ইমানুজ্জামান মহী-প্রস্তাবিত সুনামগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কবে স্থাপিত হবে এ নিয়ে সংশয় ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। গত সালের ২১শে নবেম্বর জাতীয় সংসদে বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশ হলেও দীর্ঘ ছয় মাস অতিবাহিত হচ্ছে এ ব্যাপারে দৃশ্যত্ব কোন অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় প্রতিষ্টিত হবে? এনিয়ে প্রথমেই জেলার মন্ত্রী এমএ মান্নান ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগে মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ পীর ফজলর রহমান মিসবাহ শুরুতে মন্ত্রীর এলাকা দক্ষিন সুনামগঞ্জ নয় জেলা সদরে বিশ্ববিদ্যালয় চাই আন্দোলন শুরু করেন। পররর্তিতে জেলা আওয়ামীলীগ ও সরকার দলীয় জেলার বাকী সাংসদরা একাট্টা হয়ে এ দাবীকে আরো বেগবান করেন। জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে স্বীদ্বান্ত ও প্রস্তাব দেয়া হয় সুনামগঞ্জ সদরের মদনপুর ও গবিনপুর এর মাঝামাঝি দেখার হাওড়ের পাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার। এই দাবী ও প্রস্তাবের প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম এ মন্নান প্রথম অবস্থায় বিরোধিতা করলেও চাপের মুখে পরে নতিস্বীকার করেন ও নীতিগত ভাবে দল ও সাংসদদের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হন।
গত সালের ২১শে নবেম্বর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ছাতক ও দোয়ারাবাজার আসনের সাংসদ মহিবুর রহমান মানিকের উত্তাপিত প্রস্তাব বিল আকারে পাশ হয়। বিল পাশ হবার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পক্রিয়া থমকে গেছে। কার্যে যেন এ ব্যাপারে আর কোন দায় দায়িত্ব নেই।
জেলার মন্ত্রী এমএ মান্নান তার এলাকা দক্ষিন সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যে ইচ্ছে করেছিলেন সে ইচ্ছে পূর্ণ না হওয়ায় তার মধ্যে একটা শৈতীল্য ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। জায়গা নির্ধারণ নিয়ে সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এর সাথে প্রায় মাস দু’এক আগে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীলদের সাথে এ ব্যাপারে তিনি কথা বলেবেন। শুক্রবার রাতে আপডেট জানতে তাকে ফোন দিলে তিনি কোন সুখব দিতে পারেননি। তবে আশ্বস্থ করেন আগামী ২রা জুন সংসদ অধিবেশনে যোগদিতে ঢাকা গেলে এলাকার অন্যান্য সাংসদকে নিয়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রলায়ের দায়িত্বশীলদের সাথে আলাপ করেবেন।
এদিকে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের কথা বলে দেখার হাওড়ের পাড়ে নির্ধারিত স্থানে যাতে বিশ্ববিদ্যালয় হতে না পারে সে জন্য প্রভাবশালীদের কেউকেউ ষড়যন্ত্র করছেন বলে বাতাসে রটনা আছে। সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সাংসদের কাছে এর সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে ধরনের আশংকা আমরাও করছি। তবে বিলে যেহেতু দেখার হাওড়ের পাড়ে উল্লেখ করা আছে সেহেতু কেউ ইচ্ছে করলে তার খুশীমতো যা ইচ্ছা তা করতে পারবেন না। তিনি বলেন, দেখার হাওড় থেকে স্থান পরিবর্তন করতে হলে সংসদে পূর্ণরায় বিল পাশ করাতে হবে। এটা আর সম্ভব নাও হতে পারে।
দেখার হাওড় যেহেতু সদর, ছাতক ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ পর্যন্ত বিসৃত সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় সদরে না হয়ে ছাতক কিংবা দক্ষিণ সুনামগঞ্জ অংশেওতো হতে পারে? এই সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়ে সাংসদ মিসবাহ বলেন, সদর অংশে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন উপযোগী প্রায় ২৫০ একর খাস জমি আছে। জমি ক্রয় বাবত হাজার হাজার কোটি টাকা আমাদের এখানে সাশ্রয় হবে। অন্য অঞ্চলে সে সুবিধা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার ধীরগতির ব্যাপারে বর্তমানে চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় অবস্থানরত সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমানের কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনি এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরকে এ ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা দক্ষিণ সুনামগঞ্জে সব উন্নয়ন নয় জেলার সর্বত্র সমান উন্নয়ন চাই সে দাবীতে প্রস্থাবিত সুনামগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় দেখার হাওড়ের পাড়ে হবার প্রস্তাব করেছি এবং সে দাবী আদায় করেছি। জীববৈচিত্র্য কিংবা পরিবেশের কথা বলে যদি কেউ সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বাধাগ্রস্ত করেন প্রয়োজনে আবার জনগনকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে ন্যায় সঙ্গত দাবী আদায় করবো। তিনি জেলার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় সদরে স্থাপনের উপর জোর দেন।
সম্প্রতি জেলার মন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে রেল লাইন প্রতিষ্টা নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখার হাওড়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষনাবেক্ষনের কথা উল্লেখ করায় অনেকে সন্দেহ করছেন, দেখার হাওড়ের পাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে তিনি হয়তো বাধার সৃষ্টি করতে পারেন।
জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান সদর আসনের সাংসদের মতো সে সম্ভাবণার কথা উড়িয়ে দেন। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণ সুনামগঞ্জে স্থাপন করতে না পারায় পরিকল্পনা মন্ত্রী নাখোশ। তিনি তার ক্ষোভ থেকে অন্যত্র বিশ্ববিদ্যালয় হোক চাইতে নাও পারেন। তার কাছ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা নাও পেতে পারি। মন্ত্রীর আশা করে আমাদের লাভ হবে না। জেলার সকল সাংসদ ও জেলা আওয়ামীলীগ এখন পূর্বের সকল অবস্থান থেকে বেশী শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। আমারা সবাই চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট স্থানে প্রতিষ্টা করা কোন ব্যাপার না। জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দান প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টা। নেত্রীর স্বদিচ্ছা ও আমাদের প্রচেষ্টায় সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় হবেই। কেউ বাধাগ্রস্ত করে কিংবা হিংসা করে তা ফেরাতে পারবেনা।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৭৪৭ বার