সরকার প্রধানকে ভুল না বোঝানোর আহ্বান প্রধান বিচারপতির
প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধান ও আইনে যে ক্ষমতা দেয়া আছে. বিচার বিভাগকে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে দেয়া হলে দেশে দুর্নীতি, অপরাধ প্রবণতা, এমনকি সন্ত্রাসমূলক কাজ অনেকাংশে কমে আসতো। তিন শতাধিক বিচারকের পদ শূন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিচারক শূন্যতা নিয়ে আমরা সময় মতো চিঠি দেই, কিন্তু সময় মতো প্রশাসনের সহযোগিতা পাই না। এটা হলো নিম্ন পর্যায়ের প্রশাসন। এক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ে একটা ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়।’ ‘আশা রাখবো প্রশাসনে যারা আছেন, এ সংক্রান্ত বিষয় যারা ডিল করেন তারা সরকার প্রধানকে ভুল রিপোর্ট সরবারহ করবেন না। সঠিক রিপোর্ট দেবেন যাতে বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক থাকে’ যোগ করেন এস কে সিনহা।ভুল রিপোর্ট দেয়ার ফলে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, উল্টো সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকারের সবচেয়ে একটা বড় জিনিস হলো সুন্দরভাবে আইনশৃংখলা বজায় রাখা। আইনশৃংখলা বজায় রাখতে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন অপরাধীদের ঠিক মত বিচার করা। সময়মত বিচার না হলে অপরাধী জামিনে বের হয়ে যায়। এরপর সে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
বিচার বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ক্ষেত্রে দু-একজনকে দায়ী করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পাকিস্তান আমল থেকে বিচার বিভাগকে ক্ষতি করেছে আমাদেরই বিচার বিভাগেরই কিছু মানুষ। এর জন্য দু-একজন দায়ী।’ তিনি বলেন, এখন প্রশাসনকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। বলা হয়, বিচার বিভাগ প্রশাসনের প্রতিপক্ষ। এটা অত্যন্ত একটি ভুল ধারণা। প্রত্যেক সরকারের আমলেই কিছু বিষয়ে বাড়াবাড়ি হবে। সে বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই তো বিচার বিভাগ। তা না হলে প্রশাসনের অধীনেই বিচার বিভাগ থেকে যেত, যেটা রাজা-বাদশারা বিচার করেছে। এটা হয়নি কারণ, যাতে কোনো চাপ বা দলীয় চিন্তা-চেতনার ঊর্ধ্বে থেকে বিচার করতে পারে। এস কে সিনহা বলেন, রাজনৈতিক সরকার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় কাজ করবে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক সরকারের লাইন কী হবে, বিচার বিভাগ কী করবে তার লাইন কী হবে- সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে শাসনতন্ত্রে বলা আছে। তিনি বলেন, যখনই দেখা যাবে রাজনৈতিক সরকার ও নেতাদের দ্বারা শাসতন্ত্রের যা বলা আছে তা ঠিকমতো হচ্ছে না, তখনই সুপ্রিমকোর্ট এগিয়ে আসবে। তা হলে সেদেশে সভ্যতা বজায় থাকবে।
এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ দেশের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। গর্বের সঙ্গে বলতে পারি- জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানো কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে ওই অনুষ্ঠানে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা। এছাড়া বক্তব্য রাখেন- বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ, জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সদস্য বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জি, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সচিব পরেশ চন্দ্র শর্ম্মা।