ওয়েছ খছরু-
ব্যবসায়ী মার্জিয়া বেগম রুমার মামলায় ফের তোলপাড় শুরু হয়েছে সিলেট নগরীর অভিজাতপাড়া উপশহরে। এবারও রুমার মামলায় আসামির কাঠগড়ায় আলোচিত যুবলীগ নেতা শামীম ইকবাল। সঙ্গে উপশহরের ‘নিয়ন্ত্রক’ আরো কয়েক জন যুবলীগ নেতাও। সম্প্রতি দায়ের করা এই মামলা নিয়ে গতকাল পাল্টাপাল্টি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে। ব্যবসায়ী রুমা আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সকালে  স্মারকলিপি দেন। আর দুপুরে গিয়ে রুমার মামলাকে মিথ্যা দাবি করে স্মারকলিপি দিয়েছেন ব্যবসায়ীদের নামে উপশহর ‘নিয়ন্ত্রক’ কয়েকজন নেতা।

 

এদিকে শামীম ইকবাল ও রুমার দ্বন্দ্বে অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন শাহজালাল উপশহরের ব্যবসায়ীরা। তারা এই দ্বন্দ্ব, মামলা-পাল্টা মামলা নিরসনে পুলিশ প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগের দিকে তাকিয়ে আছেন। সিলেটের উপশহরের ব্যবসায়ী মার্জিয়া বেগম রুমা। গত কয়েক বছর ধরে উপশহরের মেইন রোডে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। অন্যদিকে শামীম ইকবাল হচ্ছেন সিলেটের আলোচিত যুবলীগ নেতা। উপশহরে বিতর্কিত ঘটনা ঘটলেই জড়িয়ে পড়েন শামীম ইকবাল। আলোচনায় আসে তার নাম। এছাড়া যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। এ কারণে উপশহরের নানা ঘটনায় শামীম ইকবাল হস্তক্ষেপও করেন। নিজের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা চালান। প্রায় এক বছর ধরে উপশহরের ই-ব্লকের ব্যবসায়ী রুমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শামীম ইকবালের। রুমা জানিয়েছেন, চাঁদাবাজির ঘটনায় প্রতিবাদী হয়ে উঠলে তিনি শামীম ইকবালের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ান। এরপর থেকে উপশহরের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠলে শামীম ইকবাল তাকে দমন করতে তার কলেজপড়ুয়া ছেলে তামিম আহমদকে আসামি করে ২২ দিন কারাবরণ করিয়েছে। এর আগে উপশহরের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি সহ নানা ঘটনার কারণে তিনি শামীম ইকবাল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছিলেন। এই দুটি মামলা বর্তমানে পুলিশের দুটি সংস্থার তদন্তে রয়েছে। এতোসব ঘটনার পরও উপশহরে পরিবেশ স্বাভাবিক হচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে উপশহরের মেইন রোডে রুমা বেগমের দোকানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। উপশহরের যুবলীগ ক্যাডার সাব্বির আহমদ কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার দিন গত ২১শে নভেম্বর এ ঘটনা ঘটে। রুমার ওয়ান অ্যান্ড হান্ড্রেড নামের দোকানটিতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় তারা ক্যাশও লুট করে। এ ঘটনার মীমাংসার জন্য প্রথমে ব্যবসায়ীরা এবং পরে এলাকার মানুষ সমঝোতার চেষ্টা চালালেও বিষয়টি সমাধানে যায়নি। এক পর্যায়ে রুমা এ ঘটনায় শামীম ইকবালকে প্রধান আসামি করে শাহপরান (রহ.) থানায় মামলা করেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের পর গত ৪ঠা ডিসেম্বর মামলাটি পুলিশ রেকর্ড করে আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মামলা দায়েরের পর প্রকাশ্যে না এলেও শামীম ইকবাল ও তার লোকজন এলাকায়ই অবস্থান করছে বলে অভিযোগ করেছেন রুমা। রুমার দায়ের করা মামলার অন্য আসামিরা হলেন- উপশহরের ই ব্লকের বাসিন্দা সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু, ই ব্লকের বাসিন্দা সৈয়দ মাহজারুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা নাহিদুর রহমান সাব্বির, যুবলীগ নেতা জাকির আলম জাকির, ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন, ছাত্রলীগ কর্মী কাওছার আহমদ, হাজী জুবায়ের হোসেন, ইসলাম উদ্দিন, রায়হান আহমদ, মোশাহিদ আহমদ, আমিন উদ্দিন, মোমেন আহমদ, ফজলুর রহমান, হুমায়ূন রশীদ সুমন ও আকবর হোসেন। মামলার এজাহারে রুমা বেগম দাবি করেছেন- গত ২১শে নভেম্বর আসামিরা কয়েকটি মোটরসাইকেল ও দুটি সিএনজি নিয়ে তার দোকানে আসে। এ সময় তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এক পর্যায়ে তারা দোকানের ভেতরে ঢুকে তার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের দাবি মতো চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে সন্ত্রাসীরা তার দোকানে ভাঙচুর চালায়। এ সময় তার দোকানে প্রায় দুই লাখ টাকার মালামালের ক্ষতিসাধন করে। এবং যাওয়ার সময় তার দোকান থেকে নগদ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা লুটে নিয়ে যায় বলে দাবি করেন রুমা। এ ঘটনায় কয়েক দিন পর রুমা শাহপরান থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তদন্তে নামে। এবং প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহপরান থানার ওসি আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযানে রয়েছে। এদিকে এ মামলা দায়ের করার পর ফের উপশহরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। রুমা প্রতিবাদী হয়ে একের পর এক মামলা দায়ের করলেও আসামিরা গ্রেপ্তার হয়নি। এ জন্য ক্ষুব্ধ রুমা গতকাল সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে তিনি দাবি করেন আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তিনি ও পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছেন। তিনি জানান, মুহিবুর রহমান মিছলু, শামীম ইকবালরা উপশহরে ভুয়া ব্যবসায়ী সমিতির নামে অরাজকতা চালাচ্ছে। তাদের কারণে উপশহরের ব্যবসায়ীরা তটস্থ বলে দাবি করেন তিনি। ওদিকে রুমার বিরুদ্ধে গতকাল দুপুরে সিলেটের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে শামীম ইকবালের লোকজনও গিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগে তারা রুমার দায়ের করা মামলা মিথ্যা ও অসত্য বলে দাবি করেন। এজন্য তারা ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বলেন, উপশহরের শান্তিশৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উপশহরের ই ব্লকের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহিবুর রহমান মিছলু জানিয়েছেন, রুমার কারণে উপশহরের ব্যবসায়ীরা অনিরাপদ হয়ে উঠেছেন। তিনি একের পর এক মামলা দিয়ে গোটা উপশহরকে অশান্ত করে তুলেছেন। এখন তার দ্বারা উপশহরের ব্যবসায়ীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান। এ জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। উপশহরের ডি ও সি ব্লকের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ জানিয়েছেন, ঘটনাটি বিব্রতকর। শামীম ইকবাল ও রুমা বেগমের দ্বন্দ্বে ব্যবসায়ীরা অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন। বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রয়োজন। এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে বিবদমান দুই পক্ষকেই শান্ত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn