সম্পত্তির লোভে মাকে পিটিয়েছেন দুই ইঞ্জিনিয়ার ছেলে!
নেত্রকোনায় সম্পত্তির লোভের কারণে দুই ইঞ্জিনিয়ার ছেলের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন এক মা। ভাই-বোনকে বঞ্চিত করে অবৈধপন্থায় পৈতৃক সম্পত্তি নিজেদের নামে ইচ্ছে মাফিক লিখে নিতে সহায়তা না করায় নিজ গর্ভধারিনী মাকে দফায় দফায় মারধর করেছেন তার দুই ইঞ্জিনিয়ার ছেলে। রোববার বিকেলে ছেলেদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে নেত্রকোনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন বৃদ্ধ মা মাজেদা বেগম (৬৫)। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের ভটপুর গ্রামের মো. নূরুল হকের স্ত্রী মাজেদা বেগম। ছেলেদের হাতে বেধড়ক মারধরের পর একেক জায়গায় একেক সময় অবস্থান করার পর ৮ সেপ্টেম্বর তিনি স্বামীর বাড়ি থেকে নেত্রকোনা সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের কার্লি গ্রামের বাবার বাড়ি চলে এসেছেন। ছেলেদের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পারিবারিকভাবে কোনো সমাধান না পেয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাজেদা বেগম বলেন, সংসার জীবনে তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। আক্ষেপ করে বলেন, সবাইকে তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। কিন্তু দুই ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারেননি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সন্তানদের মধ্যে প্রথম ছেলে আমিনুল হক শাহীন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) ইঞ্জিনিয়ার ও তৃতীয় ছেলে এনামুল হক তুহিন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। এই দুই ছেলেই দীর্ঘদিন ধরে মা মাজেদা বেগমকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছেন। শাহিন ও তুহিন, দ্বিতীয় ছেলে ও মেয়েকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে বাবার সম্পত্তি ও ফসলি জমি ইচ্ছে মাফিক অবৈধপন্থায় নিজেদের নামে লিখে নিতে চাচ্ছেন। এ অসৎ কাজে সহায়তা না করায় নিজ সন্তানের হাতে নির্যাতনের শিকার আমি। কেঁদে কেঁদে এসব কথা বলেন মাজেদা বেগম।
মাজেদা বেগম আরো বলেন, সন্তানদের লাথির আঘাতে মেরুদণ্ডের হাড়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সময় তারা কিল ঘুষি ও গলা চেপে ধরে। এরই মধ্যে চিকিৎসক জানিয়েছেন, আমার গলায় বাসা বেঁধেছে ক্যান্সার। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই দ্বিতীয় ছেলে নাজমুল হক মনিরের সহযোগিতায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দুই ছেলের অত্যাচার থেকে বাঁচতে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িসহ অন্য বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।
মাজেদা বেগম বলেন, আমার স্বামী ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে কিছুটা অসুস্থ। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে আমার দুই ছেলে। নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আশা জানিয়ে তিনি ছেলেদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। লিখিত অভিযোগে মাজেদা বেগম আরো উল্লেখ করেন, বড় ছেলে শাহিন ঢাকায় থাকে। মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসে। বাড়িতে বেড়াতে এসে ২৮ আগস্ট রাতে তাঁকে সম্পত্তি লিখে দিতে বলে। সে সময় তিনি তা না করায় তাকে বেদম মারধর করে সে। এর পর কোরবানি ঈদের আগের দিন ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একই কারণে ছোট ছেলে তুহিন তাকে মারধর করে। অভিযুক্ত দুই ছেলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।