সুনামগঞ্জের হাওরে হাজার কোটি টাকার ফসলহানির ঘটনার পর বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার আসামি ঠিকাদার সজিব রঞ্জন দাস মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার প্রাথমিক শুনানি শেষে আদেশের জন্য রাখলে পরে তাঁর আইনজীবী আবার আবেদনটি ফেরৎ নিয়ে নেন। এরপর তিনি দ্রুত কাঠগড়া থেকে নেমে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। সজিব রঞ্জন দাস সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি। এবার তিনি সুনামগঞ্জের ৭টি হাওরে ৯ টি ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ পেয়েছিলেন। কিন্তু ২টি বাঁধের কোনো কাজই করেননি। ৩ টি বাঁধে সামান্য পরিমাণে কাজ করেছেন। একারণে তার ৫৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩৯ টাকা কার্য জামানত বাজেয়াপ্ত করেছে পাউবো। দুদুকের মামলার আসামির তালিকায় ১৯ নম্বরে তাঁর নাম রয়েছে। সুনামগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ শহীদুল ইসলাম ঝিনুকের আদালতে সজিব রঞ্জন দাস মঙ্গলবার জামিনের আবেদন করেছিলেন। একই আদালতে মঙ্গলবার কারাগারে থাকা আরেক ঠিকাদার খায়রুল হুদা চপলের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তাঁর জামিনের আবেদনটি অধিকতর শুনানির জন্য আগামি ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ গত ২ জুলাই সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫ কর্মকর্তা, বাঁধের কাজের ৪৬ জন ঠিকাদারসহ ৬১জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ঐ দিনই ঢাকা থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের বরখাস্ত হওয়া সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দিন ও ঠিকাদার মো. বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ১৫ আগস্ট রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আরেক ঠিকাদার খায়রুল হুদা চপলকে গ্রেপ্তার করে দুদক। এই তিনজনের পর আর কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি দুদক। সুনামগঞ্জে দুদকের কৌঁসুলি (পিপি) আইনুল ইসলাম বাবলু জানান, মঙ্গলবার সজিব রঞ্জন দাস সুনামগঞ্জের  জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৭ ও ৪৯৮ ধারায় জামিনের আবেদন করেন (ফৌজদারি বিবিধ মোকদ্দমা নং-৪৮০/২০১৭)। আদালত আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার প্রাথমিক শুনানির পর আদেশের জন্য রাখেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর আসামি পক্ষের আইনজীবী ‘টেইক বেক’ করে আবার আবেদনটি ফেরৎ নিয়ে নেন।
আদালতে বাদী পক্ষে ছিলেন সুনামগঞ্জের সরকারি কৌঁসুলী (পিপি) খায়রুল কবির রুমেন, দুদকের পিপি পরিতোষ চন্দ্র রায় ও আইনুল ইসলাম বাবুল। আসামী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মানিক লাল দে, আজাদুল ইসলাম রতন, আমিনুর রশিদ রনক প্রমুখ।
সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ফসল রক্ষা বাঁধ না হওয়ায় গত এপ্রিল মাসে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার। হাওরে ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn