হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় বিএনপি ও জামায়াত
বার্তা ডেস্ক :: দেশের অন্যতম বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে কবজায় নিতে মাঠে নেমেছে জামায়াত-বিএনপি। কওমি মতাদর্শীদের শীর্ষ এই সংগঠনের শীর্ষ পদে নিজেদের অনুসারী ও আশীর্বাদপুষ্ট নেতাদের আমির-মহাসচিব বানাতে চেষ্টায় তারা। আগামী ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কাউন্সিলে শীর্ষ পদে নিজেদের পছন্দের লোক বসাতে বিএনপি-জামায়াতের তৎপরতার কথা উঠে এসেছে সরকারি একটি সংস্থার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। হেফাজতে ইসলামের একাধিক সিনিয়র নেতার দাবি—কয়েক যুগ ধরে জামায়াত-শিবির চেষ্টা করছে হাটহাজারী তথা কওমি মাদরাসাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার। দখলের চেষ্টায় ১৯৮৫ সালে একবার হামলাও চালানো হয়। কিন্তু আল্লামা আহমদ শফীর দৃঢ়তায় কওমিরা সে চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর তারা ফের হাটহাজারী মাদরাসা ও হেফাজতে ইসলামকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা শুরু করেছে। সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলামকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাকেন্দ্রিক করার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত। একই সঙ্গে তাদের আশীর্বাদপুষ্টদের আমির কিংবা মহাসচিব করার পরিকল্পনা করছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র সংগঠনটিকে জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়ার নামান্তর।
জানা যায়, দেশের অন্যতম বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ও কওমি মতাদর্শীদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আদর্শগত মতপার্থক্য থাকলেও বেশ কয়েক বছর ধরে এই সংগঠনকে কবজায় নিতে মাঠে নামে জামায়াতে ইসলামী। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাদের সঙ্গী হয় রাজনৈতিক মাঠের সঙ্গী বিএনপি। তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলামের আমির কিংবা মহাসচিব পদে নিজেদের আশীর্বাদপুষ্ট নেতাকে দায়িত্ব দিতে মাঠে নামে। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত রাজনৈতিক সংগঠন ছাত্রশিবির বছর দুয়েক আগে হেফাজতে ইসলামের মূল কেন্দ্র দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। হাটহাজারী মাদরাসায় ৭১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করে। এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীপুত্র শামীম সাঈদী, মাওলানা তারেক মনোয়ার, জামায়াতের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, শিবির নেতা সালাহউদ্দিন আইয়ুবীসহ জামায়াত-শিবির নেতারা হেফাজতে ইসলাম ও হাটহাজারী মাদরাসাকেন্দ্রিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেন। আল্লামা আহমদ শফীর জানাজার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামে জামায়াত শক্ত অবস্থানের জানান দেয়। ওই দিন জানাজায় জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের অর্ধশতাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। এমনকি আল্লমা শফীর লাশ বহনকারী গাড়ি, খাটিয়া এবং জানাজার মাঠের মাইকের নিয়ন্ত্রণ ছিল জামায়াত-শিবির নেতাদের দখলে।
আগামী ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি গঠনের জন্য হাটহাজারী মাদরাসায় কাউন্সিল ডাকা হয়েছে। ওই কাউন্সিলে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে আমির কিংবা মহাসচিব পদের যেকোনো একটিতে বসাতে চায় বিএনপি-জামায়াত। তাদের পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটর অন্যতম শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকে আমির এবং বর্তমান মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে মহাসচিব করার। দ্বিতীয় পরিকল্পনায় রয়েছে বর্তমান মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির ও মাওলানা মামুনুল হককে মহাসচিব করার। মাওলানা মামুনুল হক প্রয়াত শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে হলেও তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে জামায়াত সম্পৃক্ততার অভিযোগ। মামুনুল হকের স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির বেশির ভাগ আত্মীয়-স্বজন জামায়াত-শিবিরের সদস্য বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ আছে।-কালের কণ্ঠ