৫১টি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি জামায়াতের
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে ৫১টি আসনে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। এসব আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার জামায়াত ও শিবির নেতাদের মধ্যে যারা ঢাকা ও অন্যান্য শহরে রয়েছেন তারাও ঘনঘন এলাকায় যাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন দলীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া, দলীয় ও নিজস্ব অবস্থান থেকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তারা। খোঁজ নিচ্ছেন ভোটারদের। জামায়াতের ঢাকা মহনগরের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। সে ক্ষেত্রে দলের নিবন্ধন পাওয়া না পাওয়ার দিকে তাকাচ্ছেন না তারা। দলের নিবন্ধনের জন্য শেষ চেষ্টা করবেন। তবে নিবন্ধন ফিরে না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন প্রার্থীরা।
এক্ষেত্রে সারা দেশে জরিপ চালিয়ে ৫১টি আসনে নির্বাচন করার ব্যাপারে এক মত হয়েছে দলটি। তবে এই সংখ্যায় হেরফের হতে পারে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু বিশেষ ৩৫টি আসন চিহ্নিত করেছে যেগুলোতে জোটগতভাবে মনোনয়ন না পেলে কোনো ছাড় দিবে না। গত আন্দোলনের সময় যেসব নির্বাচনী এলাকায় বেশি শক্তি প্রদর্শন করেছে এবং যেসব এলাকায় বেশি নেতাকর্মী মারা গেছে সেসব আসনে মোটেও ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ২০ দলীয় জোট মনোনয়ন না দিলে প্রার্থীরা বিদ্রোহী হয়ে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে অংশ নিবেন। একই সঙ্গে দলের নিম্ন পর্যায় থেকে হাই কমান্ড পর্যন্ত নেতারা বড় ধরনের কোনো আন্দোলনে না যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নীরবে শুধু সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের কাছে গিয়ে আস্থা অর্জনই মূল কাজ ধরে এগোচ্ছেন। এক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো সভা-সমাবেশে না গিয়ে ঘরোয়া কর্মসূচিকেই বেছে নিয়েছেন। দলীয় কর্মসূচি পালনে অবলম্বন করা হচ্ছে কৌশল।
কয়েক বছর আগে শিবির থেকে বিদায় নেয়া জামায়াতের একাধিক তরুণ নেতা বলেন, যেসব নির্বাচনী আসনে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রয়েছেন তারা নির্বাচন করতে চাইলে সে আসনে জামায়াতের অন্য কোনো নেতা প্রর্থিতা করতে চাইছেন না। শিবির থেকে আসা তরুণ জামায়াত নেতাদের নির্বাচনে প্রার্থিতা করার জন্য অগ্রাধিকার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে হেভিওয়েট কোনো নেতা থাকলে সেটা অন্য বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রার্থী ঠিক করেই নির্বাচনী কাজে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন তারা।
জামায়াতের ঢাকা মহানগরের এক নেতা বলেন, আমাদের কাজ কখনও থেমে থাকার সুযোগ নেই। কখনো থেমেও থাকেনি। সরকারের সীমাহীন নির্যাতনের মধ্যেও আমরা কাজ করেছি। সব সময় মাঠে থেকেছি। এখনও আছি। তবে এখন শুধু পলিসি পাল্টিয়েছি। এমনও নেতা রয়েছেন যার নামে ১৫০টির বেশি মামলা রয়েছে। এমন অনেক নেতা আছেন যিনি এক বছর ধরে জেলে অবস্থান করার পরও তার নামে বহু মামলা হয়েছে। তারপরও আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে সবার আগে আমরা মাঠে নেমেছি। কিন্তু আমরা প্রতিবাদ মিছিল করলে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে বলে ফজরের পরে সংক্ষিপ্ত মিছিল ও সমাবেশ করেছি। এবং কয়েকদিন করেছি। এর পর আমরা সাধ্যমতো সারা দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগিতা পাঠিয়েছি। সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক তাদের পাশে আছি। কয়েকদিন আগে বড় বন্যার সময়ও সারা দেশ থেকে আমরা সাধ্যমতো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ত্রাণ পাঠিয়েছি। এখনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমরা কাজ করছি। গৃহহীনদের বাড়ি নির্মাণে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। একই সঙ্গে যেসব আসনে নির্বাচন করার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে সেখানেও সামাজিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শিবিরের বর্তমান নেতৃত্বে থাকা একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনের সময় আমাদের বড় একটা অংশ মাঠে থেকে নির্বাচনের কাজ করেন। হাই কমান্ড থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যেসব এলাকায় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছে সেসব এলাকায় কাজ করার জন্য। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি মানুষের কাছেও আস্থা অর্জন করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শহরে অবস্থানরত নেতারা এলাকার সাবেক শিবির ও বর্তমান জামায়াত নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। ছুটে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের কাছে। কৌশলে ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন। যেন খুব সহজেই নির্বাচনের সময় তাদের কাছ থেকে ভোট পাওয়া যায়। সদ্য কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া শিবিরের সাবেক এক কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবাই এলাকায় কাজ করছেন। আমাদের প্রত্যেক প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য সম্ভাব্য সকল নির্বাচনী পরিকল্পনা করে এখন থেকেই কাজ করছি। দলীয়ভাবে এখন নির্বাচনকে অনেক বড় এজেন্ডা ধরে কাজ করা হচ্ছে।