সন্তানের শিক্ষা জীবন নিয়ে বিপাকে হাওরাঞ্চলের অভিভাবকরা
একে কুদরত পাশা-
এক ফসলের উপর নির্ভরশীল সুনামগঞ্জের মানুষ। এবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঠিবকাদার ও পিআইসির দুর্নীতির কারণে চৈত্র মাসে পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের ধান। একমাত্র ফসল হারিয়ে কৃষকরা যখন দিশেহারা তখন সন্তানের শিক্ষা জীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাওরাঞ্চলের অভিভাবকরা। বিশেষ করে যাদের সন্তান প্রাইভেট স্কুল কলেজে পড়ছে তাদের ভ’গান্তির শেষ নেই। ইতোমর্ধে সঠিক সময়ে বেতন দিতে না পাড়ায় শিশুদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে কিন্ডার গার্টেনগুলো। সঠিক সময়ে বেতন না দিতে পারায় শহরের সৃজন বিদ্যাপিঠ থেকে নিজ সন্তানকে বের করে নিতে বার্ধ হয়েছেন হাছন নগরের কৃষক রিপন জামান। হাওরাঞ্চলের সকল শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে বিনা বেতনে ভর্তির দাবীতে, বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্র ইউনিয়ন।
জানা যায়, সুনামগন্জ শহরের “সৃজন বিদ্যাপীঠ” নামক প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে হাছননগরের রিপন জামানের ছেলে রিশাদ জামান। ১ম সিমেস্টার পরীক্ষার পেপার বিলি করার সময় শ্রেণির সকলের পেপার দিলেও এপ্রিল মাসের বেতন না দেওয়ায় রিশাদ জামানের পেপার দেননি শিক্ষকরা। সে বাড়িতে এসে অপমানে কান্নাকাটি করে তার মাটির ব্যাংক ভেঙে ফেলে বেতনের জন্য। যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল বলেন, বাচ্চাকে চাপ না দিলে নাকি অভিভাবক আসেন না। পরের মাসে বিলম্ব ফিসহ বেতন প্রদানের সুযোগ থাকলেও বেতনের জন্য বাচ্চাকে মানসিকভাবে চাপ দেওয়া হয় কেন এর কোন উত্তর মিলেনি। রিপন জামান জানান, ছেলেকে ক্লাসের বন্ধুদের সামনে অপমান করায় সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। সে এ স্কুলে যেতে নারাজ তাই বাধ্য হয়ে স্কুল ত্যাগে পরিত্যাপত্র নিয়ে এসেছি। এখন অন্য স্কুলে ভর্তি করবো।
শুধু সিজন বিদ্যাপিঠ নয় এমন অভিযোগ রয়েছে জেলার বিভিন্ন স্কুলের প্রতি। দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের বাসাকরচ গ্রামের শাহেরুল আলম জাননা, আমাদের গ্রামে ২৫-৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে যারা রফিনগর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করে। গ্রাম থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ইঞ্জিন নৌকা। এবার আমাদের ঘরে খাবার নেই তাই বাচ্ছাদের নৌকা ভাড়া দিতে না পাড়ায় তারা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না। বিদ্যালয় থেকে জানানো হচ্ছে বিদ্যালয়ে না গেলে ৫০ টাকা করে জড়িমানা দিতে হবে। সব মিলিয়ে হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন এখন অনিশ্চিত।