শাহরীয়ার বিপ্লব(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)-

আমরা যখন জন্ম নেই তখন আমরা একটা ক্যারেক্টার নিয়ে বেড়ে উঠি। প্রথমে পারিবারিক, গোষ্ঠীর, গোত্রের, গ্রামের, সমাজের একটা আচার আচরণ নিয়ে আমরা আস্তে আস্তে বড় হই। আমরা কেউ স্বীকার করি বা না করি, আমাদের একটা জন্মগত পারিবারিক ইতিহাস আছে, রীতিনীতি, ঐতিহ্য বা অভ্যাস আছে। তেমনিভাবে দেশ বা সমাজেরও আছে। এই পারিবারিক সামাজিক,আঞ্চলিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, ক্যারেকটার গুলোর সমষ্টিই মুলত সংস্কৃতি। ব্যক্তি জীবনে আমরা কেউ এই সংস্কৃতি গুলি মানি, লালন করি, কেউ করি না। মানিও না। যারা মানি না তাদেরকে আমরা কি বলি? যেমন আমি যদি ফেনারবাকের সংস্কৃতিতে বড় হয়ে ফেনারবাঁককে অস্বীকার করি, ফেনারবাঁকের মানুষ আমাকে কি বলবে?  একই ভাবে দেশ বা রাষ্ট্রের বা সমাজের বা জাতীর একটা সংস্কৃতি আছে। জাতী যদি সেই সংস্কৃতি লালন না করে সেই জাতীর আর স্বকীয়তা থাকে না। পরবর্তী প্রজন্ম সেই জাতীর অতীতকে ভুলে যায়। যেভাবে ভুলে যাচ্ছে আমাদের সনাজের কিছু প্রজন্ম তাঁর পারিবারিক ইতিহাস।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় যে মুখোশ গুলো উঠে এসেছে এই গুলো আজকের? আমাদের গ্রামীণ বিভিন্নমেলার প্রায় সবগুলোতে এই মুখোশের প্রচলন ছিল।  কেউ বলেন,এই মুখোশ গুলো হিন্দু দেবদেবীর প্রতিক। পেঁচাকে অলক্ষী বা অমঙলের প্রতীক হিসাবে ধারনা করা হত। এটা কি শুধু হিন্দু বা মুসলিম সমাজের সংস্কার ছিল? নাকি সকলের? যতদুর জানি এই জনপদের আদি মানুষেরা অর্থাৎ আমাদের পুর্বপরুষেরা তাই ভাবতেন। এই ভাবনা থেকেই পেঁচা রুপের অতীত যত অমঙ্গল আছে তা থেকে মুক্তি পেতেই মঙ্গল শোভাযাত্রায় এর প্রতিকি ব্যবহার উঠে এসেছে। একই ভাবে বাঘ, সিংহ প্রভৃতির ব্যবহার এসেছে তেজ্ব আর খীপ্রতার বা বীরত্বের প্রতীক হিসাবে। যেমন আমাদের ক্রিকেটারদের আমরা টাইগার বলি। এটা কি কোন ধর্মীও প্রতীক হিসাবে বলি?পায়রা কে শান্তির প্রতীক বলি। এটাও কি হিন্দু বা মুসলিম হিসাবে? ময়ূর তো সৌন্দর্যের সাথে বর্ষার প্রতিকী রুপ। ময়ুয়পনখি নাউ যে বলি এটাউ তো প্রতিকি। তাও কি ধর্মীও বা হিন্দু ধর্মের? ডাগর ডাগর চোখের সুন্দরী তরুণীকে বলি হরিনী নয়না। নারীর সৌন্দর্য কে নদীর সাথে, খিলখিল হাসিকে ঝর্নার সাথে উপমা দেই। এগুলো কি ধর্মীয়? ক্ষ্যাপা ষাড় আমাদের সৌর্য্য বির্যের প্রতীক। বাঘের বাচ্চা বলে সাবাস দেয়া হয় কোন সাহসী যুবককে। কীর্তিমান কোন তরুনকে বলা হয় সূর্যসন্তান।  বীরপুরুষের মতো কাজ করলে কাউকে বলে সিংহপুরুষ। এই উপাধিগুলি কি হিন্দু বা মুসলিম ধর্মের উপাধি? নাকি যে সমাজে আমরা বড় হয়েছি সেই সমাজের ধারাবাহিক বিবর্তনের কস্টিউমে এডপ্ট হউয়া ল্যাংগুয়িজ বা উপমা বা প্রতিকি শব্দ। এগুলোই আমাদের সমাজের নিজস্বতা। এগুলোর প্রত্যেক্টার একটা ছবি আছে। এই ছবিটাই তো তুলে আনছেন আমাদের চিত্র শিল্পিরা। কোনটা করনীয় ভাবে কোনটা বর্জনীয় ভাবে। তারপরে, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অনাচার, শোষণ, বঞ্চনার একটা ছবি তারা আমাদের সামনে তুলে ধরতে চান একটা রূপকের মাধমে। এটা ধর্মীয় হলো কিভাবে? আমাদের ছাত্রছাত্রীদের এগুলোর সাথে বাধ্যতামূলক পরিচিতির মাধ্যমে আমি তো মনে করি জন্মগত দায় শোধ করছে সরকার। যেভাবে আমরা আমাদের সন্তান দের কে আংগুলে ধরে ধরে বাড়ীতে আমার পুর্বপুরুষের ইতিহাস শিখাই। আসলে এই উৎসবটা যখনই ব্যাপকতা লাভ করে তখনই একটি গোস্টির তৎপরতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। পাকিস্থান আমলেও এই উৎসবের বিরোধিতা করা হয়েছিল।
মংগল শোভাযাত্রার কথাটার মধ্যেই তো এর অর্থ নিহিত আছে। পৃথিবীর মানবসভ্যতার প্রতিটি সমাজে শুভ কাজের কিছু সম্মিলিত উদ্যোগ ছিল এবং আছে। এমন কি ধর্মেও আছে। শোভাযাত্রা হল সম্মিলিত ভাবে শুভ কাজে এগিয়ে যাওয়ার আধুনিক রূপ। আমাদের ধর্মেও আছে বাৎসরিক একটা শোভাযাত্রা। এই যে আমরা পায়ে হেঁটে মিনা থেকে আরাফা, আরাফা থেকে মুজদালিফা যাই, এটাও কিন্তু একধরনের যাত্রা। আমাদের এই উপমহাদেশের মুসলিম সমাজে, আশুরার তাজিয়া মিছিল তাও তো একটা শোভাযাত্রা। এগুলোর ব্যাখ্যা কি? আমি শুধু বলতে চাই এগু্লো আমাদের অতীতের যাপিত জীবনের আচার অভ্যাস ঐতিহ্যের আধুনিক পরিবর্তিত রূপ যা হলো আজকের মঙলশোভাযাত্রা। আর একটা কথা । মহাভারত কিন্তু হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ নয়। হিন্দু ধর্মগন্থ হল বেদ। গীতা। প্রাচীন ভরতের একটি মহাকাব্যের নাম হল মহাভারত। যা হিন্দু ধর্মেরও অনেক আগের। এবং হিন্দু ধর্ম ছাড়াও আরো কয়েকটি ধর্মের মানুষের পবিত্র গ্রন্থ হিসাবে মানিত। এই ভরত কিন্তু ভারতবর্ষ নয়। এই জনপদের আদি অতি প্রাচীন ভরত বংশের রাজকাহিনী নিয়ে রচিত একটি শ্লোক গ্রন্থ, যা বিশ্বের সাহিত্যিকরা একটি আদি সাহিত্যকর্ম হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।”

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn