সমঝোতায় শেষ হলো সাউথইস্টের শিক্ষার্থী-কর্তৃপক্ষ বৈঠক
সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উভয় পক্ষের মধ্যে রবিবার (৮ অক্টোবর) রাতে অনুষ্ঠিত প্রায় দুই ঘণ্টার এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। রাত ১০টার পর বৈঠক শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থী মো. রিফাত হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।রিফাত হাসান বলেন, ‘বৈঠকে প্রতিটি দাবি নিয়েই কথা হয়েছে। আমাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আগামীকাল (সোমবার) থেকে আবার নিয়মিত ক্লাস শুরু করবো।’
এর আগে, রাত পৌনে ৮টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ও কোহিনূর কেমিক্যালসের মালিক রেজাউল করিমের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যালয় তেজগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাড়াও ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার, গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরমান আলী গুলশান জোনের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা রিফাত হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি ছিল উপাচার্যের অপসারণ। চেয়ারম্যান আমাদের বলেছেন, আগামী ছয় মাস উনাকে (উপাচার্য) অবজার্ভেশনে রাখা হবে। তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগের তদন্ত করা হবে। তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস পর তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। বরখাস্ত হওয়া আট শিক্ষকের মধ্যে ছয় জনকে রিঅ্যাসেসমেন্টের ভিত্তিতে পুনর্বহালে সম্মত হয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে লেখা চুরি ও শিক্ষার্থীর অর্থ আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক প্রাথমিকভাবে বরখাস্ত থাকবেন বলে জানিয়েছে কর্তৃাপক্ষ। আমরাও তাদের এই কথা মেনে নিয়েছি।’
এর বাইরে ক্যান্টিন চালু করা, ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়া, রিডিং রুম ও কমন রুম স্থাপন এবং ১০টি ক্লাবে ক্লাবের সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে কর্তৃপক্ষ এক মাস সময় নিয়েছে বলে জানান রিফাত। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের বলা হয়েছে, আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে আমাদের এই দাবিগুলো পূরণ করা হবে। আমরা তাদের আশ্বাসে সন্তুষ্ট হয়েছি। তাই আগামীকাল (সোমবার) থেকে ফের ক্লাস শুরু করছি।’
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী সেকশন অফিসার আব্দুস সবুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা আগামীকাল (সোমবার) আমরা লিখিতভাবে জানাবো।’ বৈঠকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে কিছু বলেননি আব্দুস সবুর। তবে গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রশাসন ও ছাত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।’
উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত ২ অক্টোবর ক্লাস শুরুর পর তারা জানতে পারেন, বিবিএ ক্যাম্পাসের আট জন শিক্ষককে বিনানোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এরপরই তারা শিক্ষকদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও উপাচার্যের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে আজ রবিবার দুপুরে বিবিএ ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে ক্যাম্পাসের অন্যান্য ফটকেও তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা গেটের তালা খুলে দেন। তবে গেটের সামনেই অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।