সুনামগঞ্জে

ক্রেতাহীন সুনামগঞ্জ শহরের কোরবানির পশুর হাটগুলো। শহরে সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বসেছে সবচেয়ে বড় পশুর হাট। তবে এ হাটে এখনো ক্রেতা বিক্রেতাদের এখনো তেমন একটা আগমন ঘটেনি। অন্যান্য বছর এমন সময়েটিতে পুরো মাঠজুড়ে থাকতো ক্রেতা বিক্রেতা এবং দূও দূরান্ত থেকে আসা গরু ও ছাগলের পাইকারগন। তবে এ জেলায় চলতি বছর আগাম বন্যায় জেরার সবকটি হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক কৃষক পরিবারের সদস্যদের পকেট শূন্য থাকায় ঈদ আনন্দ তেমন একটা নেই। গত বছর পৌর শহরের পুলিশ লাইন্সের সামনে মল্লিকপুর নদীর পারে হাট বসলেও বন্যার কারনে এবার জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বসেছে পশুর হাট। তবে অন্য বছরের তুলনায় বন্যার কারনে এবার গরু আমদামী কম হবে বলে মনে করছেন ইজারাদাররা। গত বছর বৃষ্টির কারনে এবং সীমানা প্রাচীর না থাকায় বিপাকে পরতে হয়েছিল ইজারাদারসহ ক্রেতা ও বিক্রেতারা ।  এ ব্যাপারে সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের গরুর হাটের ইজারাদার জসিম উদ্দিন দিলীপ বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদুল আজহায় প্রতিটি পশুর হাটের ইজারা বাবত সরকারকে দ্বিগুন রাজস্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা চাই পশুর হাটে আসা ক্রেতা বিক্রেতারা নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে যেনো কোরবানীর পশু কিনে বাড়ি ফিরতে পারেন।

ছাতক-

মাহবুব আলম, ছাতক প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের ছাতকে অন্যান্য বছর ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই হাট ছাড়িয়ে আশপাশের সড়কগুলো উপচে পড়ত গরু-মহিষ-ছাগলে। পশুবর্জ্যের দুর্গন্ধ আর গরু নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসা-যাওয়া করার কারণে অনেক সড়কে হাঁটাও অসম্ভব হয়ে পড়ত। অথচ এবার হাটের অর্ধেকটাই ফাঁকা! পশু এসেছে কম, ক্রেতাও কম।এমন হতাশার চিত্রই দেখা গেছে সুনামগঞ্জের প্রধানতম পশুর হাট গোবিন্দগঞ্জ বাজারে এছাড়া ছাতক বাজার ও জাউয়া বাজার পশুর হাটেও একই চিত্র । দূর্গত পরিবারে কোরবানি নিয়ে এবারে যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই। এবার গরুর দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ি ও খামারিরা পড়েছেন চরম বিপাকে।খামারি আবুল হাসান, আশরাফ চৌধুরী, লিটন মিয়া, শুকুর আলী ও গেদা মিয়া জানান, এবারের ঈদে বাজারে গরুর দাম হতাশাজনক। প্রতি বছর গরু নিয়ে হাজারেরও বেশি ট্রাক আসে বাজারে। স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরে থেকেও বহু ব্যবসায়ী গরু নিয়ে আসেন। কিন্তু এবছর তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
এমন হতাশা ঝরে পড়ছে সব ব্যবসায়ীর কণ্ঠেই। গরু নিয়ে দিনভর বসে থেকেও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না তারা। ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকি। ব্যবসায় এ অবস্থা দেখে অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েছেন বিক্রেতারা। তারা মনে করছেন, হাওড় এলাকায় কয়েক দফা বন্যার কারণেই এমন পরিস্থিতি।গত এপ্রিল থেকে বন্যা শুরু হয় সিলেটে। প্রথম দফা হাওড়াঞ্চলে বন্যায় তলিয়ে যায় বোরো ফসল। এরপর কয়েক দফা বন্যা দেখা দেয় বিভাগজুড়ে। এতে ফসলহানির পাশাপাশি তলিয়ে যায় বাড়িঘর। এখনো পানিবন্দি অনেক এলাকা। বন্যার কারণে অনেক কৃষক গবাদিপশু আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে কোরবানির হাটে আসা হয়নি তাদের।
হাটে গত ঈদের সময় যে গরু ৪০/৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এবারে এসব ২৫/৩০হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিন উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ বাজারে সহ বিভিন্ন কোরবানির পশুরহাট ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেপারিরা গত কয়েকদিন থেকে গরু নিয়ে হাটে অবস্থান করছেন। কিন্তু ভিড়ছেন না কোনো ক্রেতা। মাঝে মধ্যে দু-একটা দামদর হলেও তা ক্রয় মূল্যের চেয়ে অনেক কম। এসময় কিশোরগঞ্জ থেকে আসা বাবুল বেপারির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গত ১০বছর ধরে এখানে গরু বিক্রি করছি। কিন্তু এবারের মতো মন্দা বাজার আর কোনো বছর হয়নি। বন্যার কারণে অনেক খামার তলিয়ে গেছে। তাছাড়া মানুষ অভাবে, এজন্য এবার ব্যবসা মন্দা। প্রতি বছর অন্তত ২০০ বেপারি বাইরে থেকে এ হাটে গরু নিয়ে আসেন। এবার সব মিলিয়ে ২০-২৫ জন বেপারি বাইরে থেকে এসেছেন।
একই অবস্থায় পড়েছে উপজেলার অন্যান্য হাট-বাজারগুলো। এছাড়া যত্রতত্র অবৈধ হাট বসার কারণেও কাজিরবাজারে গরু ও ক্রেতা সংকট চলছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক বেপারি। তবে এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক-দোয়ারা বাজার) সার্কেল দুলন মিয়া বলেন, দুই উপজেলাতেই অনুমোদিত হাট ছাড়া যাতে অবৈধভাবে কোনো হাট না বসে এবং রাস্তাঘাটে হাট বসিয়ে যাতে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো না হয়, এ ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn