ও পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী কল্পরঞ্জন চাকমা মারা গেছেন।

মোহাম্মদ নাসিম ডাক টেলিযোগাযোগ ও গণপূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রী হিসাবে শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রিসভায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। সিরাজগঞ্জ-১ ও সিরাজগঞ্জ -২ আসনে জয়ী নাসিম শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বগ্রহণ করলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অন্যকে দেয়া হয়। তবে ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয় নাসিমের হাতেই থাকে। আওয়ামী লীগের দুবারের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিম ২০০২ সালে দলের কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হারান। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনটি আসনে মনোনয়ন নেয়াকে কেন্দ্র করে নাসিমের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়। নিজের বড় ভাই প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মোহাম্মদ সেলিমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একটি আসনে জয় পেলেও নাসিমের অবস্থান দুর্বল হতে থাকে। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ  থেকে তাকে বিদায় দিয়ে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে একটির স্থলে ৬টি সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ সৃষ্টি করা হয়। নাসিমকে শুধু সদস্য রাখা হয়। ওয়ান ইলেভেন কালে নাসিমের ভূমিকা বিতর্কিত না হওয়ায় আবার লাইম লাইটে উঠে আসেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।

নাসিম ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।  কারারুদ্ধ ছিলেন। একটি মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। ফলে পুত্র তানভীর শাকিল জয় তার আসনে সংসদ সদস্য  নির্বাচিত হন। গত নির্বাচনে অংশ নিয়ে নাসিম নিজেই বিজয়ী হন। বর্তমানে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের দুবারের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক দুটি আসনে বিজয়ী হয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রী হয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের খড়গ তার ওপরও পড়ে। আমু, তোফায়েল, জলিল, সুরঞ্জিতের ন্যায় তিনিও সাইডলাইনে ছিলেন। হারিয়েছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ। অনেকটা মনোকষ্ট নিয়ে এ জনগণমন নন্দিত নেতা ইহলোক ত্যাগ করেন।

আব্দুল জলিল টেকনোক্রেট কোটায় ‘৯৯ সালে আমু ও শেখ সেলিমের সঙ্গে মন্ত্রী হয়েছিলেন। ‘৯৭ সালে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ২০০২ সালে দলের সাধারণ সম্পাদক হন। ওয়ান ইলেভেনের সময় কারারুদ্ধ হলে তার পদে একেক সময় একেক জন ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্বপালন করেন। ২০০৯ সালের কাউন্সিলে তাকে সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক রিপোর্ট পাঠ করতে দেয়া হয়নি। মন্ত্রীত্ব দূরে থাক এমনকি প্রেসিডিয়ামে স্থান দেয়া হয়নি আব্দুল জলিলকে। আমু ও তোফায়েল মন্ত্রীত্বলাভের আগেই জলিল পরলোকে গমন করে এক বুক জ্বালা নিয়ে।

শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদের তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। এবারও তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আগেই কেড়ে নেয়া হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় পদ। টাঙ্গাইল-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মরহুম রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর অক্মফোর্ড পড়ুয়া পুত্র আবুল হাসান চৌধুরী। তিনিও আওয়ামী লীগের কোন কিছুতে আর নেই।

এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে জয়ী হবার পর যোগাযোগ মন্ত্রী হয়েছিলেন। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি ঘটনায় তিনি পদত্যাগ করেন। দলের কোন কেন্দ্রীয় পদেও তিনি নেই। তার আসনটিও হাতছাড়া হয়েছে।

মাওলানা নুরুল ইসলাম ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৮ সালে জামালপুরে তার আসনে মনোনয়ন না পেলেও এবার তিনি বিজয়ী হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন।

