সেই বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ার ফলই হলো বাংলাদেশ দলে এখন অনেক পারফরমার। নির্দিষ্ট কারো ওপর নির্ভরশীলতার যুগ পেছনে ফেলে আসা দলটির আশা এখন অনেকের কাঁধেই সওয়ার হতে পারছে। যখন অন্যরাও পারছে, তখন সময়ে আরো পরিণত সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালরাও বসে নেই। তাঁরা পারফরম্যান্সের আলোয় আরো বেশি উজ্জ্বলতা ছড়াতে শুরু করে দিয়েছেন। এঁরা একেকজন যেভাবে নিত্য নতুন অর্জনের চৌকাঠ ডিঙিয়ে চলেছেন, তাতে অলিখিত লড়াইটি নিশ্চিতভাবেই আরো অনেক দিনই চালু থাকবে।

একজন আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অব্যাহত চেষ্টায় তাঁদের দুজনের মধ্যে রেকর্ডের মালিকানাও সম্ভবত নিয়ম করেই অদল-বদল হয়ে যেতে থাকবে। খুলনার তামিমকে ওয়েলিংটনের সাকিব ছাড়িয়ে যাওয়ার পর যেমন এখন আবার পরেরজনকে টপকে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছেন প্রথমজন। ২০১৫ সালে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০৬ রানের ইনিংস খেলে তামিম বনে গিয়েছিলেন টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক। ২০১৭-র জানুয়ারিতে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৭ রানের ইনিংস খেলে সেই রেকর্ডের মালিকানার দলিলই নিজের নামে করে নেন সাকিব। রেকর্ড এ গড়বেন তো সে ভাঙবেন, এমন হয়তো তাঁদের মধ্যে চলতেই থাকবে। এ লড়াইয়ের মধ্যে তাঁদের দুজনের একটি ব্যাপার আবার একসঙ্গেই ঘটতে চলেছে।

সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা তাঁদের মাঠের বাইরে ছিটকে না দিলে আসছে ২৭ আগস্টই সেই দিন, যেদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এ দুই মহাতারকা একসঙ্গেই ছুঁতে চলেছেন ৫০-তম টেস্টের মাইলফলক। সাকিবের টেস্ট অভিষেক তামিমের সাত মাস আগে হলেও মোহাম্মদ আশরাফুল (৬১), মুশফিকুর রহিম (৫৪) এবং হাবিবুল বাশারের পর (৫০) চতুর্থ ও পঞ্চম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ৫০-তম টেস্ট খেলার ক্ষণটি তাঁদের দুজনকে এনে মিলিয়ে দিচ্ছে এক বিন্দুতেই। অবশ্য সমসাময়িক, এমনকি তাঁদের অনেক পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে শুরু করা ক্রিকেটারদের তুলনায় অনেক বিলম্বেই এ উপলক্ষটা এসেছে তাঁদের সামনে। বিরাট কোহলির কথাই ধরুন না। সাকিবের চার বছর এক মাস পর টেস্ট অভিষেক ভারত অধিনায়কের। ২০১১-র জুনে শুরু করে এই ছয় বছরেই সাকিবের (৪৯) চেয়ে ১০টি টেস্ট বেশি খেলে বসে আছেন কোহলি (৫৯)। ইংল্যান্ডের অ্যালিস্টার কুকের অভিষেকও সাকিবের মাত্র এক বছর আগে। অথচ ইতিমধ্যে তাঁর খেলা হয়ে গেছে ১৪৪টি টেস্ট। তুলনায় গেলে ব্যথিতই হওয়ার কথা। পারফরম্যান্স দিয়ে এখন জোর গলায় বেশি বেশি টেস্ট ম্যাচের দাবি জানানো গেলেও একসময় দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলার সুযোগ খুব সীমিতই ছিল বাংলাদেশের। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে অবশ্য ৫০ টেস্ট খেলাকেও কম মনে হচ্ছে না সাকিবের। সিপিএল খেলতে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার আগে ৫০ টেস্টের মাইলফলক নিয়ে সেরকমই বলে গেছেন, ‘আরো কয়েক বছর আগে যে অবস্থা ছিল, সেরকম থাকলে মনে হয় এত দিনে ৩০ টেস্ট খেলতাম। সেই হিসাবে ঠিকই আছে। ’

৫০-তম টেস্ট একসঙ্গে খেলতে নামলেও সাকিব-তামিমের মধ্যে লড়াইটা ঠিক থাকলেই হলো বাংলাদেশের। এ লড়াইয়ে মিশে থাকে অনেক প্রাপ্তির সম্ভাবনা। গত মার্চ-এপ্রিলের শ্রীলঙ্কা সফরের টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে সব ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ রান ছিল তামিমের (১২০২)। ওই সিরিজেই তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া সাকিবের (১২০৮) সঙ্গে বাঁ-হাতি ওপেনারের ব্যবধান অবশ্য মাত্র ৬ রানের। আবার টেস্টেও তামিমকে (৩৬৭৭) ধরে ফেলা দুঃসাধ্য নয় সাকিবের (৩৪৭৯)। তিনি পিছিয়ে মাত্র ১৯৮ রানে। ওয়ানডেতে ব্যবধান একটু বেশি হলেও (তামিমের ৫৭৪৩ ও সাকিবের ৪৯৮৩) অন্য দুই ফরম্যাটে কম। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক অলরাউন্ডার সাকিব (১৭৬ ও ৭০) ব্যাটিং রেকর্ডের মালিকানাও নিশ্চয়ই ছাড়তে চাইবেন না। না চাইলে তামিমের সঙ্গে লড়াইও আরো অনেক দিন চলবে। তাতে লাভের ওপরে লাভ বাংলাদেশেরও।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn