বার্তা ডেক্সঃঃ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তদানীন্তন সিলেট জেলার অন্তর্গত হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জও পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। এখানেও অসংখ্য মুক্তিকামী ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস সদস্যরা। পরবর্তীতে জেলায় পরিণত হওয়া সুনামগঞ্জে রয়েছে ছোটবড় ১১টি বধ্যভূমি। এসব বধ্যভূমি চিহ্নিত করার কাজ শেষ হলেও এখনও অনেক বধ্যভূমিতে নির্মিত হয়নি কোনও স্মৃতিস্মারক। আবার কয়েকটি বধ্যভূমিতে লাগানো হয়েছে শুধু নামফলক। মুক্তিযুদ্ধের নির্মমতার সাক্ষী এসব বধ্যভূমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
জেলার অন্যতম বধ্যভূমিগুলো হলো শহরের পিটিআই বধ্যভূমি, জগন্নাথপুরের শ্রীরামসী ও রানীগঞ্জ বধ্যভূমি, ছাতকের মাধবপুর বধ্যভূমি, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় পিটিআই বেরিগাঁও বধ্যভূমি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জয়কলস বধ্যভূমি, দোয়ারাবাজারের নৈনগাঁও বধ্যভূমি ও শ্রীপুর বধ্যভূমি, দিরাইয়ের শ্যামারচর বধ্যভূমি, তাহিরপুরের ট্যাকেরঘাট বধ্যভূমি, ধর্মপাশার কাজীরগাঁও বধ্যভূমি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বধ্যভূমি যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আত্মত্যাগের গৌরবগাথা তিলে তিলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১১টি বধ্যভূমি রয়েছে। এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগ না থাকায় বেশিরভাগই কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন সময় এসব বধ্যভূমিতে নিরপরাধ ছাত্র-জনতা, সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। কিছু কিছু বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও শহীদদের নামফলক বসানো ছাড়া আর কোনও কাজ হয়নি। আবার এমন অনেক বধ্যভূমি রয়েছে যেগুলো আজ পর্যন্ত চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবু সুফিয়ান বলেন, সব বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। বেশ কিছু বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। আমাদের দাবি সকল বধ্যভূমি চিহ্নিত করে সীমানা প্রাচীর দিয়ে বধ্যভূমির ইতিহাসসহ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্ম ভালোভাবে জানতে পারবে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার হাজি নুরুল মোমেন বলেন,‘জেলায় ছোটবড় ১১টি বধ্যভূমি ও স্মৃতিসৌধ রয়েছে। এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে কিছু কিছু বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে সংরক্ষণের চেষ্টা করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলকসহ কবর পাকা করে সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিছুটা হলেও সংরক্ষিত হবে। আমরা বধ্যভূমিগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। ইতোমধ্যে ডলুরা গণকবরের কাজ শেষ হয়েছে। আরও দুটি বধ্যভূমির স্মৃতি সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম দাবি করেন, সুনামগঞ্জের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বেশ কিছু বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৬২ বার