গানে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কী? নাকি চ্যানেল মালিক বলেই টিভিতে গানের একক অনুষ্ঠান করা? গান কী তিনি নিয়মিতই করবেন? এই যে তাকে নিয়ে এতো সমালোচনা চারদিকে, সে বিষয়ে তিনি নিজে কী ভাবছেন? এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হই ড. মাহফুজুর রহমানের কাছে। রাজধানীর কারওয়ানবাজারে এটিএন বাংলার কার্যালয়ে বসে দীর্ঘ এক আলাপচারিতায় তিনি জানান গান করা নিয়ে তার অনেক ভাবনার কথা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ব্যবসার গোড়াপত্তন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ, নিজের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অনেক গল্প। সেগুলো পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো। এবার ঈদুল আজহায় এটিএন বাংলায় সম্প্রচারিত তার একক সংগীতানুষ্ঠান ‘স্মৃতির আল্পনা আঁকি’। সেটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে, সমালোচনাও প্রচুর। কিন্তু হঠাৎ করেই কেন গানের একক অনুষ্ঠানের আয়োজন?

ড. মাহফুজুর রহমান: একদমই হঠাৎ করে নয়। গানের সঙ্গে আমার সখ্য নতুন কিছু নয়। যারা আমাকে জানে না তারাই এমন কথাই বলবে। যারা আমাকে হিংসা করে, আমার ছায়ায় থেকে টিভি চ্যানেলের মালিক হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন তারাই আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সমালোচনা করে বেড়াচ্ছেন। অকৃতজ্ঞরা কোনোদিন সম্মানিত হয় না। কিন্তু যারা আমাকে জানেন ও চেনেন তারা ঠিকই এটাও জানেন যে, আমি দীর্ঘদিন ধরে শুধু চ্যানেল ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত নই।

আমি গান, নাটক ও সিনেমার সঙ্গেও জড়িত। আমি রিয়াজ-শাবনূরের ভালোবাসি তোমাকে ছবির মতো সুপারডুপার হিট ছবির গল্প ভাবনায় ছিলাম। সিনেমা প্রযোজনাও করেছি। সেই সূত্রেও আমাকে গান নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়েছে।আমি অসংখ্য নাটকের গল্প লিখেছি। আমি নিজের হাতে লিখি না। কখনো আইডিয়াটা বলে দেই অন্য কেউ চিত্রনাট্য করে। কিংবা ফ্রি থাকলে আমি বলি অন্য কেউ নোট করে নেয়। আমার গান অনেক নাটকেও ব্যবহার হয়েছে। আমি অনেক গান লিখেছি। কই, সেগুলো নিয়ে তো সমালোচনা হয়নি। তবে এখন হচ্ছে কেন? আসলে আমি বলব আমার অনুষ্ঠানটি প্রচারের পর টিআরপিতে সবাই এটিএন বাংলা থেকে পিছিয়ে গেছে। তাই হিংসা করেই সমালোচনায় মেতেছে। গেল কয়েক বছরের মধ্যে আর কোনো অনুষ্ঠান এতো দর্শক দেখেননি।
কিন্তু টেলিভিশনগুলোর টিআরপিতে তো আপনার অনুষ্ঠানটি বেশ পেছনে?
ড. মাহফুজুর রহমান: ভোগাস, সব ভোগাস। দেশে টিআরপি তালিকার নামে যেটি প্রকাশ করা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণই ভোগাস। বিজ্ঞাপন সংস্থার কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে টেলিভিশনের কিছু অসাধু লোকদের সঙ্গে জোট করে এই টিআরপি রেটিং পদ্ধতি চালু করেছে। এর কোনো ভিত্তিই নেই। সবই বিজ্ঞাপন দেয়া-নেয়ার ধান্দা। গেল কয়েক বছরে সেটি প্রমাণও হয়েছে।লক্ষ্য করলে দেখবেন এই টিআরপি রেটিংয়ের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত নয় যেসব চ্যানেল সেসব চ্যানেলের অনুষ্ঠান সবচেয়ে বেশি দর্শক দেখলেও টিআরপিতে তার নাম থাকে না। টিআরপিতে এগিয়ে থাকে ওইসব দালালের চ্যানেল আর অনুষ্ঠান। আমি সেসব মানি না। আর মানার কারণও নেই। দেশের প্রায় সব অঞ্চলের সব শ্রেণির দর্শক আমার গানের অনুষ্ঠানটি দেখেছেন। তারা বিনোদিত হয়েছেন। আলোচনা করছেন। কেউ কেউ সমালোচনাও করছেন। কিন্তু টিআরপি রেটিং কী বলছে? হাস্যকর বিষয়।আমরা শিগগিরই টেলিভিশন মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এই ভোগাস টিআরপি বন্ধে ব্যবস্থা নেব। অবশ্য এরই মধ্যে এই সিস্টেমটির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছেও। সামনে টিভি চ্যানেলগুলো পে-সিস্টেমে চলে গেলে এ ধান্ধাটি বন্ধ হয়ে যাবে।মেনে নেয়া যায় গেল ঈদে সবচেয়ে বেশি দেখা অনুষ্ঠান ছিল আপনার গানের অনুষ্ঠানটি। কিন্তু এই যে চারদিকে এতো সমালোচনা সেগুলো কীভাবে দেখছেন?
ড. মাহফুজুর রহমান: আমার গান নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তাদের যোগ্যতা কী? জানতে চাই আমি। আমার গান নিয়ে যদি আব্দুল হাদী, সাবিনা ইয়াসমিন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শেখ সাদী খান, আলাউদ্দিন আলী, খোরশেদ আলম, রুনা লায়লা, সুবীর নন্দি, কুমার বিশ্বজিত, এন্ড্রু কিশোর, কনক চাঁপার মতো গানের মানুষরা সমালোচনা করতেন বা আমাকে মন্দ বলতেন আমি লজ্জিত হতাম। গান আর না করার চিন্তা করতাম। কিন্তু দেখেন তারা কিন্তু কেউ সমালোচনা করেননি। কারণ, গান নিয়ে আমার জানোশোনা আছে এটা তারা খুব ভালো করেই জানেন।
আমি তো কখনো বলিনি যে আমার কণ্ঠ কোকিলের। আমার গান শুনে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে পাগল হয়ে যাবেন। কারও হাতে পায়েও ধরিনি যে আমার গান শুনতে হবে। আজকাল তো হাতে পায়ে ধরেই শিল্পচর্চা হচ্ছে। আমি তো তা করিনি। তাল, লয়, সুর ঠিক রেখে গান করেছি। নিজের গলাটা যেমন তাই দিয়েছি। মেশিন দিয়ে মিষ্টি গায়ক সাজিনি।সত্যি কথাটা হলো গান নিয়ে আজীবনের ভালোবাসা ছিল নিজের ভেতর। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গানের সঙ্গে আছি। তাই ইচ্ছা হলো গান নিয়ে কিছু একটা করি। তাই শখের বশেই এই অনুষ্ঠানটি করেছি। যেদিন অনুষ্ঠানটি প্রচার হয় সেদিন আমি ইন্দোনেশিয়ায় ছিলাম। সেখানে বসেও শত শত কল আর মেসেজ পেয়েছি, তারা সবাই অভিনন্দন জানিয়েছেন আমাকে। দেশের অনেক বিখ্যাত, প্রখ্যাত, গুণী গানের মানুষেরাও আছেন সেই তালিকায়।তবে যারা সমালোচনা করছেন তারা কেন করছেন? তারা কী চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন যে গান আমার চেয়ে বেশি বোঝেন বা জানেন? পারবেন না। কারণ, যাদের কোনো যোগ্যতা থাকে না তারাই সমালোচনা করে। আর এখন ফেসবুকের যুগ। এই মাধ্যমটি আমাদের প্রচুর অলস আর সমালোচনাপ্রবণ করে তুলেছে। সারাদিন আমরা ফেসবুকে অন্যের সমালোচনায় মেতে থাকি। কখনো কখনো সীমাও অতিক্রম করি।

আমি খুব কষ্ট পেয়েছি ফেসবুকে আমার কিছু ছবি দেখে। যেখানে ফটোশপ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আমাকে তুলনা করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে মূলত আমাকে খোঁচাতেই। কিন্তু কবিগুরুকেও তো ছোট করা হলো। আমাদের মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকছে সেই কথা ভাবার সময় হয়েছে। আপনার যেটা ভালো লাগে না সেটা এড়িয়ে যান। জোর করে কেন ভালো লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। কিংবা আপনার ভালো লাগে না বলে কেন সেটাকে সেরা বাজে বলতে হবে।অনেকের পাশাপাশি একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদককেও দেখেছি আমাকে ছোট করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার নামটা আমি বলতে চাই না। তার মতো ছোট আমি নই। শুধু বলব, তোমার মতো কতো সাংবাদিক এই মিডিয়াতে এসেছে এবং হারিয়েও গেছে। কে তার খবর রেখেছে। আমার তো সময় আরও কম। তোমাকে নিয়ে ভাবার রুচিও নেই। একটা মাহফুজুর রহমান হয়ে দেখাও।

গানের প্রতি আপনার গভীর ভালো লাগা। সেই ভালো লাগার শুরুটা কোথা থেকে। তার কিছু গল্প শুনতে চাই…….

ড. মাহফুজুর রহমান: আমার দাদার ছিল আমদানি-রফতানি ব্যবসা। আমাদের বাবারা ছিলেন চার ভাই। বড় চাচা হাবিবুর রহমান ছিলেন অন্য পেশায়। তিনি ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজের প্রথম মুসলিম অধ্যাপক। আর বাবাসহ বাকি দুই চাচা ছিলেন ব্যবসায়ী। আমাদের বিজনেস ছিল ধর্মতলা। দেশভাগের পর আমরা বাংলাদেশে চলে আসি। আমার বাবা তখন কলকাতা থেকে মসলা ইমপোর্ট করতেন। ব্যবসার কাজে প্রতি মাসে কলকাতায় যেতেন।সেখান থেকে তিনি বিখ্যাত লেখকদের বই নিয়ে আসতেন। সেই সময় ছিল গ্রামোফোন রেকর্ডের যুগ। বাবা বিভিন্ন শিল্পীর গানের রেকর্ড কলকাতা থেকে আনতেন আমার জন্য। ১৯৭১ সালে আমাদের বাড়ি লুট হয়। আমার মায়ের গয়না, বাড়ির আসবাব সবকিছু লুট হয়। আর্মিরা আগুন দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ শেষে ইন্ডিয়া থেকে দেশে আসার পর আমার সবচেয়ে আফসোস হয় গানের রেকর্ড আর বইগুলোর জন্য। অনেক খারাপ লেগেছিল। সেগুলো অরজিনাল বইয়ের প্রিন্ট ছিল। সেই বই আর রেকর্ডের সংগ্রহ আমি এখনো করতে পারিনি।সে যাই হোক, বাবার এনে দেয়া সেসব রেকর্ড শুনে শুনে গানের পোকা হয়ে গিয়েছিলাম। খুব ভালো গাইতামও। স্কুল-কলেজের প্রোগ্রামে আমি গান করতাম। তবে গানটা শেখা হয়নি ওস্তাদ ধরে। গান শিখত আমার বড় বোন। সাত ভাইয়ের এক বোন ছিল আমার। বাসায় বোনকে গান শেখাতে দুজন গানের টিচার আসতেন। আমার বাবা আমাকেও গান শিখতে বলতেন। কিন্তু আমি মাঠে খেলাধুলা করতে খুব পছন্দ করতাম। তখন স্কুলে পড়ি, ঘরে বসে গান শেখার বিষয়ে গুরুত্ব দিইনি।

কিন্তু বিভিন্ন সময় আমি চেষ্টা করেছি গিটার, বেহালাসহ নানা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে। হয়নি। আমার জীবনে খুব বেশি পরাজয় নেই। তবে একটা পরাজয় আমাকে আজও কষ্ট দেয়। সেটি হলো আমি বেহালা বাজাতে পারিনি। একবার মাথায় ঝোঁক এলো বেহালা বাজানো শিখব। এবং আমার একটি অভ্যাস আছে একা একা সবকিছু শিখতে চাওয়া। অনেক আগ্রহ নিয়ে আড়াই হাজার পাক রুপি খরচ করে বেহালা কিনেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের আগে।সারারাত চেষ্টা করলাম। বেহালার যে মিহি সুরটা সেটাই তুলতে পারলাম না। একপর্যায়ে রাগে বেহালাটা ভেঙে ফেলি। তবে বেহালায় সেই সুরটা আমি তুলতে পেরেছিলাম বাংলাদেশেরই একজন বিখ্যাত বেহালা বাদক রুপসীর কাছ থেকে। তিনি বেহালায় পিএইচডি করেছেন। এত চমৎকার আর সহজ করে তিনি শেখালেন আমি অবাক হয়ে গেলাম। রুপসী আমার গানের প্রতি অনুরাগকে সম্মান জানিয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকলেই মানুষ গুণী হয় না, স্পেশাল হয় না। কিছু বিষয় চর্চা করেও দারুণ রপ্ত করা যায়।

