টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বিউগলে করুন শুর বাজানো হয়। পরে অশ্রুসিক্ত প্রধানমন্ত্রী ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। কালো পাড়ের সাদা শাড়ি আর বুকে কালোব্যাচ ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছুটা সময় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের সামনে নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে। এরপর শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দলীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডিপুটি স্পিকার পৃথক পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মোনাজাত শেষে প্রধানমন্ত্রী ও ছোট বোন শেখ রেহানা বঙ্গবন্ধু ভবনে অবস্থান নেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে পৌঁছান। এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ, শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাসিম, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, শেখ কবির হোসেন, মোজাম্মেল হক, উম্মে রাজিয়া কাজল এমপি, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, গোপালগঞ্জ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর বেলা পৌনে ১১টায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী, তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের সদস্যরা বঙ্গবন্ধু ভবনে বসে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে টুঙ্গিপাড়াসহ এর আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। টুঙ্গিপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় শোকের আবহ বিরাজ করছে।
১৯৭৫ সালের এ দিনে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। এর মধ্য দিয়ে বাঙালির ইতিহাসে এক কালিমালিপ্ত অধ্যায় সংযোজিত হয়েছিল। সেদিন ঘাতকেরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, আরিফ, বেবি ও সুকান্ত, আবদুল নাঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণিকেও হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিলকেও সেদিন ঘাতকদের হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছিল। তবে সেই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।