‘হাওরে পানি থাকলেও মরণ আবার না থাকলেও মরণ’
উকারগাওর গ্রামের মাহমুদ আলী বলেন, ‘এবছর তিন গ্রামবাসী চাঁদা তুলে দুটি মেশিন কিনেছে। মেশিন দিয়ে ১৭ দিন রাত-দিন সেচ দেওয়ার পর হাওরের পানি কিছুটা কমেছে। এখন জমিতে ধান রোপণের কাজ চলছে। চাঁনপুর গ্রামের রুবেল আহমদ বলেন, ‘দুটি মেশিনে প্রতিদিন দুইশ লিটার ডিজেল খরচ হয়। এগুলোর টাকাও তিন গ্রামের মানুষ চাঁদা তুলে দিয়েছে একারণে জমি রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত কৃষকের খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এরকমভাবে জমি চাষাবাদ করে কৃষকের তেমন কোনও লাভ থাকবে না। অন্যদিকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের খিদ্দরপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ বলেন, হাওর এলাকায় নদী খননের কাজ শুরু হওয়ায় এবছর হাওরের পানি দ্রুত নেমে গেছে। বিশেষ করে হাওরের উচু জমিগুলোতে পানি এক ফোঁটাও পানি নেই। তাই জমিচাষ, জমিতে মই দেওয়া থেকে শুরু করে ধানের চারা রোপণে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
গোপালগঞ্জ গ্রামের তাজ্জুদ আলী বলেন, ‘বোরো জমিতে চাষবাস থেকে শুরু করে ধানের ছরা আসা পর্যন্ত জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি থাকতে হয়। ওই পরিমাণ পানি থাকলে ধানের ফলন ব্যাপকভাবে কমে যাবে। ফলে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়বে। খিদ্দরপুর গ্রামের কামাল হোসেন বলেন, হাওর আর নদীর দূরত্ব কম করে হলেও তিন কিলোমিটার হবে। তাই এতো দীর্ঘ সেচ দিতে না পারায় জমিগুলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তীব্র সেচ সংকটে পড়বে। ’ ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন বলেন, ‘হাওরের জলাবদ্ধতা ও সেচ সংকট দূর করতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। বিশেষ পরিকল্পনা না নেওয়া হলে আগামীতে সেচ ও জলাবদ্ধতা সংকট আরো তীব্র হবে।’ হাওর বাঁচাও ও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি বীরমুক্তি যোদ্ধা অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী বলেন, ‘সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা দেশের অন্যতম খাদ্য শস্যের যোগান দিলেও স্বাধীনতার আগে ও পরে হাওরের সমস্যা নিরসনে কোনও উদ্যোগ কেউ না নেওয়ায় সেচ সংকট ও জলাবদ্ধতার মতো সংকট এখন আরও ঘনীভুত হচ্ছে। এজন্য টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া হাওরের অভ্যন্তরে জলমহালের ব্যবস্থাপনা গুরুত্ব সহকারে মনিটরিং করলে দুটি সংকট কিছুটা হলেও কমবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মোন্নাফ বলেন, ‘হাওরের সেচ সংকট ও জলাবদ্ধতা দুটোই কৃষকের জন্য ক্ষতিকর। সেচ সংকট ও জলাবদ্ধতার কারণে কৃষক জমিতে ধান রোপণ করতে পারেন না। সেচ সংকট ও জলাবদ্ধতার কারণে জমি পতিত থাকে। একারণে ধানের উৎপাদন ব্যহত হয়। এ কারণে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ে। হাওর এলাকার এসব সমস্যা দূর করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তবে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়ে কাজ করলে এটি আরও ফলপ্রসু হবে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন, হাওর এলাকার সমস্যা নিরসনে নদী খননের কাজ চলমান রয়েছে। নদীগুলোর খনন কাজ শেষ হলে কৃষক কিছুটা হলেও এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। হাওরের প্রবীণ কৃষকদের দাবি হাওর এলাকার উন্নয়নে পৃথক নীতিমালা তৈরি করে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে কৃষকরা স্থায়ীভাবে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন না।