বাঁধ ভেঙে ফসলহানির পর এবার ধান পচে সৃষ্ট এমোনিয়া গ্যাসে মরছে মাছ। হাওরজুড়ে চলছে হাহাকার। মানবেতর জীবন যাপন করছেন হাওরপাড়ের বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে আশার বাণী শোনালেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। বুধবার রাতে ইন্ডিপেনডেন্ট টিভি’র এডিটরস্ পিক অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর জন্য সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমরা গত ৩ দিন ১৬, ১৭, ১৮ এপ্রিল মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমরা আরো কয়েকজন ছিলাম। আমরা এই গোটা অঞ্চলটা হেলিকপ্টারযোগে নিচু ফ্লাই করে দেখে এসেছি খুব কাছে থেকে। এবং আমরা কিশোরগঞ্জের মিঠাইন উপজেলায় একরাত থেকেছি, সুনামগঞ্জ জেলায় এক রাত থেকেছি। সকল স্তরের মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি কথা বলেছেন। আমি ওই এলাকার মানুষ, আমি ওইখানে বড় হয়েছি। আমাদের পূর্বপুরুষরা এই ধরনের বন্যার সাথে মোটামুটি পরিচিত। আমি প্রায়শই ছোটবেলায় এই ধরনের পরিস্থিতির মোকাবেলা নিজেও করেছি। তবে এখন সরকার যেভাবে হাওরের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আগাম পরিকল্পনা করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণ করে। সে বাঁধগুলোর মূল উদ্দেশ্য হল ঢলের প্রথম ধাক্কাটা সামলানো। যাতে ১০-১৫ দিন এক সপ্তাহ টাইম পাওয়া যায়, এইবার যে বন্যা হয়েছে এইটা সে টাইম দেয়নি। কেউ চিন্তাও করতে পারবে না কত পানি হবে। এটা প্রাকৃতিক বিষয়। কোন বৈজ্ঞানিক বলতে পারবেনা কত পানি হবে। সেই সুবাদে এবারকার যে প্রস্তুতি ছিল কোন কিছু টিকে নাই, সব ভেসে গেছে।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন খালেদ মহিউদ্দিন। তিনি প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানের কাছে প্রশ্ন রাখেন, অভিযোগ আছে বাঁধটি যত আগে দাঁড় করানো কথা ছিল, বাঁধটি যত আগে ত্রুটি মুক্ত করার দরকার ছিল, সেটি করা হয় নাই। সেখানে অনেক অবহেলা দেখানো হয়েছে। এই ব্যাপারে আপনি একমত হবেন কি না?প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমি আপনার সাথে একমত। অবহেলা দুর্নীতি ভয়ংকর মাত্রায় ছিল। প্রায়শই এগুলা হয়। এবার ভয়ংকর রকমের দুর্নীতি হয়েছে কারণ দুই ধরনের কাজ করা হয়। কিছু করে স্থানীয় লোকেরা প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে। বেশি ভাগ হয়েছে ঠিকাদারদের মাধ্যমে। ঠিকাদাররা কিন্তু ওই এলাকার মানুষ নন। প্রকল্প কমিটি ওই হাওরপাড়ের মানুষরাই। সুতরাং দুর্নীতি করলেও তাদের মধ্যে একটা ভীতি থাকে মনের মধ্যে যে আমাকে মোকাবেলা করতে হবে। ঠিকাদারদের অনেকেই শহরবাসী। শহরবাসী লোক। তারা সাবলেট দিয়ে দেন, সাব কনট্রাক্ট দিয়ে দেন, তারা প্রায়শই হাওরে যান না। এই অভিযোগ সত্য। আমরা প্রচুর অভিযোগ পেয়েছি এই সম্বন্ধে। এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি অন দ্য স্পট তিনি এগুলো মোকাবেলা, দেখার জন্য বলে এসেছেন। এই বিষয়টা সরকারের উচ্চতম পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। তবে আমি আপনার সাথে একমত অবহেলা, ন্যাগলিজেন্স, দুর্নীতি সকল কিছু জট পাকানো অবস্থায় আমাদেরকে ফেলেছে, হাওরের লোকদেরকে। তবে এইটা বলতেই হবে সত্যের খাতিরে… এই পানি মোকাবেলা করার মতো শক্তি, আমাদের মতো রাষ্ট্র কেন পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রেরই এইভাবে অতর্কিত পানি মোকাবেলার শক্তি নেই। দুর্নীতির প্রসঙ্গে জানতে চান দুর্নীতি কারণে বেনিফিশিয়ারি কারা, এই দুর্নীতি কাদের মাধ্যমে হল এবং কারা এই দুর্নীতি থেকে উপকার পেলেন, লাভ পেলেন – এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বেনিফিশিয়ারি আসলে যারা যাদের হাতে টাকাটা নাড়াচাড়া করানো