সুনামগঞ্জ ৪ আসনে ইনান চৌধুরী’র প্রার্থীতা ঘোষনাঃ অন্য প্রার্থীরা কি ভাবছেন
সুনামগঞ্জ জেলা জাতীয়পার্টির আমৃত্যু সভাপতি সাবেক মন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ ৪ আসনের কয়েকবারের নির্বাচিত সাংসদ প্রয়াত মেজর(অবঃ) ইকবাল হোসেন চৌধুরীর ছেলে ইনান ইসমাম হোসেন চৌধুরী ইতিমধ্যে নিজেকে তার বাবার নির্বাচনী আসনে প্রার্থী হবার ঘোষনা দিয়েছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তিনি দলীয় নেতাকর্মী সাথে নিয়ে তার বাবা-মা’র কবর জিয়ারত করেন। কবর জিয়ারত শেষে তার শহরের আরপিননগরস্থ বাসভবনে এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মাহফিলের আলোচনায় তিনি আগামী একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ ৪ অর্থাৎ সুনামগঞ্জ উত্তর ও বিশ্বম্ভরপুর আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতে চান বলে নিজের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন। ইনান ইসমাম হোসেন চৌধুরী বলেন,‘নির্বাচনের বয়স না হওয়া এবং পড়াশুনা শেষ না হওয়ায় বিগত নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইনি। তিনি বলেন, আমি সুনামগঞ্জের সন্তান। সুনামগঞ্জ আমার গর্ব। আমার বাবা-মা আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেগেছেন। এলাকার জনগনের জন্য আমার বাবামার জীবদ্দশায় অনেক কিছু করারা পরিকল্পনা থাকলেও তারা তা করে যেতে পারেননি। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমি সে সব অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চাই। তিনি বলেন, পড়াশুনা ও অন্য কারনে স্থায়ীভাবে আমার সুনামগঞ্জে থাকা হয়ে ঊঠেনি এখন থেকে স্থায়ীভাবে সুনামগঞ্জে থাকবো। সুনামগঞ্জবাসীর উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করবো। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টীর চেয়ারম্যান হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ স্যারের সঙ্গে আমি দেখা করেছি। স্যারের দোয়া নিয়ে এসেছি। সকলের সহযোগিতা এবং দলীয় মনোনয়ন পেলে ইনশাল্লাহ নির্বাচন করবো। নির্বাচনীয় গণসংযোগের শুরুতেই তিনি নিজের মহল্লা আরপিন নগরের ঘরে ঘরে গিয়ে সকলের দোয়া চেয়েছেন। এলাকাবাসী তাকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। অতীতে এলাকাবাসী যেভাবে তার বাবা-মায়ের পাশে ছিলেন সেই একই ভাবে আগামীতে তার পাশে থাকবেন বলে তিনি আশা রাখেন।
ইনান হোসেন চৌধুরী’র নির্বাচন করার এই ঘোষনা সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোড়ন তুলেছে। নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করা তরুন, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানের সক্রিয় রাজনীতিতে পদার্পনের ঘোষনাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকের অনেকেই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। ইনান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ইকবাল হোসেন চৌধুরী সামরিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহন করে সুনামগঞ্জ রাজনীতিতে সক্রিয় হন। নিজের ক্যারিস্মাটিক গুণে মেজর ইকবাল সুনামগঞ্জের মানুষের হৃদয় জয় করতে পেরেছিলেন। ইনান বাবার সেই গুণের অধিকারী হতে পারবেন কিনা অনেকে তা নিয়ে ভাবছেন। ১৯৭৫’সালের রাজনৈতি পটপরিবর্তনের পর মেজর(অবঃ)ইকবাল হোসেন চৌধুরী বঙ্গভবনে তার বাহিনী নিয়ে প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোস্তাক আহমদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন । ৩ নবেম্বরের সামরিক অভূত্থানে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগে সামরিক বাহিনী থেকে চাকুরী চলে যায়। চাকুরী হারিয়ে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সুনামগঞ্জে চলে আসেন। সুশৃংখল বাহিনীর সাবেক এক তরুন অফিসার হিসাবে সুনামগঞ্জের মানুষ বিশেষ করে তরুন সমাজ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। পরবর্তিতে সুনামগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে স্থানীয় রাজনীতিতে তার অভিষেক ঘটে। সেই সূত্র ধরে মেজর ইকবাল পরে ১৯৭৯ সাল সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি’র মনোনয়নে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে এবং ১৯৮৮ সালে জাপার মনোনয়ন নিয়ে আরো ২ বার এমপি হন।
মেজর(অবঃ)ইকবাল হোসেন চৌধুরী সর্বমোট ৩ বার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন । সর্বশেষ তিনি খাদ্য মন্ত্রী’র দায়িত্ব পালন করেন। ৫৫ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রেরক্রীয়া বন্ধ হয়ে মারাগেলে তার সহধর্মনী বেগম মমতাজ ইকবাল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাঁর শূণ্য আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের ৩ মাস ১৯ দিন পর বেগম মমতাজ ইকবাল মারা যান। পরে উপ-নির্বাচনে এই আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মেজর (অবঃ) ইকবাল হোসেন চৌধুরী দায়িত্ব পালনকালে সুনামগঞ্জ পৌর-সভার আধুনিকায়ন। জেলার গ্যাস এবং টেলিযোগাযোগের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তার এই অবদান সুনামগঞ্জের মানুষ এখনো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) ইকবাল হোসেন চৌধুরী তার কর্মেরজন্য সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর আসনের জনগনের কাছে ভাল একটা ইমেজ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। বিশেষ করে সুরমার উত্তরপারে তার একটা সমৃদ্ধ ভোট ব্যাংক রয়েছে। ইনান ইসমাম হোসেন চৌধুরী যদি প্রার্থী হন তাহলে এই ভোট ব্যাংক আগামীতে তার পক্ষে কাজ দেবে বলে অনেকে মনে করেন। পিতা-মাতার রাজনৈতিক ইমেজ তার জন্য একটা প্লাস পয়েন্টও বলে মনে করেন তার সমর্থকরা। সুনামগঞ্জ ৪ আসনে আগামী নির্বাচনে জাতীয়পার্টি থেকে শুধু ইনান চৌধুরী যে দলীয় মনোনয় প্রত্যাশি তা নয়। আছেন এই আসনের বর্তমান জাতীয়পার্টির সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। গত নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা জাপার সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদ। জেলা জাপা’র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী খুশনুর ও জেলা জাপা’র যুগ্ম আহ্বায়ক রশিদ আহমদ। সময়ে তারাও এবার এ আসনে জাপার মনোনয় চাইতে পারেন। যুক্তরাজ্য জাপানেতা প্রবাসি কামরুজ্জামান ইতিমধ্যে নিজেকে জাপার প্রার্থী হিসাবে ঘোষণাও দিয়েছেন। ইনান চৌধুরীর প্রার্থীতা ঘোষণা সুনামগঞ্জ রাজনীতিতে বিশেষ তাৎপর্যবহ। কেননা তার বাবা-মা দু’জনেই ছিলেন জাপার জেলা নেতা ও দলীয় সাংসদ। সুনামগঞ্জ ৪ আসনে তাই তার প্রার্থীতার দাবী সহজে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
নতুন প্রজন্মের তরুন ইনান চৌধুরীর প্রার্থীতা ঘোষণাকে কি ভাবে দেখছেন?
