খালেদা জিয়া প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন ছেলের পরামর্শে!
ঢাকা : একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ করে আগামী নির্বাচনে দল থেকে যাদের মনোনয়ন দেয়া হবে, সেই নামের তালিকা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে গুলশান কার্যালয় এবং তারেক রহমান সারাদেশের বিএনপি ঘরানার এনজিও’র মাধ্যমে পৃথক দুটি জরিপ চালান। জরিপে প্রতিটি আসনে তিনজন করে দলীয় প্রার্থীর তালিকা চাওয়া হয়। সেই মোতাবেক ৩০০ আসনে ৯০০ প্রার্থীর নামের তালিকা করা হয়। পৃথক দুই তালিকা থেকে যাচাই-বাছাই করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে, যা লন্ডনে বসে দলের দুই হাইকমান্ড চূড়ান্ত করছেন।
প্রায় ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির প্রার্থী হয়ে যারা বিগত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাদের অনেকেই মারা গেছেন। আবার অনেকেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। কেউ কেউ আবার দলীয় কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। ফলে ওই সব আসনে নতুন প্রার্থী দিতে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদু বলেন, এ মাসেই দেশে ফিরবেন ম্যাডাম (খালেদা জিয়া)। এখন তিনি পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। শুধু মা ও ছেলের সম্পর্কে নয়, উনারা দলের শীর্ষ দুই পদে আছেন। সাবেক এ ছাত্রনেতা বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে তারা আলোচনা করতে পারেন। এ ছাড়া দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে কোন কোন বিষয়ে আলোচনা করবেন বা করছেন তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।’ এদিকে লন্ডন বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, বিশ্রামে আছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন, আগামী নির্বাচনের আগে দলের দুই হাইকমান্ডের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলের দুই কাণ্ডারির মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীতে সাংগঠনিক পদক্ষেপগুলো চূড়ান্ত হবে।
নির্বাচনেরও সময় বেশি বাকি নেই। ২০১৮ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এর আগে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় ও দলীয় প্রার্থী বাছাইসহ বিএনপির বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এছাড়া দলের কিছু নেতাকে মনোনয়ন দেয়া না-দেয়ার ব্যাপারে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপি প্রধান। কারণ বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে তারেক রহমান সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। তাই কারা রাজপথে ছিলেন সে তথ্যও তার কাছে আছে। ২০০৬ সালে ক্ষমতা হারানোর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার এটি তৃতীয় সফর। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে দেশে ফেরার পথে বড় ছেলে তারেক রহমানকে দেখতে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর একবার তিনি লন্ডন যান। ওই সময় চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন তিনি। দুই মাসের বেশি সময় লন্ডনে অবস্থান করে ২১ নভেম্বর দেশে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ১৫ জুলাই লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে প্রথমে হিলটন হোটেলে উঠেছিলেন খালেদা। সেখানে কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পর লন্ডনের কিংস্টনে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন তিনি। ওই বাসায় তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান ছাড়াও প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান সিঁথি ও তার দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান রয়েছেন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের লন্ডনের ওই বাসায় দলের নেতাকর্মীদের অবাধ যাতায়াত নেই। সেখানে এখন ছেলে, পুত্রবধূ, নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া। বিমানবন্দর থেকে মাকে নিজেই গাড়ি চালিয়ে হোটেলে নিয়ে যান তারেক। বিমানবন্দরে স্ত্রী জোবাইদাও ছিলেন। বিমান থেকে নেমে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন খালেদা। বিমানবন্দরের ভেতরে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক এম কয়েছর আহমেদ দলীয় চেয়ারপারসনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।