হয়েছে। তারা এইটার বেনিফিশিয়ারি। এই টাকাটা, অর্থ যাই আছে এইটা খালাস করা বা রিলিজ করার একটা পন্থা আছে সরকারের। সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে কাজটা হয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডই বিভিন্ন এলাকায় কোন বাঁধ হবে, কতটুকু বাঁধ হবে, কত অর্থের প্রয়োজন তারাই নির্ধারণ করেন তাদের প্রকৌশলী দ্বারা। এবং তারাই টাকাটা ডিজবার্স করেন যখন কাজটা হয়ে যায় বা কাজ করার সময় তা ডিজবার্স করেন। আর পিআইসি যেটা বলা হয় সেটা প্রকল্প কমিটি গ্রামের কৃষকদের দিয়ে, চেয়ারম্যান বা মেম্বারদের দিয়ে করা হয়। সেখানে আমাদের মতো আমরা যারা সাংসদ আছি এলাকার, আমাদের একটা ভূমিকা আছে। কিন্তু আমাদের ভূমিকা স্বেচ্ছাচারী ভূমিকা নয়, আমরা যা ইচ্ছা করতে পারবো না। পরিষ্কার পরিপত্র, সরকারি নীতি নির্ধারণ করা আছে আমরা ক্ষমতায় আসার আগে, আমরা এমপি হওয়ার আগে। রুলস করা আছে। সে অনুযায়ী আমরা দু-একজন লোক নমিনেট করতে পারি। কিন্তু চেয়ারম্যান অতিঅবশ্যই ওই বাঁধের কাছের মেম্বারকে হতেই হবে। এইটাই বিধান। সুতরাং অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। দুর্নীতি অবশ্যই পিআইসি করেছে, অবশ্যই ঠিকাদার সাহেবরা করেছেন। যেহেতু ঠিকাদার সাহেবদের মাধ্যমে সিংহভাগ অর্থ, শতকরা ৮০ ভাগ অর্থ আমি মোটা দাগে বলবো তাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে, দেয়া হয়েছে। দুর্নীতিও সেই আনুপাতিক হারে তাদের উপরই পড়বে বলে আমার ধারণা।দুর্গত মানুষের উপকারের জন্য কি করতে যাচ্ছে সরকার এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, আমরা আশা করছি ১০টাকা মূল্যের চাল আগামী সিজন পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যাব। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যে, তিনি সরকারকে বলবেন। যাতে এইটা চলতে পারে। কারণ এটাই তিন জেলায় তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় দাবি ছিল। এছাড়া আরেকটা আছে ওএমএস। ওপেন মার্কেট সেইল। ১৫ টাকা করে কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে প্রত্যেক উপজেলায়। এটাকে বর্ধিত করে ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন ডিলার নিয়োগ করার একটা প্রক্রিয়া আমাদের বিবেচনাধীন আছে। সকল কিছু করা হবে। জিআর কিছু খাদ্য দেয়া অতিদরিদ্রদের। সবকিছুকে সমন্বিত করে আমাদের সরকার সেই শক্তি বা সামর্থ্য সরকারের কাছে আছে, আস্থা আছে আমরা এটা মোকাবেলা করতে পারবো। আমি সরকারের প্রান্তিক কর্মী হিসেবে বলতে পারি, সরকার অবহিত আছেন। এটাকে আমরা সকলের সহযোগিতায়, জনগণের সহযোগিতায় মোকাবেলা অবশ্যই করতে পারবো।প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান আরো বলেন, কিছু জমি আছে উঁচু। সেখানে আমরা রোপা আমনের ব্যবস্থা করতে পারি। আর দেড় দুই মাস পরে রোপা আমনের ব্যবস্থা করা হবে। মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে তিনি আমাকে বলেছেন, কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি হাতে নেবেন। যাতে দরিদ্র যারা এক দুই আড়াই বিঘা জমি করেছিলেন তাদেরকে বিনামূল্যে সার, বিনামূল্যে বীজ, কিছু নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা দিয়ে তিনি তাদেরকে সহযোগিতা করবেন। মাছের কথায় কয়েকটা আইডিয়া এসেছে। প্রচুর সংখ্যক পোনা মাছ সরকারিভাবে কিনে বিভিন্ন হ্যাচারি থেকে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে যদি আমরা হাওরে ছেড়ে দেই এই পানিটা যখন একটু উন্নতি হবে, যখন পানিটা পরিষ্কার হবে তখন আমরা কোটি কোটি বিলিয়নস, হাজার কোটি রেনু পোনা আমরা যদি ছাড়তে পারি, তাহলে আমার ধারণা এই মাছগুলা এক দুই মাস টাইম পেলে মোটামুটি বড় হয়ে যা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn