সরকারি চাকরিজীবীদের বিধবা স্ত্রীদের জন্য সুখবর
বার্তা ডেস্ক:: এবার দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের বিধবা স্ত্রী অথবা বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তানদের জন্য থাকছে বিরাট সুখবর। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এই সুখবরের কথা জানিয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগের ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর পেনশন পুনঃস্থাপিত হয়ে থাকলে (যারা আবারো পেনশন সুবিধায় ফেরত এসেছেন) তার মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী বা বিপত্নীক স্বামী ও প্রতিবন্ধী সন্তান (যদি থাকে) পুনঃস্থাপিত পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন। এছাড়া তাদের চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা প্রাপ্যতার বিষয়ে অর্থ বিভাগের ২০১৭ সালের ৩ আগস্টের প্রজ্ঞাপন অনুসরণীয় হবে, অর্থাৎ তারা পেনশন সুবিধার পাশাপাাশি চিকিৎসা ও উৎসব ভাতাও পাবেন। এর আগে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবরের অর্থ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের আবারও পেনশন সুবিধায় ফিরিয়ে আনার কথা হয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারিগণের অবসর গ্রহণের তারিখ হতে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্তের পর তাদের পেনশন পুনঃস্থাপন করা হবে। কর্মচারীর এলপিআর/পিআরএল যে তারিখে শেষ হয়েছে তার পরদিন থেকে উক্ত ১৫ বছর সময় গণনা করা হবে। আর যিনি এলপিআর/পিআরএল ভোগ করেননি তার ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের তারিখ হতে উক্ত ১৫ বছর সময় গণনাযোগ্য হবে।’
কী পদ্ধতি ও নিয়মে এই পেনশন নির্ধারণ করা হয়েছে তাও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছে, ‘ধরা যাক সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর এলপিআর শেষ হয়েছে ২০০২ সালের ৩০ জুন। তার অবসরের পর হতে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্ত হয়েছে ২০১৭ সালের ১ জুলাই। ওই কর্মচারী যদি ১ নং গ্রেডভুক্ত হন তা হলে জাতীয় বেতন স্কেল, ১৯৯৭ অনুযায়ী তার বেতন ১৫ হাজার টাকা (নির্ধারিত হওয়ায় তার মাসিক নিট পেনশনের পরিমাণ হবে (১৫,০০০দ্ধ৮০%) ২ = ৬,০০০ টাকা। জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৫ অনুযায়ী মাসিক ১০০১ টাকা হতে তদূর্ধ্ব পরিমাণ নিট পেনশন গ্রহণকারীর মাসিক পেনশন ২৫% হারে বৃদ্ধি হওয়ায় তার মাসিক নিট পেনশন হবে ৬,০০০+(৬০০০দ্ধ২৫%) = ৭,৫০০ টাকা। আবার জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯ অনুযায়ী ৬৫ বছর ঊর্ধ্ব বয়সের পেনশনভোগির নিট পেনশনের পরিমাণ ৫০% বৃদ্ধি হওয়ায় তার মাসিক নিট পেনশন হবে ৭,৫০০+(৭,৫০০দ্ধ৫০%)= ১১,২৫০ টাকা। একইভাবে জাতীয় বেতনস্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী ৬৫ বছর ঊর্ধ্ব বয়সের অবসরভোগীর নিট পেনশনের পরিমাণ ৫০% বৃদ্ধি হওয়ায় ০১-০৭-২০১৭ তারিখে তার মাসিক নিট পেনশন হবে ১১,২৫০+(১১,২০৫দ্ধ৫০%) = ১৬,৮৭৫ টাকা। সুতরাং ২০০২ সালের ৩০ জুন বা তার পূর্বে এলপিআর শেষ হয়েছে ১ নম্বর গ্রেডের এমন শতভাগ পেনশন সমপর্ণকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর ০১-০৭-২০১৭ তারিখে মাসিক নিট পেনশন হবে ১৬,৮৭৫ টাকা।
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়মিত পেনশনারগণের ন্যায় শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরভোগিগণের ন্যূনতম মাসিক পেনশন হবে ৩ হাজার টাকা। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর ০১-০৭-২০১৭ তারিখে বা তার পরবর্তী সময়ে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) যে পেনশন নির্ধারিত হবে, তার ওপর প্রতি বছর ১ জুলাই তারিখে ৫ ভাগ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়া হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ১ নং গ্রেডের কর্মচারীর ০১-০৭-২০১৭ তারিখে মাসিক নিট পেনশনের পরিমাণ ১৬,৮৭৫ টাকা। প্রতি বছর ১ জুলাই তারিখে ৫% হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদেয় হওয়ায় ০১-০৭-২০১৮ তারিখে তার মাসিক নিট পেনশন হবে ১৬,৮৭৫ + (১৬,৮৭৫দ্ধ৫%) = ১৭,৭১৮.৭৫ টাকা। এই সুবিধা গত বছরের ১ জুলাই (২০১৭) থেকে কার্যকর হবে এবং তার পূর্বের কোনো আর্থিক সুবিধা প্রদেয় হবে না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ সুবিধার আওতায় সর্বমোট প্রায় ২০ হাজার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী ধারাবাহিকভাবে প্রবেশ করবেন। এ জন্য সরকারের পেনশন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৪৫ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শতভাগ’ পেনশন বিক্রি বা সমর্পণ ব্যবস্থা চালু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ জুন এ পদ্ধতি বন্ধ করা হয়। পাশাপাশি একই বছরের ১ জুলাই থেকে পেনশনের ৫০ শতাংশ সরকারের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণের বিধান চালু করা হয়। শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম গত বছর পেনশন সুবিধা ফেরত পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করে। পরবর্তীকালে অর্থমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরামের নেতারা এ বিষয়ে স্মারকলিপি দেন। তাদের আবেদন পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের আবার পেনশন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনেন।