রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) নেতাদের সামনে ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এই সঙ্কট সমাধানে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তিনি।মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দফতরে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম ইস্যুতে ওআইসি কন্ট্যাক্ট গ্রুপের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ওই প্রস্তাব তুলে ধরেন। ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ আল উথাইমিন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বেশি দেরি হওয়ার আগেই রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান করুন। রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশ পূর্ণ বাস্তবায়নসহ ওআইসির সামনে ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।এসব প্রস্তাবের মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে মিয়ানমারে ফেরত ও সংখ্যালঘু জাতিগত রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি বলে দেশটির সরকার যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার অবসান চেয়েছেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, আমরা জাতিগত নিধনের অবসান দেখতে চাই। আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন, রাখাইনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের চলমান সামরিক অভিযান ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, বেশি দেরি হওয়ার আগেই রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আমি ওআইসির দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশিরা ওআইসি’র যে কোনো পদক্ষেপে অংশ নিতে প্রস্তুত আছেন।

প্রধানমন্ত্রীর ছয় প্রস্তাব

>>রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের শিগগিরই অবসান।

>> বেসামরিকদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের ভেতরে সেফ জোন বা নিরাপদ অঞ্চল তৈরি।

>>জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ নিঃশর্তভাবে অবিলম্বে বাস্তবায়ন।

>>মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ওআইসির দেশগুলো থেকে বাংলাদেশকে জরুরি মানবিক ত্রাণ সহায়তা দিতে হবে।

>> বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবিলম্বে মিয়ানমারে ফেরতের ব্যবস্থা করা।

>> সংখ্যালঘু জাতিগত রোহিঙ্গাদেরকে বাঙালি বলে মিয়ানমার সরকারের অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে।

গত ২৫ আগস্ট বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাংলাদেশমুখী ঢল শুরু হয়েছে। রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, সেখানে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। মিয়ানমারের এ অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।জাতিসংঘ বলছে, সহিংসতায় বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজারে পৌঁছেছে; দিনে গড়ে প্রায় ১৮ হাজার জন বাংলাদেশে ঢুকেছেন।রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার মুখে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি। ভাষণে রাখাইনের সহিংসতায় কৌশলে দায় চাপিয়েছেন রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপরই। তিনি বলেছেন, অনেক রোহিঙ্গা এখনো রাখাইনে অবস্থান করছে। বহু মুসলিম মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে এমন খবরে আমরা উদ্বিগ্ন।ভাষণে সু চি বলেন, এ পলায়নের ঘটনা কেন ঘটছে আমরা তার কারণ খুঁজে বের করতে চাই। যারা পালিয়ে গেছে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। কূটনীতিকরা রাখাইন সফর করতে পারবেন।জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে সু চির অংশ নেয়ার কথা থাকলেও রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করেন। এদিকে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের এই অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে নিউ ইয়র্কে রয়েছেন। অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবসানে ও শরণার্থীদেরকে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাবেন তিনি।সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশন চলবে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। জাতিসংঘ বলছে, রাখাইনে যে সামরিক অভিযান চলছে তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।ওআইসি কন্ট্যাক্ট গ্রুপের ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সঙ্কটের শেকড় মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারকে খুঁজে বের করতে হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn