সিলেটে বন্যা : বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, মোকাবেলায় প্রস্তুত প্রশাসন
সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারার ৪ পয়েন্টে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পানি কমেছে। তবে তা কমছে খুব ধীর গতিতে। প্লাবিত এলাকার পানি অত্যন্ত ধীরগতিতে কমতে থাকায় দুর্ভোগ কমছে না পানিবন্দি মানুষের। ফলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া আমলসীদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৬২ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, বন্যায় স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় সিলেটের প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। পানিবাহিত অসুখ মোকাবেলায় মজুদ রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ। সিলেট জেলার বন্যাকবলিত ৭টি উপজেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে আক্রান্ত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মাঠে কাজ করছে সিলেট সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
সিলেটের সিভিল সার্জন হিমাংশু লাল রায় বলেছেন, বন্যার কারণে জেলার দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জে মোট ২৪টি ইউনিয়নের ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৯২ জন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যাদুর্গত এলাকায় চিকিৎসা সেবায় কাজ করছে ৭৮টি মেডিকেল টিম। জেলা প্রশাসনের হিসাবে বন্যায় ৮টি উপজেলার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৫ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় আক্রান্ত ইউনিয়গুলোতে মোট ১৪৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একজন মেডিকেল অফিসার কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন। যে ইউনিয়নের জনসংখ্যা বেশি, সে ইউনিয়নে দুই থেকে তিনটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় সিলেটের ৮টি উপজেলার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৫ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্গতদের সাহায্যে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, সিলেটের ৮ উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের ৪৬৬ গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব এলাকার ১৭ হাজার ৮৫৮ পরিবারের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৫৫ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাছাড়া ৪ হাজার ৪৯১টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৩১৩ টন চাল ও ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা ৮টি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে। সিলেট সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের নিরাপত্তার জন্য সরকারিভাবে বালাগঞ্জ ৩টি, ফেঞ্চুগঞ্জ ৩টি ও বিয়ানীবাজারে ৫টি মোট ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। প্রশাসনিক হিসাবে সিলেট জেলায় বন্যায় আক্রান্ত ইউনিয়নগুলো হল— দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর, মোগলাবাজার, দাউদপুর, বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার, পূর্ব পৈলনপুর, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর, পূর্ব পৈলনপুর, গোয়ালাবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ফেঞ্চুগঞ্জ, ঘিলাছড়া ও মাইজগাও, গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা, শরীফগঞ্জ, বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই, দুবাগ, শেওলা, কুড়ারবাজার, মাথিউরা, তিলপাড়া, মোল্লাপুর, মুড়িয়া, লাউতা এবং জকিগঞ্জ উপজেলার বিরশ্রী ইউনিয়ন।
প্রতিটি উপজেলার মধ্যে সিলেট সদরে কর্মরত মেডিকেল টিমের সংখ্যা ১১টি, দক্ষিণ সুরমায় ১১টি, বিশ্বনাথে ১০টি, বালাগঞ্জে ৭টি, ওসমানীনগরে ৮টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, গোলাপগঞ্জে ১৬টি, বিয়ানীবাজারে ১৬টি, জকিগঞ্জে ১০টি, কানাইঘাটে ১২টি, গোয়াইনঘাটে ১১টি, জৈন্তাপুরে ১১টি, কোম্পানীগঞ্জে ১০টি ও জেলা সদরে ৫টি। সবমিলিয়ে ১৪৮টি মেডিকেল টিমের মধ্যে মোট বন্যা আক্রান্ত এলাকায় কর্মরত রয়েছে ৭৮টি টিম। বন্যায় আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিটি উপজেলায় ৬ জুলাই পর্যন্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৮শ’, পানি বিশুদ্ধকরণ তরল মজুদ আছে ১৫, ওআরএস মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭শ, আইভি ফ্লইডস রয়েছে ৩২৫০, সিপ্রোফ্লক্সাসিলিন ট্যাব রয়েছে ৫১ হাজার ৩৫০, এন্টিভেনাম রয়েছে ৩ ও টেট্রাসাইক্লিন মজুদ রয়েছে ৪৯ হাজার ২৫০টি।