তাহিরপুরে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি
তাহিরপুরে বিভিন্ন নদী আর পাহাড়ী ছড়ার ভাঙনে বর্ষার শুরু থেকেই ব্যাপক আকার ধারন করছে। স্বাভাবিকের তুলনায় অতি বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ী ছড়া দিয়ে উজান থেকে পানি এসে নদীর পানি কয়েক গুন বেড়ে যাওয়ায় নদী আর বিভিন্ন ছড়ার পাড় ভাঙন আগের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন বেশী হচ্ছে। এ উপজেলার নদ-নদী ও পাহাড়ী ছড়ার করাল গ্রাসে কিছু বাদ যাচ্ছে না। পাহাড়ী ছড়া দিয়ে উপর থেকে বালি এসে আর নদী ভাঙনের ফলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ চিরতরে বালির নিচে চাপা পড়ে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলা বেশ কয়েকটি বিশাল নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে, যাদুকাটা, পাটলাই, রক্তি ও বৌলাই নদী। এসব নদীর অব্যাহত ভাঙনে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে বসত বাড়ী ও ফসলী জমি। হারিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, ফসলী জমি, পুকুর, বাজার, স্কুল, রাস্তাঘাট, সরকারি স্থাপনাসহ অন্যান্য সম্পদ। অন্যদিকে, তাহিরপুর সীমান্তবর্তী এলাকার লাউড়েরগড় থেকে বিরেন্দ্রনগর পর্যন্ত প্রায় ২৩টি পাহাড়ী ছড়া দিয়ে উজান থেকে পানির সঙ্গে বালু এসে সীমান্তবর্তী কয়েক হাজার হেক্টর ফসলী জমি বালির নিচে চাপা পড়ে এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
লাউড়েরঘর গ্রামের আবুবক্কর সিদ্দিকসহ অনেকেই জানান, এ উপজেলার নদী ভাঙ্গনে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে লাউড়ের গড়ের বিশাল গোচরণ ভূমি, কবরস্তান ও রাস্তাঘাট। তারা আরোও জানান, নদী ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ঘাগটিয়া, গড়কাটি, বিন্নাকুলি, রাজার গাও, লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম, আনোয়ারপুর বাজারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম। ক্রমাগত নদী ভাঙনে এ উপজেলার শত শত পরিবার ফসলি জমি, বাগান, পুকুর হারিয়ে এখন সহায় – সম্বলহীন ভাবে দিনযাপন করছেন।
তাহিরপুরপুর সীমান্তবর্তী জঙ্গলবাড়ী গ্রামের আইনাল হক ও তোতা মিয়া জানান, গত কয়েক বছরে এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪ টি ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে বেশি নদী ভাঙন ও আর ওপার থেকে ভেসেঁ আসা বালুর আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে বালিজুড়ি, বাদাঘাট, উত্তর বড়দল ও উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন। এ চার ইউনিয়নে নদীর অব্যাহত ভাঙন আর পাহাড়ী চড়া দিয়ে ভেসেঁ আসা বালু এসে ফসলী জমি আর বাড়ীঘর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কলাগাও গ্রামের আনিস ও ইদ্রিস আলী ফকির জানান, গত কয়েকদিনের অতিবৃষ্টি পাতের কারণে তাহিরপুর সীমান্তবর্তী এলাকার চাঁনপুর, রাজাই, বুরঙ্গচড়া, বড়ছড়া, লাকমা, লালঘাট, চারাগাও, কলাগাও, জঙ্গলবাড়ী বেড়ী বাধঁ, লামাকাটা, সুন্দরবন্ধ, রন্ধুছড়া, ও বাগলী ছড়া দিয়ে পাহাড়ী পানির স্রোতে আর বালু এসে বেরী বাধঁ ভেঙ্গে ফসলী জমি ও বসত ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য হাসান মিয়া বলেন, “নদী ভাঙন আর পাহাড়ী ছড়া দিয়ে বালু আসার রোধে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছে বহু আবেদন করলেও এ সমস্যা সমাধানে আজ পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।” সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, “নদী ভাঙ্গন আর সীমান্ত এলাকায় ওপার থেকে বালু এসে ফসলী জমি আর বাড়ীঘর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অচিরেই এসব রোধ করা জররী প্রয়োজন, না হয় সীমান্তবর্তী এলাকা বালু আগ্রাসনে বিরান ভূমিতে রূপ নিবে।”