স্বপ্নের সোনার হরিনের দেশেও মানুষ আত্মহত্যা করে!
আমি যখন এসব ভাবছি, সঙ্গে থাকা দেশিস রাইজিং আপ এন্ড মুভিং এর নির্বাহী পরিচালক কাজী ফৌজিয়া বললেন, কত মানুষ যে অভিভাবকত্ব চাইবে, দেখতে থাকেন। এরই মধ্যে জানালাম মাহফুজ এবং সুমি দু’জনেরই পরিবার অভিভাবকত্ব চায়। দুই পরিবারের কোন্দলে সুমির লাশ এখনও হাসপাতালে। দুই পরিবারই দাফনের দায়িত্ব নিতে চায়! জীবনে না হোক মরণে তো তারা দায়িত্ব নিতে চাইছে-এই বা কম কিসে! এমন ভাবতে ভাবতে যা শুনলাম তাতে বিষন্নতায় ডুবে গেলাম। যে পরিবার লাশ দাফনের দায়িত্ব পাবে, সেই পরিবারের পাল্লা ভারি থাকবে সামিনের দায়িত্ব নেয়ার। আর শিশু পালনের মতো গুরু দায়িত্ব পালনকারী আমেরিকান সরকারের কাছ থেকে মাসে ১২০০ ডলার পাবে শিশুর ভরণপোষণ ও দেখভালের জন্য। এই টাকাই তাদের মূল লক্ষ্য, নিষ্পাপ শিশুটি নয়। আরো জানলাম, দুই পরিবারের একটি পরিবারও উপযুক্ত না হলে সামিনকে দেয়া হবে অন্য কোনো পরিবারের কাছে। এসব শুনতে শুনতে সামিনের আপাতত আশ্রিতার বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। কঠিন চেহারার আফ্রিকান আমেরিকান দুই নারী পুরুষ। সিটি থেকে এসেছে সামিনের খবর নিতে। তাদের কাছে সামগ্রিক অবস্থা ‘উপযুক্ত’ মনে না হলে শিশুটিকে তারা নিয়ে যাবে। নিয়ে কোথায় যাবে? এবার কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়ার জোগার!
আমেরিকায় সমাজ সেবামূলক একটি পেশা শিশু লালন পালন, দত্তক নেয়া। পরিবারে নির্যাতনের শিকার শিশু, অনাথ শিশুদের দায়িত্ব দেয়া হয় ওই পেশাজীবীদের। তারা আাদালতে নিজেদের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে অমন শিশুদের দায়িত্ব নেয়ার জন্য আবেদন করে রাখে। আফ্রিকান আমেরিকান নারীদের বেশি আধিপত্য এই পেশায়। ইদানিং বাংলাদেশি নারীদেরও কেউ কেউ যুক্ত হচ্ছেন। তবে মানবাধিকার সংগঠন দেশিজ রাইজিং আপ এন্ড মুভিং বলছে, শুনতে যতই মহৎ মনে হোক, শিশু পালনের পেছনে রয়েছে ওই পেশাজীবীদের অনেকের অসৎ উদ্দেশ্য। তাহলো একেকটি শিশুর জন্য মাসে মাসে ১২০০ ডলার! অথচ ওই শিশুর আপন বাবা-মা’কে সরকার মাসে দেয় ৩/৪শ’ ডলার! বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আর্থিক টানাপোড়েনে থাকা পরিবারের শিশুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়, বাবা-মা’র মানসিক অস্থিরতা, সাংসারিক চাপ আর দুশ্চিন্তার কারণে। আর সিটি নির্যাতনের কথা জানতে পেরে ওই শিশুদের দায়িত্বে দেয় দত্তক নেয়া বাবা-মা-র কাছে। ওই ১২০০ ডলার যদি আপন বাবা-মা-কে দেয়া হতো অনেক ক্ষেত্রেই শিশুরা আপন বাবা-মা-র আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতো না। এমনকি আজ হয়তো সামিনের জীবনে এমন অসহায় দিন আসতো না! আর্থিক টানাপোড়েনে সুমিকে হয়তো পৃথিবী ছাড়তে হতো না!
ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত