সিলেটে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা : নিরাপত্তা ও যাতায়াতে দুর্ভোগ
মীর্জা সোহেল : প্রকৃতির অকৃপণ রূপ-লাবণ্যে ঘেরা সিলেট। পর্যটন শিল্পে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভারত সীমান্তঘেরা অঞ্চলটি প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের আঁচলে ঢাকা। যেখানে পর্যটকরা মুগ্ধ হন, প্রেমে পড়েন শীতল প্রকৃতির এই লীলাভূমিতে। সিলেটের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রকৃতির রূপ-লাবণ্যের অপূর্ব সৌন্দর্যের ভান্ডার। এখানকার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক শোভা অতি সহজে মুগ্ধ করে পর্যটকদের। কিন্তু সৌন্দর্যের এই লীলাভূমির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অন্তত অর্ধশত তাজা প্রাণের সমাধি ঘটেছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে ক্রমাগত প্রাণহানি বাড়ছেই। বছর দুয়েক থেকে এসব স্থানে যাওয়ার সড়কগুলো ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরপুর। কোথাও কোথাও খানাখন্দ কয়েক ফুট পর্যন্ত গভীর। চলতি মৌসুমে টানা বৃষ্টিপাতে এসব সড়কের অবস্থা আরও খারাপ। যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচলের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা। এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন- রাস্তাঘাট জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও তদারকি রয়েছে। শীঘ্রই যাতায়াতের সমস্যা দূর হবে। প্রকৃতি কন্যা সিলেটকে আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।
সিলেটের প্রাকৃতিক লাবণ্যভরা স্থানগুলোর মধ্যে- গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত দেশের একমাত্র মিঠাপানির জলারবন (সোয়াম্প ফরেস্ট) রাতারগুল, প্রকৃতির অপ্সরাখ্যাত বিছনাকান্দি, অপার সৌন্দর্য্যমন্ডিত গ্রাম পাংথুমাই ও বড়হিল ঝর্ণা, প্রকৃতিকন্যা জাফলং, কোম্পানীগঞ্জে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারী, জৈন্তাপুর উপজেলায় নীলনদ খ্যাত লালাখাল, কানাইঘাটে প্রকৃতির লোভছড়ানো ‘লোভাছড়া’ চা বাগান, পাথর অঞ্চল ও ঝুলন্ত ব্রিজ, ফেঞ্চুগঞ্জের হাকালুকি হাওর, শহরতলীর লাক্কাতুরা ও মালনীছড়া চাবাগান ও খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান। সিলেট জেলার বাইরে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, চুনাপাথর, বালি ও পাথর সমৃদ্ধ সীমান্তবর্তী তাহিরপুরের জাদুকাটা নদী, মৌলভীবাজারের মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হামহাম জলপ্রপাত, প্রকৃতির রাণীখ্যাত শ্রীমঙ্গল চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জের মাধপুর লেক, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, দেশের সর্ববৃহৎ গ্রাম বানিয়াচং গ্রাম আপনার ভ্রমণকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হওয়া সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোর অনেকগুলোরই কোনো কর্তৃপক্ষ নেই, পর্যটন কর্পোরেশনেরও নিয়ন্ত্রণ বা দেখভাল নেই ওই সব স্পটে। ফলে অরক্ষিত অবস্থাতেই রয়েছে এগুলো। কক্সবাজারের আদলে সিলেটে পর্যটন পুলিশের কার্যক্রমও সীমিত। এ অবস্থা বহাল থাকলে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর প্রকি ভ্রমণপিপাসুরা উৎসাহিত হবেন না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক মুক্তাদীর আহমদ বলেন, সিলেটে অসংখ্য নান্দনিক পর্যটন স্পট রয়েছে। পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে এগুলোর উন্নয়ন দরকার। এতে পর্যটকরা আকৃষ্ট হবে, সরকারের রাজস্ব বাড়বে। তাই স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া। অপার সম্ভাবনা সত্তে¡ও সিলেটে পর্যটন শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটছে না। পর্যটন নগরী হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়া, নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা, দুর্বল অবকাঠামো ও উদ্যোগের অভাবে এখনো সেই অনুপাতে আসছেন না দেশী-বিদেশী পর্যটক। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও কেবল পরিকল্পনার অভাবে বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। সরকারের সদিচ্ছাই বদলে দিতে পারে সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা- এমন দাবি পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের।