বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ, অাধুনিক সিলেটের রূপকার, সিলেটের মাটি ও মানুষের নেতা সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান। আকস্মিক এ সড়ক দুর্ঘটনা প্রিয় সিলেটের মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তাঁকে। প্রয়াণের দীর্ঘদিন পর আজোও এম. সাইফুর রহমান গেঁথে অাছেন মানুষের মনমনিকোঠায়। তাঁর ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর)। বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ এম সাইফুর রহমানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পারিবারিক ও দলীয়ভাবে ঢাকা, মৌলভীবাজার ও সিলেটে পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করা হবে। সাইফুর রহমানের জন্ম ১৯৩২ সালের ৬ই অক্টোবর, মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আবদুল বাছির, মা তালেবুন নেছা। ৩ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। মাত্র ৬ বছর বয়সে তাঁর পিতা মারা যান। সে সময় তাঁর অভিভাবকের দায়িত্ব নেন চাচা মোহাম্মদ সফি। শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে তিনি ১৯৪০ সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান। সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তার। ব্যারিস্টারির পরিবর্তে পড়েন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি। ১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস ফেলোশিপ অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালের ১৫ই জুলাই বেগম দূররে সামাদ রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ৩ পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের জনক। ২০০৩ সালে তাঁর স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। এম সাইফুর রহমান ২০০৯ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁর শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাহারমর্দনে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) প্রতিষ্ঠালগ্নে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তাঁকে আপন করে ডাকলেন দল গঠনে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হতে। তিনি জিয়াউর রহমানের ডাকে যোগ দিলেন বিএনপিতে। রাজনীতিতে এলেন, আলোকিত করলেন, আলোকিত হলেন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের ৮ই জুন তিনি সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক বাজেট পেশকারী হিসেবে রেকর্ড গড়েন।
তিনি দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ-বিদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। জীবদ্দশায় প্রয়াত এই নেতা দেশ ও বৃহত্তর সিলেট নিয়ে এক উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা করেছিলেন। তাঁর অনেকগুলো বাস্তবায়ন হলেও পুরোটা বাস্তবায়ন করার আগেই নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। ৮ পূর্বের এমন দিনে হঠাৎ এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ, স্তব্ধ হয়ে যায় তাঁর দেখা উন্নয়ন মহা পরিকল্পনার স্বপ্ন।সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার সুবাদে বর্তমান সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন রাস্তা, স্থাপনা আজোও সাইফুর রহমানকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বর্তমান সিলেটের সিংহভাগ উন্নয়নই সাইফুর রহমানের সময়ে হয়েছিল। সিলেটের উন্নয়নে সাইফুর দলমত নির্বিশেষে কাজ করে গেছেন। তাইতো আজোও তিনি সিলেটবাসীর মাঝে চিরভাস্বর, অম্লান।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
২৪৩ বার