তাহিরপুর হাওর এলাকার শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ছেড়ে কাজের সন্ধানে
এম এ রাজ্জাক-
তাহিরপুরে এ বছর অকাল বন্যায় বোরো ও আমন ফসল নষ্ট হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। ফলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ছেড়ে অনেকেই পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য কাজ ও ভাতের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে বিভিন্ন শহরে।ফসল ডুবে যাওয়ায় অভিবাবকরা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে না পারায়, শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় লেখাপড়া ছেড়ে কেউ শহরের দিকে যাচ্ছে, আবার কেউ এলাকাতেই বিভিন্ন কাজকর্মে লেগে পড়েছে। এই দুর্যোগ মূহুর্তে শিক্ষার্থীদের পরিবারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনর্বাসন করা না হলে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীরা আর স্কুল কলেজে ফিরতে পারবে কিনা এ নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যপারে সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবুল হোসেন খাঁন জানান- এ উপজেলার মানুষের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসল, আর তাহিরপুর সীমান্তবর্তী তিনটি কয়লা শুল্কষ্টেশন বড়ছড়া, ছাড়াগাও ও বাগলী। এগুলোও এবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার অনেক পরিবারের মধ্যে কষ্ট দেখা দিয়েছে। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী কাজ কর্ম করার জন্য অনত্র চলে যাচ্ছে।
উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খসরুল আলম জানান- পরিবারের অভাব-অনটন মেটাতে এলাকার শত শত শিক্ষার্থী কাজের সন্ধানে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে চলে যাওয়ায় তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এসব শিক্ষার্থীদের পরিবারকে আগামী বোরো ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত পুনর্বাসন করা না হলে কাজে যাওয়া শিক্ষার্থীদের হয়ত শিক্ষা জীবনে আর ফিরে হবে না।
উপজেলার জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোদাচ্ছির আলম সবুল ও সহকরী শিক্ষক বাদল চন্দ্র তালুকদার জানান, এ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আফছারুল, ৯ম শ্রেনীর ছাত্র শাহানশাহ, একই শ্রেনীর সঞ্জিত পাল ও বিপ্লব পালসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে কাজের জন্য শহরে চলে গেছে। এসব শিক্ষার্থীদের পরিবার এবছর ফসল হারিয়ে অর্থিক দুর্দশায় পড়লেও তাদের কোনো কর্মসংস্থান কিংবা সরকারি সাহায্য – সহায়তা পায়নি বলে তারা কাজের সন্ধানে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্র শাহানশাহ জানায়- পরিবারের অভাব দেখে সহ্য করতে না পেরে কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে একটি গার্মেন্টস কোম্পানীতে চাকুরী নিয়েছে। ঢাকায় কাজ করে মা- বাবা, ভাই- বোনদের খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। লেখাপড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায় লেখাপড়া আর কপালে জুটবে কি না এখনও বলতে পারছিনা।
তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রমা কান্ত দেবনাথ জানান, ‘উপজেলায় উচ্চ মাধ্যমিক, দাখিল মাদ্রাসায় মিলিয়ে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কাগজে-কলমে ১৪ হাজার ১শ ২১ জন থাকলেও বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি শতকারা ৪০ ভাগ কম রয়েছে। অভাবে পড়ে বিদ্যালয় ছেড়ে কাজের সন্ধানে চলে যাওয়ায় শিক্ষার সুযোগ থেকে তারা এখন বঞ্চিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাবিরুল ইসলাম জানান, ‘বিদ্যালয় ছেড়ে শিক্ষার্থীদের চলে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই, বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো’। তিনি বলেন, ‘হাওর এলাকার শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর পরিবারকে পুনর্বাসন ও সরকারি সহায়তা দিয়ে তাদের লেখাপড়ার বিদ্যালয়ের খরচ ফ্রি করে দেয়ার চেষ্টা করবো।’