পুলিশ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গত ১৮ জুলাই আমাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। এরপর পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় ওই রাতে আমাকে গাড়িতে করে নির্জন স্থানে নিয়ে ‘স্ক্রু ড্রাইভার’ দিয়ে নির্মমভাবে খুঁচিয়ে ২ চোখ তুলে নেয় পুলিশ। গতকাল রবিবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন পুলিশ হেফাজতে দু’চোখ হারানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. শাহজালাল। হতভাগ্য এই যুবক জানান, এ ঘটনার পরের দিন সুমা আকতার নামের একজন নারীকে দিয়ে খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ছিনতাই মামলা দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। তবে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।         শাহজালাল বলেন, আমার দু’চোখ তুলে নেয়ার ঘটনায় খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম খানসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩ সদস্য জড়িত। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আমার দু’চোখ আর কোনো দিন ফিরে পাব না। কিন্তু ওসি নাসিম খানসহ ওই ১৩ জনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এ সময় মো. শাহজালাল তার পচন ধরা দুই চোখের সুচিকিত্সা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে শাহজালাল অভিযোগ করেন, মামলা প্রত্যাহারের জন্য পুলিশ তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে। মামলা প্রত্যাহার করা না হলে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দেওয়া হবে বলেও পুলিশ হুমকি দিয়েছে। বর্তমানে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। দু’ চোখ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ সময় বাদীপক্ষের আইনগত সহায়তাকারী সংগঠন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করেছিলাম মামলার তদন্ত চলাকালে ওসি নাসিম খানকে খালিশপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু প্রত্যাহার না করায় তিনি প্রভাব খাটাচ্ছেন। ওসি বিভিন্ন লোকজন দিয়ে শাহজালাল ও তার পরিবারের সদস্যদের মামলা প্রত্যাহারের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিয়েছেন। শাহজালালের পরিবার ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় পুলিশ তাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে শাহজালালের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান আইন ও শালিস কেন্দ্রের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিনা মিজানুর রহমান। এ সময় শাহজালালের মা রেনু বেগম, বাবা জাকির হোসেন, স্ত্রী রাহেলা বেগম এবং আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই ‘শাহজালালের চোখ গেল কোথায়’ শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাকে লিড নিউজ প্রকাশিত হয়। এতে খুলনাসহ সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা রেনু বেগম গত ৭ সেপ্টেম্বর খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মহানগর হাকিম আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে পিবিআইকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn