স্পেনের বার্সেলোনায় সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হওয়ার পর সেখানকার, বিশেষ করে রিপোল এলাকায় বসবাসরত মুসলিমরা রয়েছেন আতঙ্কে। কারণ, সন্ত্রাসী হামলার জন্য যারা দায়ী তারা সবাই মুসলিম। এ জন্য স্পেনের স্থানীয়রা মুসলিম সম্প্রদায়কে দেখতে পারেন সন্দেহের চোখে। তারা মুসলিমদের ভাবতে পারে ওই হামলায় দোষী হিসেবে। ফলে তাদের কাউন্টি বা মহল্লাহ সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে স্প্যানিশরাÑ  এমন আশঙ্কায় রয়েছেন রিপোল এলাকার ১২ হাজার মুসলিম। এ খবর দিয়েছে অনলাইন স্কাই নিউজ। এতে আরো বলা হয়েছে, বার্সেলোনায় সন্ত্রাসী হামলায় উঠে এসেছে সাবেক একজন ইমামের নাম। ওই হামলায় তিনি জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে।  বলা হচ্ছে, তিনি বার্সেলোনার রিপোল এলাকার আন নূর মসজিদের সাবেক ইমাম। নাম আবদেল বাকি এস সাতি। স্থানীয়রা বলেছেন, তিনি ওই মসজিদে কয়েক মাস আগে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বলা হয়, রিপোল এলাকায় অবস্থিত ওই মসজিদটিতে যারা প্রার্থনা করতে যান তাদের বেশির ভাগই মরক্কোর নাগরিক। মুসল্লিদের মধ্যে যারা সেখানে নামাজ আদায় করতেন, যাদেরকে কমবেশি চেনা যেতো তাদের কেউ ঘাতক হয়েছে। আবার কেউ নিহত হয়েছে। মসজিদের সভাপতি আলী ইয়াসিন। তিনি বলেন, বার্সেলোনায় যা ঘটেছে তা আমাদের জন্য বিরাট এক হতাশার বিষয়। এটা আমাদের জন্য, স্প্যানিশ জনগণ, বিশ্ব ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি বিরাট আঘাত।  তিনি আরো বলেছেন, সন্দেহজনক ওই ইমাম কয়েক মাস আগেই ওই মসজিদে নামাজ পড়ানো বাদ দিয়ে দেন। ওদিকে বুধবার আলকানার এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা তৈরির সময় দুর্ঘটনায় তা বিধ্বস্ত হয়েছে। স্পেনের পুলিশ সন্দেহ করছে সেখানকার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে থাকতে পারে ওই ইমামের দেহ।  তিনি কি কোনো উগ্রপন্থি আদর্শ প্রদর্শন করছেন? তিনি কি উগ্রপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বয়ান দিতেন? কোনো শিক্ষা দিতেন? এসব প্রশ্নের উত্তরে ইয়াসিন বলেছেন, সাবেক ওই ইমাম ছিলেন খুবই স্বাভাবিক। তিনি যদি এমন কোনো কর্মকা-ে জড়িত থাকতেন তাহলে আমরা তাকে থামিয়ে দিতাম। তবে মসজিদের বাইরে যা ঘটে তার ওপর তো আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। সেসব বিষয়ে আমরা জানি না। কয়েকদিন আগেই পথচারীদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর সময় পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে ৫ হামলাকারীকে। এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন ওই মসজিদের সভাপতি। তিনি কথা বলার এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন। বলেন, ওই যুবকদের কিভাবে উগ্রপন্থি করে তোলা হয়েছে তা তারা জানেন না। তিনি আরো বলেন, কেউ না কেউ তাদের ব্রেনওয়াশ করেছে। ওদিকে হামলার সন্দেহজনক হামলাকারী ইউনূস আবু ইয়াকুব (২২) পালিয়েছে। ইউরোপজুড়ে তাকে খোঁজা হচ্ছে। বার্সেলোনায় গাড়ি চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যায় সন্দেহভাজন সে। তার কাজিন ফাতিমা বলেছেন, ইয়াকুবের সঙ্গে বা তার পরিবারের সঙ্গে এক মাসেরও বেশি সময় কোনো কথা হয় নি তার। হামলায় নিহতদের স্মরণে যেসব আত্মীয়-স্বজন যোগ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে ছিলেন ফাতিমা। তারা এক মিনিট নীরবতা পালন করে কেঁদে ফেলেন। ফাতিমা বলেন, এ যেন এক দুঃস্বপ্ন। মাঝে মাঝেই আমি বিস্মিত হয়ে যাই। ঘুম থেকে জেগে যাই। বলি, এমন হামলা ঘটতে পারে না। কিন্তু ঘটে গেছে তা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn