সিলেটে বৈধ রেলক্রসিং ৭২টি, অবৈধ ১৬৭টি
অবৈধ রেলক্রসিংয়ের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা, এক বছরে ৪৪ মৃত্যু
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় রেল পথের উপর দিয় গড়ে ওঠেছে অসংখ্য গ্রাম্য রাস্তা। এসব রাস্তায় অবৈধভাবে নির্মান করা হয়েছে রেলক্রসিং। নেই কোন সিগনালম্যান। অনুমোদনবিহীন এসব রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়েও পার হচ্ছেন মানুষ, পার হচ্ছে গাড়ি। এতে বেড়েছে রেল দুর্ঘটনার ঝুঁকি। নিয়ম অনুযায়ী কোন সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ রেল লাইনের উপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে হলে রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রেল ক্রসিংয়ের উভয় পাশে গেট নির্মাণসহ রেল কর্তৃপক্ষের কাছে ১০ বছরের জন্য কম পক্ষে তিনজন গেটরক্ষীর মজুরি মজুদ করতে হয়। তবে সিলেট বিভাগে রেল লাইনের উপর দিয়ে রাস্তাতৈরিতে মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এসব রাস্তাকে অবৈধ বা অনুমোদনবিহীন বললেও বন্ধ করতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না । ফলে দিন দিন এসব রাস্তা বেড়েই চলছে। রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনবিহীন এসব রাস্তার কোন সঠিক তথ্যও নেই। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুমোদনবিহীন এসব রাস্তা বন্ধ করে দিলেও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে স্থানীয় বাসিন্দারা পুনরায় তৈরি করে। তাই চেষ্টা করেও এসব রাস্তায় চলাচল স্থায়ী ভাবে বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। রেলওয়ে সিলেট বিভাগের রেলপথ প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগে মোট রেল ক্রসিং ২৩৯টির মধ্যে মাত্র ৭২টি রেল ক্রসিং হচ্ছে । বাকি ১৬৭টি রেলক্রসিংই অবৈধ। তবে সিলেট বিভাগে মোট ১৬৭টি অবৈধ রেল ক্রসিংয়ের বিষয়ে দ্বিমত করেছেন রেলওয়ে বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী-২ (ঢাকা) আহসান জাবির। তিনি বলেন, ‘সিলেট বিভাগে মোট রেল গেট ৯৬টি। এর মধ্যে মাত্র ২০টি গেট অনুমোদনবিহীন বা অবৈধ’। শহরতলীর বেশ কয়েকটি অনুমোদনবিহীন রেলক্রসিংয়ে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ‘সাবধান সামনে রেল পারাপার, সামনে রেলপথ, ধীরে চলুন সামনে রেল ক্রসিং’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড টানানো থাকলেও এসব রেল ক্রসিংয়ের একটিতেও নেই সিগনালম্যান। ফলে নিজ দায়িত্বে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন জনসাধারণ, পার হচ্ছে যানবাহন।
সিলেট বিভাগের সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে পুলিশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে সিলেট বিভাগে ট্রেনে কাটাপড়ে প্রাণহানি ঘটেছে ৪৪টি। এর মধ্যে রেলওয়ে থানা সিলেটের আওতায় ১৮টি, কুলাউড়া থানার আওতায় ৬টি, শ্রীমঙ্গল থানার আওতায় ২০টি প্রাণহাণি ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে থানা পুলিশ। যার বেশির ভাগই রেল পথের উপর দিয়ে চলাচলের সময় ট্রেনে কাটাপড়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। রেলওয়ে সিলেট বিভাগের রেলপথ প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ১৬৭টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে সিলেট জেলায় ৫৩টি, মৌলভী বাজার জেলায় ৪২টি, হবিগঞ্জ জেলায় ৫৯টি, সুনামগঞ্জ জেলায় ১৩টি। যা কোন রকম অনুমোদন ছাড়াই স্থানীয় বাসিন্দারা চলাচলের জন্য গড়ে তোলেছেন। রেলওয়ে বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী-২ (ঢাকা) আহসান জাবির বলেন, ‘কোন জেলায় কতটি অবৈধ রেল ক্রসিং বা অনুমোদনবিহীন রেল গেট আছে তার কোন সঠিক তথ্য দিতে পারবো না। তবে এসব অনুমোদনবিহীন রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এসব ক্রসিং অনুমোদিত করে সিগনালম্যান দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে’। অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, এরকম অনেক গেট আছে যা আমরা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে স্থানীয় বাসিন্দারা এগুলো পুনরায় তৈরি করেছে। এসব গেটের ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে এজহার দেওয়া হয়েছে। এখন এটির প্রয়োগ করা পুলিশের কাজ। তবে পুলিশ প্রশাসন এজহারের বিষয়টি অস্বিকার করছে। প্রশাসন বলছে এরকম কোন এজহার পাওয়া যায়নি।
সিলেটের রেলওয়ে থানার ওসি মো. জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, অবৈধ বা অনুমোদনবিহীন কোন রেল ক্রসিংয়ের ব্যাপারে কোন এজহার আমি পাইনি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এজহার দায়ের করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। রেলওয়ে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, গত আগস্ট মাসে আমি এই থানায় দায়িত্ব পেয়েছি। এখনো এরকম কোন লিস্ট বা অভিযোগ পাইনি। এগুলো মূলত রেলওয়ে কর্তৃৃপক্ষ নিজেরা কাঁটাতারের বেড়া বা দেয়াল নির্মাণ করে বন্ধ করে। প্রয়োজনে আমাদের সহযোগীতা নেয়। রেলওয়ে কুলাউড়া থানার ওসি মো. রাসেল মাহমুদ বলেন, এসব রেল ক্রসিং স্বউদ্যোগে বন্ধ করার এখতিার আমাদের নেই। কেবল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এজহার দিলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। একই কথা বলেছেন রেলওয়ে আখাউড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী। তিনি বলেন “ আমাদের কাছে এরকম কোন অভিযোগ আসেনি। এরকম কোন অভিযোগ আসলে আমরা সাথে সাথে পদক্ষেপ নেই। তাছাড়া এটি মূলত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাজ বলে জানান তিনি”।