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের সহোদর আফসার উদ্দীন আহমেদ গণপূর্ত ওগৃহায়ণ প্রতিমন্ত্রী হলেও কিছুদিনের মাথায় রাজধানীর ভাসানটেক বস্তিভাঙ্গার জের ধরে অপসারিত হন। গত নির্বাচনে সিমিন হোসেন রিমির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন আফসার উদ্দীন খান।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী ঘেকে পুর্ণমন্ত্রী হয়েছিলেন চট্টগ্রাম -৯ আসনের এম এ মান্নান। তিনি অনেক আগেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন। শেরেবাংলার একমাত্র পুত্র এ কে ফায়জুল হক পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে। তিনিও পরলোকে।

পটুয়াখালী-৩ আসনে বিজয়ী হয়ে ছাত্রলীগের এককালীন সাধারণ সম্পাদক আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। জনপ্রিয় এ নেতা ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় পদ হারানোর আগেই ২০০৮ সালের মির্বাচনে মনোনয়ন হাতছাড়া করেন। অবশ্য তা এবার পুনরুদ্ধার করেন ফের সংসদ সদস্য হয়ে।

রাশেদ মোশাররফ ভুমি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি কৃষক লীগের সভাপতির পদ হারানোর পর থেকে রাজনীতি থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেন। তিনিও পরলোকে।
রহমত আলী গাজীপুর থেকে সংসদ সদস্য হয়ে পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। বর্তমানেও তিনি সংসদ সদস্য। বর্ষীয়ান রহমত আলী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত আব্দুর রউফ চৌধুরী। তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তার পুত্র খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য।

আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রংপুরের এইচ এন আশিকুর রহমান বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বরাবরের ন্যায় গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য। ১৯৯৯ সালে যখন স্বাস্থ্য মন্ত্রী হন তখন তিনি ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান। এখন প্রেসিডিয়াম সদস্য। ২০০৮ সালের পর  তাকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেয়া হয়নি। বিগত নির্বাচনের পর মন্ত্রীত্ব লাভের কথা শোনা গেলেও আজ অবধি শেখ সেলিম মন্ত্রিসভার বাইরেই রয়ে গেছেন।

অবিতর্কিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। তাকে একটা পর্যায়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয় এবং কিছু দিন পর তিনি পদত্যাগ করেন। বর্তমানে রফিকুল ইসলাম চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাউদ্দীন ইউসুফ দফতরবিহীন মন্ত্রী অবস্থায় ক্যান্সারে আক্রান্ত মারা যান।

বেগম সাজেদা চৌধুরী ফরিদপুর -২ আসনে হেরে যাওয়ার পর মহিলা আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের এককালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বর্তমান সংসদের উপনেতা। মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদিকা সাজেদা চৌধুরী এখনো আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।

বর্তমান কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী শেখ হাসিনার তিন মেয়াদের কৃষি মন্ত্রী। আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে আসা ন্যাপ নেত্রী মতিয়া ২০০২ সাল থেকে দলের প্রেসিডিয়ামে রয়েছেন। পিতৃভুমি পিরোজপুরে হলেও তিনি শ্বশুর বাড়ি শেরপুর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আইনমন্ত্রী ছিলেন আব্দুল মতিন খসরু। কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত খসরু ‘৯৬ সালে প্রতিমন্ত্রী হিসাবে সাফল্য দেখানোয় পুর্ণমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেম। এখন তিনি আইন সম্পাদক আওয়ামী লীগের।

বিদ্যুৎ মন্ত্রী নুরুদ্দীন খান পুরো পাঁচ বছর মন্ত্রীত্ব করলেও ২০০১ সালে নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। তিনি মারা গেছেন।

বর্তমান বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। এরশাদের জাতীয় পার্টির মহাসচিব হিসাবে মন্ত্রী হলেও মতবিরোধের কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে মিলে জাতীয় পার্টি (মিজান-মঞ্জু) গঠন করেন। মিজান চৌধুরী মারা যাওয়ার পর তিনি নিজেই পার্টি প্রধান হন। সেই সূত্রে বর্তমানে তিনি এবারও শেখ হাসিনার মন্ত্রী।

