সুনামগঞ্জ হাওরে বসানো হবে বজ্র নিরোধক যন্ত্র
বার্তা ডেস্ক :: দেশের হাওর প্রধান জেলা সুনামগঞ্জে প্রতিবছর বজ্রপাতে প্রাণ হারান অনেক মানুষ। কৃষি ও মৎস্য আহরণ এখানকার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস। তবে হাওরেই প্রতিবছর বজ্রপাতে প্রাণ দিতে হয় অনেককে। সরকারের পক্ষ থেকে বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হলেও কারও কারও ভাগ্যে সেই টাকাও জোটে না। বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য দেয়া হয় না কোনো ঋণ। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেকেই পথে বসার উপক্রম। তবে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে এক লাখ টাকা অনুদান দেয়ার জন্য একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সুনামগঞ্জে সবচেয়ে বেশি ২৫ জন বজ্রপাতে মারা যান। এছাড়াও ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। ২০১৯ সালে মারা গেছেন ৯ জন এবং চলতি বছরে আগস্ট পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ১০ জনের।
২০১৭ সালে নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ এলাকায় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে। সুনামগঞ্জে মার্চ থেকে মে এ তিন মাসে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৫টিরও বেশি বজ্রপাত আঘাত হানে। ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাতের পরিমাণ প্রাকৃতিকভাবেই বেশি। ভারতের খাসি পাহাড় ও মেঘালয় এলাকায় মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত মেঘ জমে থাকে। স্তরীভূত মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে ওই এলাকার পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলায় বজ্রপাতের সংখ্যাও বেশি হয়ে থাকে। এদিকে বজ্রপাত প্রাণহানি কমাতে হাওরে তালগাছ না লাগিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বজ্র নিরোধক যন্ত্র বসানো, বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে মোটা অংকের অনুদান প্রদান এবং হাওরের কৃষক ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করার দাবি জানান হাওর উন্নয়নে সংশ্লিষ্টরা। হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটির (হাউস) নির্বাহী পরিচালক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, সুনামগঞ্জ সবচেয়ে বজ্রপাত প্রবণ এলাকা। সেই এলাকায় বজ্রপাত নিরোধে তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা ভুল। সুনামগঞ্জে প্রতিবছর বজ্রপাতে কৃষক-মৎসজীবীরা প্রাণ হারান। তাই সরকারকে সুনামগঞ্জ জেলার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে হাওর ও খোলা জায়গায় অতি দ্রুত বজ্র নিরোধক যন্ত্র লাগাতে হবে। এছাড়াও মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে বড় অংকের আর্থিক অনুদানসহ হাওর এলাকার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য কয়েকদিন আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন- সুনামগঞ্জের প্রতিটি হাওরে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বজ্র নিরোধক যন্ত্র বসানো হবে। সেখানে যারা কাজে যাবেন তারা আশ্রয় নিতে পারেন এমন আশ্রয়কেন্দ্রও তৈরি করা হবে। তিনি আরও বলেন, বজ্রপাতে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারকে এক লাখ টাকা অনুদান দেয়ার জন্য একটি তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।