আমি তো একজন ক্যামেরাম্যান, এডিটর হিসেবেও যে কাউকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি। এগুলো আমি ওস্তাদ রেখে শিখিনি। কিন্তু চ্যানেল চালাতে গিয়ে প্রথমদিকে আমাকে এগুলো করতে হয়েছে। আমি ইভা রহমানের একটি গানের ভিডিও করেছিলাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকেশনে। সেটি করতে আমরা এক বছর সময় নিয়েছিলাম। গানের ভিডিওটি খুবই প্রশংসিত ছিল।শুধু রুপসীই নন, উপমহাদেশের জনপ্রিয় গানের মানুষ বাপ্পি লাহিড়িও গানের প্রতি আমার জানাশোনা ও সেন্স দেখে প্রশংসা করেছেন। অনেকেই হয়তো জানেন না যে জনপ্রিয় শিল্পী ইভা রহমানের ৩২টি অ্যালবামের সবগুলোরই মাস্টারিং করেছি আমি। সেসব অ্যালবামে বাপ্পা মজুমদার, আইয়ূব বাচ্চু, ইবরার টিপুরা কাজ করেছেন। ইভারই একটি হিন্দি অ্যালবাম করিয়েছিলাম। বাপ্পি লাহিড়ি সেটির মিউজিক করেছিলেন।

তিনি যখন গানগুলো রেডি করে আমাকে শোনাতেন আমি সেখানে একটু তবলা ব্যবহার করতে করতাম। বলতাম, বেহালাটা কম হয়েছে আরেকটু দিন। পিয়ানো থাকলে আরও ভালো লাগত। আমার এসব কথা শুনে বাপ্পি লাহিড়ির সহকারীরা ভয় পেতেন এই বুঝি তাদের ওস্তাদ রেগে যান। এত বড় মাপের গানের মানুষ, তাকে আমি জ্ঞান দিচ্ছি। কিন্তু বাপ্পি লাহিড়িরা গানেও বড়, মনেও বড়। তিনি অবাক হতেন আমার কথায় নানা বাদ্যযন্ত্র বাড়িয়ে কমিয়ে। একদিন তো বলেই বসলেন, – রহমান, তোমার মিউজিক সেন্স দেখে আমি মুগ্ধ। নিয়মিত গান করতে পারতে।আর সেই রহমানের গান নিয়ে মানুষজন সমালোচনা করে। তা করুক, আমার আপত্তি নেই। দেখবেন, এই দেশে সবকিছু নিয়ে সমালোচনা হয়। যত ভালো কাজই করুন না কেন কেউ না কেউ আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে। আপনি গান করে নোবেল পেলেও বলবে, এই ছেলে গানের কী জানে। গানের সব তারা জানে। তো সেজন্য সমালোচনায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সেগুলো নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমি তো জানি আমি কে! শুধু বলব, সমালোচনার সময়টা ভালো কাজে লাগুক।রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হচ্ছে। দেশ, মাটি ছেড়ে চলে আসতে হচ্ছে অন্যের দেশে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের বাপের ভিটায় ফিরিয়ে দিতে পারলে সেইটা হবে জীবনের একটি অর্জন। সমালোচনা করে কিচ্ছু আসবে না।

গানে কী তবে আপনি নিয়মিত হচ্ছেন?
ড. মাহফুজুর রহমান: অবশ্যই। আমি গানে আগেও নিয়মিত ছিলাম। তবে এতটা প্রচারে আসিনি। এবার আসলাম এবং প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছি। আর যারা কিছু না জেনে-বুঝেই আমার সমালোচনায় মেতে উঠেছেন তাদের জন্য বলতে চাই- আমি যা করি তাতে সফল হই। গান করেও আমি সফল হয়েছি। আমি নিয়মিতই গাইব।

