নিউ ইয়র্কে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান জানান দিলেও ‘সমঝোতা’র পথেই হাঁটবে বিএনপি। দলটি শেষ সময় পর্যন্ত ইতিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তবে এর পরও যদি মনে হয় যে সরকার বিএনপিকে বাইরে রেখে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করছে, সেই ক্ষেত্রে নতুন বা ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করবে দলটি। অবশ্য ওই কর্মকৌশল আন্দোলন কি না, সেটি কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে স্পষ্ট করেননি বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতারা। দলটির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্কে বিএনপিকে জঙ্গিবাদী দল হিসেবে তাদের সঙ্গে বসা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন। অথচ এর দুই দিন পরই অন্য এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। প্রশ্ন হলো, তিনি কাদের নিয়ে ওই নির্বাচন করবেন?ড. মোশাররফ জানান, প্রধানমন্ত্রীর মতো হার্ডলাইনে যাওয়ার চিন্তা বিএনপি এখনই করছে না। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে দলটি সমঝোতার পথেই থাকবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আরেকটি একতরফা নির্বাচন তাঁরা মেনে নেবেন। তাঁর মতে, এবার জনগণ ওই নির্বাচন হতে দেবে না।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের স্বার্থে তাঁরা আলোচনা তথা সমঝোতার চেষ্টা করে যাবেন শেষ পর্যন্ত।

আর এ জন্যই সহায়ক সরকারের প্রস্তাব খুব শিগগিরই উপস্থাপন করা হবে। তবে বিএনপিকে দুর্বল মনে করে সরকার যদি আরেকটি একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়, সে দায়দায়িত্ব তাদেরই—যোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘নিউ ইয়র্কে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বেশ উসকানি রয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু আমরা এখনই এ বক্তব্যকে শেষ কথা বলে মনে করতে চাই না। কারণ নির্বাচন এখনো বেশ খানিকটা দূরে। ’গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির মতো একটি সন্ত্রাসী দল, জঙ্গিবাদী দল; তাদের সঙ্গে বসতে হবে। তাদের সঙ্গে বসে সমাধান করতে হবে। এ কথাটা আর কেউ বলবেন না। সেটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না। ’ অবশ্য এর দুই দিন পরই বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি মনে করে, দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতেই প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের নেতারা কড়া ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো ‘একতরফা’ আরেকটি নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

তা ছাড়া বিএনপির আরেকটি মূল্যায়ন হলো ৫ জানুয়ারির তুলনায় সরকার ও আওয়ামী লীগ কেউই এখন আর অতটা শক্তিশালী নয়। ফলে ওই সময় পাঁচটি মন্ত্রণালয় ছাড়সহ সমঝোতার প্রস্তাব দিতে পারলে সরকার অনড় থাকবে, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। পাশাপাশি ভারতের একতরফা সমর্থন পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টিও রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি সুধীসমাজে এখন বেশ আলোচিত। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে কী ঘটতে পারে, সে বিষয়েও নানা আলোচনা ও গুঞ্জন ডালাপালা মেলতে শুরু করেছে। ফলে শেষ মুহূর্তে সরকারের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি হবে এবং একটি পথ বেরিয়ে আসবে বলেই আশাবাদী বিএনপি। আর সেই কারণে দলটি পরিস্থিতি এখনই ঘোলা করতে রাজি নয়। এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতার জন্য নাগরিক সমাজের মধ্য থেকেও চাপ আছে। একটি সূত্রের দাবি, বড় দুই দলের নেতাদের সঙ্গে এ প্রশ্নে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনাও শুরু হয়েছে। তবে ওই আলোচনা রাজনৈতিক পর্যায়ে গড়াতে সময় লাগবে বলে সূত্রটি জানায়। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ  বলেন, দুই দলের মধ্যে আলোচনা বা সমঝোতার জন্য সুধীসমাজের মধ্য থেকে তাগিদ থাকলেও অর্থবহ আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরে এলে হয়তো আলাপ-আলোচনা শুরু হবে। তাঁর মতে, রোহিঙ্গাসহ যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তাতে দুই দলের মধ্যে ঐক্য না হলে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn