মেসবা খান-

দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ নভেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। দিনটিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন নামে উদযাপন করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিনটিকে মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস, বিএনপি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এবং জাসদ সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সমাবেশে বলেছেন, ‘৭ নভেম্বর জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনের নায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য তিনি সিপাহী বিপ্লব করে শপথ নিয়েছেন। এ দিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কালজয়ী দর্শন গ্রহণ করে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন করেছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দিনটির নায়ক হিসেবে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দাবি করা হলেও জাসদের তিন অংশ মনে করে জিয়া ৭ নভেম্বরের খলনায়ক। এইদিনের একমাত্র নায়ক হলেন কর্নেল তাহের। তাহেরের নেতৃত্বেই এই দিনে সিপাহী-জনতার বিপ্লব হয়েছিল। পরে জিয়া তা ছিনতাই করেন। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে দেখেন। তারা এটাকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দাবি করেছেন, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক আর পাকিস্তান ফেরত সৈনিকদের দ্বন্দের কারণেই ৭ই নভেম্বরের ঘটনা ঘটেছিল। তিনি মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকরা শক্ত ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় জীবন হারিয়েছেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। মোহাম্মদ নাসিম দিনটিকে সৈনিক হত্যা দিবস মনে করলেও জাসদ একাংশের সভাপতি এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তা মনে করেন না। তার মতে তখনকার কুচক্রিদের তৈরি করা গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষিতে ৭ই নভেম্বরের ঘটনার নায়ক কর্নেল তাহের আর খলনায়ক হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। জেনারেল জিয়াউর রহমান এ দিন গৃহবন্দি থেকে মুক্ত হয়ে পরে বিশ্বাসঘাতকতা করে কর্নেল তাহেরকে হত্যা করেন। হত্যা করেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া সেনাকর্মকর্তাদেরও। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (আম্বিয়া-প্রধান) আরেক অংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন বলেন, ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান কারাগারে বন্দী ছিলেন। তাকে খালেদ মোশাররফ বন্দী করেছিলেন। ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা অভ্যুত্থান করলে জিয়া কর্নেল তাহেরের সাহায্য কামনা করেন। পরে জিয়াকে কর্নেল তাহের মুক্ত করলে জিয়া বেঈমানী করে প্রতিবিপ্লব ঘটান।

আম্বিয়া বলেন, এরপর একে একে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনকারী সেনাদের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের হত্যা শুরু করেন। যারা তাকে মুক্ত করেছিল তাদেরও হত্যা করা হয়। পরে ৭ নভেম্বরের মূল নায়ক কর্নেল তাহেরকেও ফাঁসিতে ঝুলান জিয়া। ৭ নভেম্বরের মূল খলনায়ক জিয়া। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন বলেন, ১৫ আগস্টের পর থেকেই সেনাবাহিনীতে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। পরে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক শাসন জারি হলে গ্রেফতার হন জিয়া। এর আগ থেকেই বাঙালী জাতীয়তাবাদকে ধ্বংস করে দেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় পরিচালনার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অভ্যুত্থান হয়। সে সময় জিয়া খালেদের অভ্যুত্থানে বন্দী ছিলেন। জিয়া কর্নেল তাহেরের সাহায্য কামনা করেন। রতন বলেন, কর্নেল তাহের যখন জিয়াকে মুক্ত করেন তখন জিয়া বলেছিলেন, আমি আপনার গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকারে থাকব। কিন্তু সে পাল্টা ক্ষমতা নিয়ে প্রতিবিপ্লব ঘটান। সামরিক শাসন জারি করেন। যারা তাকে মুক্ত করে উল্টো তাদেরই গ্রেফতার করা হয়। বাদ যায় না মেজর জলিল, আ স ম রব, শাজাহান সিরাজের মতো নেতারা। আর ফাঁসি দেওয়া হয় কর্নেল তাহেরকে যিনি জিয়াকে মুক্ত করেছিলেন। মূল কথা হল ৭ নভেম্বর বিপ্লবের নায়ক তাহের আর বিশ্বাসঘাতক জিয়া।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn