পানিমন্ত্রী‘ হাওরে বিপর্যয়ের নায়ক ’১৩ কর্মকর্তার দায়মুক্তি চাইলেন
হাসান আল জাভেদ-
হাওরে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্ব পালনে অবহেলায় দুদকের অভিযোগ খ-ন করে সিনিয়র সচিবসহ ১৩ কর্মকর্তার দায়মুক্তি চেয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর আগে গত মার্চের শেষ দিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা। এর পর হাওরে দুর্বল ও অসমাপ্ত বাঁধ ভেঙে প্লাবন ও ফসলহানির পেছনে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির দায় এনে ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
এ ছাড়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান, অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান, যুগ্ম সচিব নুজহাত ইয়াসমিন, মন্টু কুমার বিশ্বাসসহ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠায় দুদক। পরে চিঠির অনুলিপি আসে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। দুদকের চিঠিতে বলা হয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রায় ৫৬ দিন দেরিতে অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয় মর্মে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটরিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট কমিটির কার্যক্রম যথাযথভাবে তদারক করা হয়নি। ফলে সময়মতো বাঁধ নির্মাণ না করায় দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে কমিশন মনে করে। দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল মামলা দায়েরের পর বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ও কাজে অবহেলার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এতে জড়িত ৬১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। যে ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরও এ মামলার আসামি করার সুযোগ রয়েছে। বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে দুদকের ওই চিঠির জবাবে গতকাল পানিসম্পদমন্ত্রীর সুপারিশে বলা হয়, দুদকের অভিযোগে হাওর এলাকার আগাম বন্যা প্রতিরোধ, নিষ্কাশন ও উন্নয়ন প্রকল্পের ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অর্থ বরাদ্দে ৫৬ দিন দেরি বিষয়ক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বাস্তবতার নিরিখে বস্তুনিষ্ঠ নয়। প্রকৃতপক্ষে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রথম কিস্তিতে ৭ দিন ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪ কর্মদিবসে অর্থ ছাড় দেওয়া হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঈদের কারণে ১২ ও ৪ কর্মদিবসে অর্থ ছাড় দেওয়া হয়। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ৫৬ দিন বিলম্বের বিষয়টি সঠিক নয়। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের চিঠিতে আরও বলা হয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আলাদা কোনো মনিটরিং অনুবিভাগ নেই। এর পরও মন্ত্রণালয়ের ১৬ সদস্যের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১১টি জেলার ১৯টি প্রকল্প পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া আট কর্মকর্তা ২০টি জেলার রাজস্ব খাতভুক্ত ৭২টি প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী পদমর্যাদার চিফ মনিটরিং অফিসার কাজী তোফায়েল হোসেনের তত্ত্বাবধানে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্স নিয়মিতভাবে প্রতিটি প্রকল্প পরিদর্শন করেন। আমি নিজেও প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কার্যাবলি মনিটরিং করে থাকি। হাওরে আগাম বন্যা এবং বাঁধ নির্মাণে কোনো গাফিলতি আছে কিনা তার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে সিলেট অঞ্চলের তিন প্রকৌশলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্তসহ একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। কাজের স্বচ্ছতা বিবেচনায় ওই তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর ওই চিঠিতে বলা হয়, সিলেট অঞ্চলের সুনামগঞ্জের ডুবন্ত বাঁধের উচ্চতার মাত্রা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন মোতাবেক সাড়ে ৬ মিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মার্চের প্রথম সপ্তাহে ভারতের চেরাপুঞ্জি এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জে এক সপ্তাহে গত ৫০ বছরের তুলনায় অত্যধিক বৃষ্টি হয়েছে। ফলে পানির স্তর ৮ দশমিক শূন্য ৯ মিটার উঠে আগাম বন্যা সৃষ্টি হয়। আগাম বন্যায় হাওর তলিয়ে যাওয়ার মূল কারণ অতিবর্ষণজনিত বিরূপ প্রকৃতি।