‘সুনামগঞ্জ বার্তা’ অনলাইনের পক্ষ থেকে এ প্রশ্ন করা হয় মহাজোটের প্রভাবশালী দুই নেতাকে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক ব্যারিষ্টার এম এনামুল কবীর ইমন এবং জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও বর্তমান সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহকে। এরা দু’জনই প্রতিনিধিত্ব করের তরুন প্রজন্মের রাজনীতির। ইনান চৌধুরী যে আসনে প্রার্থী হবার ঘোষনা দিয়েছেন তারা দু’জনই সেই একই আসন থেকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থীতার দাবী রাখেন। দশম জাতীয় সংসদে ব্যারিষ্টার ইমন এ আসনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেলেও পরবর্তীতে দলের সীদ্ধান্তে জাতীয় পার্টির প্রার্থী পীর মিসবাহ এর অনুকুলে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন। মহাজোটগত নির্বাচন হলে ব্যারিষ্টার ইমন এবারও এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ইতিমধ্যে ঘোষনা দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির জেলা আহ্বায়কও সুনামগঞ্জ ৪ আসনের বর্তমান সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ ‘সুনামগঞ্জ বার্তা’ অনলাইনকে বলেন, দলের প্রার্থীতা যেকেউ চাইতে পারে। যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে দল নির্ধারন করবে কাকে মনোনয়ন দেয়া যায়।
প্রশ্নঃ- আপনি যেহেতু এ আসনের বর্তমান সাংসদ, দল আপনাকে মনোনয়ন না দিয়ে যদি ইনান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আপনার ভূমিকা কি হবে?
-এর উত্তরে তিনি বলেন, দল যাকে যোগ্যমনে করবে আমরা তাকেই মেনে নেবো।
প্রশ্নঃ- ইনান চৌধুরীকে কি আপনি আপনার প্রতিদ্বন্ধি মনে করছেন?
-এ প্রশ্নের ঊত্তরে বর্তমানে বৃটেন সফরত সাংসদ পীর মিসবাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি কাউকে আমার প্রতিদ্বন্ধি মনে করছিনা।
প্রশ্নঃ- আপনি নিজে একজন তরুন সাংসদ ও রাজনীতিবিদ সে হিসাবে রাজনীতিতে নতুন প্রজন্মের একজন তরুনের উত্থানকে আপনি কি ভাবে মূল্যায়ন করবেন?
প্রশ্নের সরাসরি উওর না দিয়ে তিনি বলেন, আমি দেশের বাইরে । জানিনা তিনি কিসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থী হবার ঘোষনা দিয়েছেন। আমার সাথে এনিয়ে কখনো তার খুলামেলা আলাপ হয়নি। দেশে যাবার পর সব কিছু জেনে এ ব্যাপারে মন্তব্য করবো। সেই একই প্রশ্ন করা হয়েছিল ব্যারিষ্টার ইমনকে। ইমন বলেন, এটা আশার কথা যে শিক্ষিত তরুনরা দিনদিন রাজনীতিতে আগ্রহী হচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ট নেতৃত্বে রাজনীতিতে সুস্থধারা ফিরে আসছে। নতুন প্রজন্মরা এতে আগ্রাহান্তিত হচ্ছে। ইনান চৌধুরীর বাবা-মা দু’জনই ছিলেন সৎ এবং সক্রিয় রাজনীতিবিদ। তাদের সন্তান রাজনীতি করবে আমরা তাকে স্বাগত জানাই। সুস্থধারার রাজনীতির জন্য এটা শুভ লক্ষন উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে এটাকে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি বলে কটুক্তি করলেও আমি মনে করি যোগ্যতা থাকলে সন্তান বাবা-মায়ের চেয়ে ভালো করতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চান দেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রবাহিত হোক। মেধাবী, শিক্ষিত তরুন প্রজন্মরা দেশের হাল ধরুক। নতুনরা আগামী দিনের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। দূর্বৃত্তায়নের রাজনীতির অবসান কল্পে আমাদের দেশের তরুন সমাজকে অবশ্যিই এগিয়ে আসতে হবে।