কী ধরনের গান ভালো লাগে আপনার?
ড. মাহফুজুর রহমান: আমি ধুমধারাক্কা গানগুলো পছন্দ করি না। আর গানে বিরহটা ভালো, তবে রোমান্টিক গান শুনতে বেশি পছন্দ করি আমি। এজন্য কবিগুরুর গান আমার খুব ভালো লাগে। আর নিজে গাইবার ক্ষেত্রেও রোমান্টিক গানকেই প্রাধান্য দেই আমি।

গান নিয়ে এটিএন বাংলার কী কোনো বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে?
ড. মাহফুজুর রহমান: আমি নিজে যেহেতু গান পছন্দ করি, তাই সবসময়ই চেষ্টা করেছি গানের অনুষ্ঠান দিয়ে দর্শকদের বিনোদিত করতে। আমি চেষ্টা করেছি শিল্পী তৈরি করতে। বেদনাদায়ক হলেও সত্যি, আমাদের দেশে শিল্পী তৈরির মানসিকতা নেই। একজন আব্দুল জব্বার তো চলে গেলেন, তার জায়গা নেয়ার মতো সেই গলা কিন্তু আর নেই। মিলুও (খালিদ হাসান মিলু) চলে গেল অনেকদিন। তার বড় ছেলেটা ভালো গায়। কিন্তু মিলু তো আর আমরা পেলাম না। এভাবে বড় বড় শিল্পীরা সবাই একদিন চলে যাবেন। কিন্তু তারা কেউই কোনো উত্তরসূরি তৈরি করে যাচ্ছেন না। তাহলে আমাদের গানের ভবিষ্যতের কী হবে? লক্ষ্য করে দেখুন, আজকাল বাজে একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে। হুট করে আসে হুট করে যায়। কোনো একজন শিল্পী হুট করে একটা গান দিয়ে রাতারাতি তারকা বনে যায়। তারপর আর খবর থাকে না। এটা খুব খারাপ একটা অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির। শিল্পী তো কোনোদিন মরে না। তাকে চর্চার মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু আজকাল চর্চার চেয়ে শিল্পীরা হিংসা, অহংকার, তারকাগিরি দেখাতে বেশি ব্যস্ত। তারা প্রচুর সমালোচনামুখর। একে অপরের মন্দটা নিয়ে মেতে থাকে। সমালোচনা শিল্প ধ্বংস করে দেয়, শিল্পীকে ধ্বংস করে দেয়। তাই কিন্তু হচ্ছে। আর শিল্পীদের অকালে ঝড়ে যাওয়ার পেছনে ফেসবুকও একটি বিরাট সমস্যা তৈরি করছে। সাধারণ মানুষরা শিল্পীদের সমালোচনায় মেতে থাকছেন। একজন শিল্পী তিন-চার মাস ভালো গান না উপহার না দিলেই বলতে থাকেন, অমুক শিল্পীর দিন শেষ। ওকে দিয়ে আর হবে না। এসব সমালোচনা কিন্তু ওই শিল্পীকে হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। সে এই পেশাটার প্রতি, গানের চর্চার প্রতি টান বা শ্রদ্ধাবোধ কিংবা দায়বোধ যাই বলি না কেন, হারিয়ে ফেলে।

আমি চাই এসব থেকে দূরে রেখে অনেক শিল্পী তৈরি করতে। এটিএন বাংলা শুরু করার পর আমরা অনেক শিল্পী তৈরি করেছি। ইভা রহমান ছোটবেলায় গান শিখত, এরপর শেখেনি। সেই ইভা রহমানকে আমরা জনপ্রিয় শিল্পী হিসেবে তৈরি করেছি। আমার যদি সুর আর তালের জ্ঞান না থাকত, তাহলে আমি শিল্পী তৈরি করতে পারতাম না। আরও অনেকেই এটিএন বাংলাকে ব্যবহার করে আমার সহযোগিতা, পরামর্শে গানের ভুবনে নাম করেছে।আমি গানের প্রতিভার মূল্যায়ন করি। যারা দেশের স্বনামধন্য গানের মানুষ তারা সেটা জানেন। গানের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াতে রিকশাওয়ালাদের নিয়ে একটি প্রতিভা অন্বেষণের আয়োজনও করেছিলাম। আমি ভাই, আসমান থেকে পড়ে গিয়ে হুট করে গান গেয়ে ফেলিনি। গানকে আমি ধারণ করেছি মনের ভেতরে। জীবনের সবখানে। সূত্র: জাগো নিউজ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn