৩’শ কোটি টাকার লোকসান ও ১২ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত
১২ কোটি টাকার অবিক্রিত চিনি ও ৩’শ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা নিয়ে ঝিনাইদহ মোবারকগঞ্জ চিনি কলের আখ মাড়াই মৌসুম শুরু আজ শুক্রবার। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ এই ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠানটি পুঞ্জিভূত ঋণসহ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় রয়েছে ।এটি সুগার মিলের ৫১তম আখ মাড়াই মৌসুম। আজ শুক্রবার স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার সকালে মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করেন। গত আখ মাড়াই মৌসুমে মিলটি প্রায় ৩৭ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিলো। এবার ৯৫ দিনে এক লাখ দশ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে সাত হাজার ৭০০ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এদিকে মিলটির গুদামে অবিক্রিত রয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকার চিনি। শ্রমিকদের বেতন ভাতা বাবদ দুই মাসের বকেয়া রয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এছাড়াও অবসরে যাওয়া শ্রমিকদের গ্রাইচুটি প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। মোবারকগঞ্জ সুগারমিল সূত্রে জানা যায়, মিলটি এবার প্রতিষ্ঠার পর ৫০টি আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন মৌসুম পার করেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে গত ৫০টি আখ মাড়াই মৌসুমে সুগারমিলটি লাভের মুখ দেখে মাত্র ১৬ বার।এতে মিলটি লাভ করেছিলো ৩৮ কোটি টাকা। আর ৩৪টি আখ মাড়াই মৌসুমে পুঞ্জিভূত ঋণসহ প্রায় ৩০১ কোটি টাকা দেনা রয়েছে মিলের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোবারকগঞ্জ সুগার মিল এলাকায় আখ চাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ মৌসুমে আখ রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার একর। কিন্তু মিল এলাকার কৃষকরা ৬ হাজার ৮০ একর জমিতে আখ রোপন করে। গত ৭টি মাড়াই মৌসুমের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কোনো মৌসুমেই আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। মিল এলাকা দিন দিন কেন আখ রোপন থেকে সরে আসছে এমন প্রশ্নে কৃষকরা আখের মূল্য কম ও টাকা পরিশোধে গড়িমসির কথা বলেন। ঠিকমতো পুর্জি না পাওয়া এবং মাথাভারি প্রশাসনকে দায়ি করেন। মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন জানান, তারা প্রতিদিনই আখ চাষের জন্য কৃষকদের সাথে বৈঠক করছেন। তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের ইক্ষু বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আখ চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করছেন। উল্লেখ্য ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের বলিদাপাড়ায় ১৯৬৫ সালে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যায়ে ১৮৯.৮১ একর নিজস্ব সম্পত্তির উপর নেদারল্যান্ড পদ্ধতিতে সরকার মোবারকগঞ্জ চিনিকলটি স্থাপন করে। এর মধ্যে ২০.৬২ একর জমিতে কারখানা, ৩৬.২২ একর জমিতে স্টাফদের জন্য আবাসিক কলোনি, ২৩.৯৮ একর জমিতে পুকুর ও প্রায় ১০০ একর জমিতে পরীক্ষামূলক ইক্ষু খামার রয়েছে।