জাসদ সভাপতি: আসম আব্দুর রব শেখ হাসিনার ঐকমত্যের সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রী ও পরে মৎস ও পশুসম্পদ মন্ত্রী হয়েছিলেন। জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আসম রব এখন শেখ হাসিনা সরকারের প্রবল বিরোধী।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রথম সংসদ সদস্য হন কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে। ৯৭ সালে বিমান প্রতিমন্ত্রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র আশরাফ। ২০০২ সালের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের দুই নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন। ওয়ান ইলেভেনে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল কারারুদ্ধ হলে এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। কিন্তু তিনি কারারুদ্ধ হন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম লন্ডনে চলে যাওয়ায় তিন নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোস ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ প্রধান  শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলন শুরু হলে সৈয়দ আশরাফ দেশে ফিরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখেন। জিল্লুর রহমান ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে আন্দোলন সফলও হয়। আব্দুল জলিল ও ওবায়দুল কাদের কারাগার থেকে বেরিয়ে আসলেও সৈয়দ আশরাফ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রয়ে যান।

২০০৯ সালের কাউন্সিলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিন বছরের মাথায় আবার কাউন্সিল হলে সৈয়দ আশরাফ দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দল সরকার গঠন করলে এলজিআরডি মন্ত্রীর পদটি সৈয়দ আশরাফ অর্জন করেন। এবার তাকে এ পদ থেকে সরিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী করা হয়। সর্বশেষ কাউন্সিলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে। কাদের শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

ময়মনসিংহের অধ্যাপক ডা. আমানুল্লাহ ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। খুলনার আব্দুল খালেক তালুকদার ৯৯ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। পরবর্তীতে তিনি খুলনা সিটি মেয়রও হন। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার স্ত্রী হাবিবুন্নাহার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। অবশ্য গত নির্বাচনে তালুকার খালেক বাগেরহাটে তার স্ত্রীর স্থলে নিজেই প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। অধ্যাপিকা জিন্নাতুন নেসা তালুকদার প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনে বিজয়ী হয়ে। সতীশ চন্দ্ররায় মৎস পশুসম্পদ  প্রতিমন্ত্রী  হলেও দলীয় মনোনয়নলাভে ব্যর্থ হন। বর্তমানে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য।

অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস শেরপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হবার পর শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হন। বর্তমানেও তিনি সংসদ সদস্য। বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান গণপূর্ত ও গৃহায়ণ মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য মোশাররফ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।

রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন যশোরের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তার আসন হাতছাড়া হয়ে যায়।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম ১৯৯৭ সালে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। পরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারালেও তিনি এখন পূর্ণ মন্ত্রী।  তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত থাকার কারণে।

‘৯৮ সালে বিএনপির সংসদ সদস্য ডা. আলাউদ্দিন শেখ হাসিনার পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। সংসদ সদস্য পদ খারিজ হলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রায়হানুল হকের কাছে হেরে যান। ডাঃ আলাউদ্দিন আওয়ামী লীগের প্রসিডিয়াম সদস্য থাকা অবস্থায় ‘৯৬ সালের নির্বাচনে রাজশাহীতে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। বঞ্চিত হলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এবং মনোনয়ন নিয়ে জয়ী হন।

একই ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত সিরাজগঞ্জের হাসিবুর রহমান স্বপন। শেখ হাসিনা তাকে শিল্প উপমন্ত্রী করেন। বর্তমানে তিনি সংসদ সদস্য। বরগুনার ধীরেন্দ্রদেবনাথ শম্ভু নৌ উপমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানেও তিনি সংসদ সদস্য।

সাবের হোসেন চৌধুরী উপমন্ত্রী হয়েছিলেন ঢাকার সবুজবাগ-মতিঝিল নির্বাচনী এলাকা থেকে। ২০০১ সালে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব নিযুক্ত হন। ২০০২ সালে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও ওয়ান ইলেভেনে বিতর্কিত ভুমিকার কারণে পদ হারান। বর্তমানে তিনি সংসদ সদস্য।

কল্পরঞ্জন চাকমা পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। তিনিও রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn