সাংসদ রতনকে তুলোধোনা করলেন শামীম
সুনামগঞ্জঃঃ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনে নিজের এক সময়ের ব্যক্তিগত সহকারি, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক শামীম আহমেদ মুরাদ বক্তব্য দেবার সময় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে ‘চাঁদাবাজদের গডফাদার’ বলার বিষয়টি বুধবার ছিল সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-তাহিরপুর) আসনসহ জেলাজুড়ে আলোচনার বিষয় অর্থাৎ টক অব দ্য সুনামগঞ্জ। শামীম আহমদ মুরাদের বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড ফেইসবুকেও ভাইরাল হয়েছে। এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন অবশ্য বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা ষড়যন্ত্র করে এই কাজ করিয়েছেন।’ তিনি দাবি করেন মিথ্যা বক্তব্য কেবল নয় এই রক্তব্য ভাইরালের ক্ষেত্রেও ষড়যন্ত্র রয়েছে। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীর হাসনরাজা মিলনায়তনে প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ মুরাদ বলেন, আমি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলাম। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছিলেন। কিন্তু সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন আমার বিরোধিতা করেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ বিলকিছ ও আপন ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেনকে বিদ্রোহী প্রার্থী করেন। সাংসদ রতন নির্বাচনকে প্রভাবিত করায় তাঁর ভাই জয়ী হয়েছে। দলীয় প্রতীক নৌকার পরাজয় হয়েছে। নির্বাচনী এলাকা তাহিরপুরের জাদুকাটা নদীতে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শামীম আহমেদ মুরাদ বলেন, জাদুকাটা নদীতে চাঁদাবাজির খবর পত্রপত্রিকায় এসেছে। এসব চাঁদাবাজির গডফাদার হচ্ছেন সাংসদ রতন। তিনি সব নিয়ন্ত্রণ করেন। সাংসদ বিএনপি-জামায়াতের লোকদের দলে টেনেছেন। তিনি নিজেও নব্য আওয়ামী লীগার। ২০০৮ সালে দলে এসেছেন। শামীম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘সাংসদ রতন ২০০৮ সালের আগে আওয়ামী লীগ করেছেন প্রমাণ করতে পারলে আমি জুতার মালা গলায় দিয়ে দল থেকে বের হয়ে যাব।’
শামীম আহমেদ মুরাদ এসব যখন বলছিলেন, তখন সভামঞ্চে বসে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, বিশেষ অতিথি সুনামগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান প্রমুখ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের জেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মতিউর রহমান। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সকল উপজেলাসহ উপজেলার সমমানের ১৪ ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ৮৮ ইউনিয়নের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত ছিলেন।
শামীম আহমদ মুরাদের এই বক্তব্য তাৎক্ষণিক ফেইসবুকে ভিডিও ভাইরাল হতে থাকে। বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এই বক্তব্যের আংশিক ছাপা হয়। নিজের সাবেক পিএস’এর এমন বক্তব্য বুধবার ছিল সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নিজের নির্বাচনী এলাকাসহ সুনামগঞ্জ শহরে আলোচনার বিষয়। তবে নির্বাচনী এলাকায় এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে কোন কর্মসূচি বা বিবৃতিও দেন নি দায়িত্বশীল কোনো নেতা। ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস অবশ্য জানিয়েছেন, তারা শামীম আহমদ মুরাদের বক্তব্য আমলেই নেন নি। ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগে শামীম আহমদ মুরাদের বক্তব্য সমর্থন করার মতো ২ জন রয়েছেন। একজন রফিকুল হাসান চৌধুরী এবং আরেকজন শামীম আহমদ মুরাদ। আর কেউ তার বক্তব্য সমর্থন করেন না। সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন শামীম আহমদ মুরাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, শামীম আহমদ মুরাদকে দিয়ে এই বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছে। পরে বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ এবং সিলেট-সুনামগঞ্জের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহ্রিয়ার এই কাজ করিয়েছেন। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য’এর স্বামী শাহরিয়ার বিপ্লবও এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত। উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কারও এই প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য দেবার কথা নয়। অথচ. তিন নম্বর যুগ্ম সম্পাদক মুরাদকে ওখানে বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছে। শামীম আহমদ মুরাদ কখনোই আমার ব্যক্তিগত সহকারী ছিল না। সে পেট্রোল বিক্রির দোকানদারী করতো। পরে আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পায়েল ট্রেড কর্পোরেশনে তাকে চাকুরি দিয়েছিলাম। সে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিএস পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করতো বলে গত জানুয়ারি মাসেই আমি তাকে চাকুরিচ্যুত করি। আমি ব্যথিত, মর্মাহত। দোষ না করেও দোষী বানানোর চেষ্টা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহ্রিয়ার বলেন, আমাদের ষড়যন্ত্র করার কী আছে। ষড়যন্ত্র হয় গোপনে, মুরাদ বক্তব্য দিয়েছেন প্রকাশ্যে, এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সামনে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বক্তব্য দেন নি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিসকে শোকজ করা হয়েছে। এই অবস্থায় শামীম আহমদ মুরাদকে বক্তব্য দেবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, যুগ্মসম্পাদক সকলেই একই সম্মানের, গঠনতন্ত্রে এক, দুই বা তিন নম্বর সম্পাদক উল্লেখ নেই। রতন ধর্মপাশার সভাপতি হিসাবে বক্তব্য দিলে, অন্য কাউকে বক্তব্য দিতে হতো না। রতন অন্ধকারে খুঁজতেছেন, আসলে ষড়যন্ত্রের কিছু হয় নি।