শেখ হাসিনা কেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাননি
শেখ হাসিনা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলে খুশি ও গর্বে উদ্ভাসিত হতো বাংলাদেশ, বাঙালি, দেশের মানুষ। প্রত্যেকে নিশ্চয় নয়। গায়ে জ্বলুনি ও ফোস্কা পড়তো কারও কারও। তারা চোখের জলে বুকও ভাসাতেন। হিংসায় আঁধার দেখতেন। নানা কু’কথা বলতেও ছাড়তেন না। মিথ্যে রটনায় বাতাস ভারী করতেন। শুনেছি, শেখ হাসিনা যেন পুরস্কার না পান, সে জন্য নরওয়ের বিএনপিকর্মীরা কম বিরুদ্ধাচরণ করেননি। তারা নোবেল কমিটির কাছে মিথ্যা, বানোয়াট রিপোর্টও দিয়েছেন। একজন নয়, নরওয়ের শতাধিক কর্মী। আওয়ামী লীগের চেয়ে বিদেশে বিএনপি’র শক্তিশালী গ্রুপ আছে, বিএনপি’র দেশীয় ‘বুদ্ধিজীবী’রা বুদ্ধিদাতা, ষড়যন্ত্রী। শেখ হাসিনাকে এখনই কেন শান্তি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে, তা ঠিক বোধগম্য নয়। হাফ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন বাধ্য হয়ে। অবশ্য, মানবিকতায়। এই মানবিকতাও চাপে পড়ে। বিরোধী দলের রাজনৈতিক চাপ ছাড়াও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। চাপ যতই হোক, মানবিকতার কারণেই পুরস্কারের যোগ্য তিনি। কিন্তু ভুললে চলবে না, ভারত-চীন-রাশিয়া-ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবতার নামে অর্থ, খাদ্য, ওষুধ, পোশাক সাহায্য দিলেও শেখ হাসিনার শান্তি নোবেল পুরস্কারের জন্য ওকালতি করেনি, করবেও না। স্বার্থ আছে। মিয়ানমারকে চটাবে না—বাণিজ্যিক-রাজনৈতিক কারণেই। বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারকে তাদের দরকার। ভঙ্গুর সার্কের চেয়ে ‘আসিয়ান’ শক্তিশালী। বিশ্বব্যাপী রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের কদর বেশি। মিয়ানমারকে ধমক দেবে, চোখ রাঙাবে—ব্যস, ওইটুকুই। মিয়ানমার রোহিঙ্গা ম্যাসাকার, বিতাড়নে যে বীভৎসচিত্র, তার বিরুদ্ধে ‘বিবেকী আমেরিকা’, ‘বিবেকী ইউরোপ’ ও ‘বিবেকী বিশ্ব’ কতটা সোচ্চার? এখন তো নিশ্চুপ প্রায়।
শেখ হাসিনাকে শান্তি নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সময় এখনও আসেনি হয়তো। অনুমান করি, নোবেল কমিটি তলিয়ে দেখতে চাইছে রোহিঙ্গা-উদ্বাস্তু সমস্যার চটজলদি না স্থায়ী সমাধান করেছেন শেখ হাসিনা। চটজলদি সমাধানে রাজনৈতিক চটক আছে কিনা। নির্বাচনি বৈতরণী পাড়ির উদ্দেশ্য কিনা। এসব প্রশ্ন শান্তি নোবেল পুরস্কার কমিটির বিচারকদের মগজে চক্কর দেয় কিনা, বলতে অপারগ। বারাক ওবামাকে শান্তি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো। বিশ্বে কী শান্তি এনেছেন তিনি তা অজানা। সাংবাদিকরা ওবামাকে প্রশ্ন করেন, ‘কেন শান্তি নোবেল পুরস্কার পেলেন?’ ওবামার উত্তর, ‘কেন, জানি না। পুরস্কারদাতা কমিটি বলতে পারে।’ আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী অশান্তির দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী—আইএস (ইসলামিক স্টেট) তৈরি ও ইন্ধনদাতা কে, কারা। ওবামা, হিলারি ক্লিনটন (ওবামার পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মৌন কেন? এড়িয়ে যান প্রশ্ন? আবোল-তাবোল বকেন?জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যারকেল শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য দুই বার ফাইনাল লিস্টে ছিলেন। ‘পাচ্ছেন,’ ‘পাবেনই’ জার্মান মিডিয়া নিশ্চিত। প্রচারণা তুঙ্গে। প্রথমবার কেন পাবেন? গ্রিসের অর্থনৈতিক সমস্যার সুরাহা করেছেন। দ্বিতীয়বার (২০১৫ সালে), দেড় মিলিয়ন শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন মানবিকতার স্বার্থে।
প্রথমবার দেখা যায়, গ্রিসকে উদ্ধারে (বেল আউট) তিনি একক নন, সবার আগে যদিও, সঙ্গে গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন। দ্বিতীয়বার, ধরেই নেওয়া হয়, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের শিকে ছিঁড়বে তার ভাগ্যে—লাখ-লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায়। এই আশ্রয় ও মানবিকতার পুরোটাই রাজনৈতিক, তা স্পষ্ট। বছর না ঘুরতেই শরণার্থীদের দুর্বিষহ জীবন। ছাঁটাই বাছাই। বিতাড়ন। জার্মান জনগণের চাপ, রাজনীতির চাপ। নোবেল কমিটি দেখেছে অ্যাঙ্গেলা ম্যারকেলের রাজনৈতিক লীলাখেলা। পুরস্কার দেয়নি। এ বছরও তার নাম প্রাপকের তালিকায় যুক্ত ছিল। মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বিরোধী দল, বিশেষত এএফডি (অলটারনেটিভ ফর জার্মানি) কম ঝামেলা পাকায়নি, ঝামেলা পাকিয়ে বুন্ডেসটাগে (সংসদ) ৯৩ আসন পেয়ে তৃতীয় দল, বিরোধী শক্তি। দেড় মিলিয়ন শরণার্থীকে ঠাঁই দেওয়ায় প্রচণ্ড সমালোচনা, বিরোধিতার পরও নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়েছেন, চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর, ক্ষমতাসীন। অ্যাঙ্গেলা ম্যারকেলকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার এবারও দেওয়া হলো না। এখানেও রাজনীতি। এই রাজনীতির স্রোতে শেখ হাসিনাও আবর্তিত। তিনি শান্তিতে নোবেল পেলে মুখ উজ্জ্বল হতো বাংলাদেশ, দেশের মানুষের। আমাদের আশা, ভবিষ্যতে তিনি পাবেন। এখনই হাল ছেড়ো না বন্ধু। লেখক: কবি ও সাংবাদিক